Date : 17th May, 2025 | Call 1800 452 567 | [email protected]
আস্থার প্রতীক হিসেবে তাঁর ফিরে আসাপ্রথমবার ৯০ মিটারের গণ্ডি পার! দোহা ডায়মন্ড লিগে ইতিহাস লিখলেন নীরজ চোপড়াসলমন রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত হাদি মাটারের ২৫ বছরের কারাদণ্ডখেয়েছেন হরিণের মাংস, রেখেছেন শিং! ৩ বছরের কারাদণ্ড আলিপুরদুয়ারের যুবকেরSSC: প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ করিয়ে দিন! শুভেন্দুকে আর্জি চাকরিহারাদেরফ্রি হ্যান্ড পেলেন না জেল ফেরত অনুব্রত! বালুর ভাগ্যে কি শিকে ছিঁড়বে?ঠা-ঠা রোদে কোয়েলের 'মেটগালা' সাজ! রসিকতা পরমের, তারপরেই হাসির রোলSSC: 'ধৈর্য রাখুন, শর্তহীনভাবে পাশে আছি', চাকরিহারাদের ধিক্কার মঞ্চ থেকে বার্তা শুভেন্দুরস্কিন কেয়ারেও প্রকৃতির ছোঁয়া! মেট স্টুডিওর উদ্যোগ 'উর্ভিজা'ইদেই মুক্তি পাচ্ছে ‘ধামাল ৪’, ফের হাসির ঝড় নিয়ে কামব্যাক অজয়ের
UEFA Euro 2024: Germany looks for Sommermarchen 2.0

যুদ্ধ, আর্থিক মন্দা, বিশ্বকাপে ভরাডুবি... সবকিছু সরিয়ে ইউরোয় রূপকথার খোঁজে জার্মানি

২০১৪ সালে ফিলিপ লামদের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি ওঠার পর থেকেই গোঁত্তা খেয়ে নিচের দিকে পড়েছে জার্মানরা। ইউরোপ জুড়ে চলেছে যুদ্ধ, আর্থিক মন্দা। এই অবস্থায় ইউরোয় জয় যেন দখিনা বাতাস বয়ে আনতে পারে সারা দেশের জন্য।

যুদ্ধ, আর্থিক মন্দা, বিশ্বকাপে ভরাডুবি... সবকিছু সরিয়ে ইউরোয় রূপকথার খোঁজে জার্মানি

ইউরো আয়োজন ঘিরে গণ উন্মাদনা তুঙ্গে জার্মানিতে। (ছবিঃ রয়টার্স)

শেষ আপডেট: 23 June 2024 15:17

সৌরদীপ চট্টোপাধ্যায় 

জার্মান ভাষায় রূপকথাকে বলে 'মার্চেন'। বস্তুত, শব্দের ব্যুৎপত্তি দেখলে, ইংরেজি 'ফেয়ারিটেল'-এর চাইতে জার্মান 'মার্চেন' শব্দটাতেই রূপকথাকে ভাল করে বোঝানো যায়। এবারের ইউরোর শুরু থেকেই জার্মান সংবাদমাধ্যমে বারবার ঘুরেফিরে আসছে একটা শব্দ। 'সমারমার্চেন'। অর্থাৎ, গ্রীষ্মকালীন রূপকথা। জার্মান ফুটবল-মহলে যে শব্দটাকে দিয়ে বোঝানো হয় ২০০৬ সালের ফুটবল বিশ্বকাপকে। পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানিকে মিলিয়ে, বার্লিন প্রাচীরের পতনের পর প্রথমবারের জন্য যার আসর বসেছিল ঐক্যবদ্ধ জার্মানিতে। 

একুশ শতকের প্রথম বিশ্বকাপ হয়েছিল জাপান ও কোরিয়াকে। তখনও ফুটবলে ব্রাজিলীয় রূপকথা চলছে। বিশ্বকাপ মানেই লাতিন ফুটবলের হলুদ-সবুজ শোভাযাত্রা। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপ থেকে জয়ের স্রোত ঘুরে আসতে থাকে ইউরোপে। জার্মানি অবশ্য জেতেনি। সেমিফাইনালে বুফোঁ-দেল পিয়েরো-মাতেরাজ্জিদের ইতালির কাছে হারতে হয়েছিল ক্লোজে-পোডলস্কিদের সেই স্বপ্নের জার্মান দলকে। কোচ ছিলেন বিশ্বকাপজয়ী জুরগেন ক্লিন্সমান। কিন্তু সারা দেশে স্রেফ ফুটবলের হাত ধরে তৈরি হয়েছিল উন্মাদনা। প্রকৃত অর্থে ফুটবল মিলিয়ে দিয়েছিল জার্মান স্বপ্নকে। আজও তাই সেই বিশ্বকাপকে রূপকথার সঙ্গে তুলনা করা হয় বার্লিন থেকে মিউনিখ সর্বত্র।

এবারের ইউরো কি ওরকম একটা রূপকথা হয়ে উঠতে পারবে?

গত আট বছর ধরে কোনও বড় ট্রফির ধারেকাছে পৌঁছয়নি জার্মানি। ২০১৪ সালে ফিলিপ লামদের হাতে বিশ্বকাপের ট্রফি ওঠার পর থেকেই গোঁত্তা খেয়ে নিচের দিকে পড়েছে ডাই মানশাফট দল। ২০১৮ ও ২০২২ দু'বারেই গ্রুপ থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে জার্মানদের। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরে পর পর দুইবার এরকম লজ্জার হারের নজির ইতিহাসে আর আছে কিনা, চট করে বলা মুশকিল। তার ওপর এতদিন ধরে চলেছে কোভিড অতিমারি। তার থাবা কাটতে না কাটতেই পূর্ব ইউরোপে যুদ্ধের দামামা। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে চড়চড়িয়ে বাড়তে শুরু করে জিনিসপত্রের দাম। অর্থনীতি ঝিমোতে শুরু করে। ভ্লাদিমির পুতিন হুমকি দিয়েছিলেন, ইউরোপ বেশি বাড়বাড়ি করলে তিনি ইউরোপকে গ্যাস পাঠাবেন না। ঠাণ্ডায় কাঁপিয়ে মারবেন। মস্কোর সে হুঁশিয়ারি নেহাত মুখের কথা ছিল না। আচমকা থেমে গিয়েছিল উত্তর সাগরের তলা দিয়ে পাতা নর্ড স্ট্রিম গ্যাসের পাইপলাইন। তার ওপর ঘরোয়া রাজনীতিতে তোলপাড় চলেছে। মাথা তুলেছে উগ্র দক্ষিণপন্থী নব্য নাৎসি দল 'এএফডি'। 

এই অবস্থায় নাজেহাল জার্মান জনতার কাছে ইউরো যাতে একমুঠো দখিনা বাতাস হয়ে উঠতে পারে, তার জন্য চেষ্টায় কোনও ত্রুটি রাখছেন না কোচ জুলিয়ান নাগেলসমান। 

গ্রুপ এ' থেকে ইতিমধ্যেই শেষ ষোলোয় চলে গিয়েছে জার্মানি। স্কটল্যান্ডকে ৫ গোল, হাঙ্গেরিকে ২ গোল মেরেছেন জামাল মুসিয়ালা, ইকের গুন্দোগানরা। আজ সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ড্র করলেই হবে জার্মানদের। এদিকে জটিল অঙ্ক সামনে এসে গিয়েছে। আজ জিতলেই গ্রুপ এ থেকে শীর্ষে চলে যাবেন টোনি ক্রুজরা। তাহলে কোয়ার্টার ফাইনালে গ্রুপ সি-এর শীর্ষ দলের সঙ্গে খেলতে হতে পারে তাঁদের। খুব অঘটন না ঘটলে, গ্রুপ সি থেকে দুর্দান্ত ছন্দে শীর্ষে শেষ করবে স্পেন। এরকম হলে কোয়ার্টার ফাইনালেই দুই দলের একজনকে বিদায় নিতে হবে। এদিকে আজ না জিতলেও শেষ ষোলোয় চলে যাবে জার্মানি, কিন্তু স্পেনের মুখোমুখি হওয়া এড়ানো যেতে পারে।

নাগেলসমান কিন্তু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এসব তিনি ভাবছেন না। সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, 'কী করে ছেলেদের বলি, আজ তোমরা হেরে যাও? আমরা জেতার জন্যই খেলি। আজও আমরা জয়ের জন্যই খেলব। সুইজারল্যান্ড আমাদের গ্রুপে সম্ভবত সেরা প্রতিপক্ষ হতে চলেছে। দারুণ ম্যাচ হবে আজ।' 

নাগেলসমানের মাথায় এসব বীজগণিত-পাটিগণিত ঘুরলেও আমজনতা কিন্তু এতে আমল দিচ্ছে না। এমনিতে ফুটবল ম্যাচ থাকলে কাছাকাছি রেস্তোরাঁ বা পাবে গিয়ে ভিড় করে দেখা মোটের ওপর বিলিতি বা আইরিশ সংস্কৃতি বলে পরিচিত। লন্ডন, এডিনবরা, ডাবলিনে বড় ম্যাচ থাকলেই রীতিমত আগে থেকে পাবে টেবিল বুকিং করতে হয়। সামান্য স্যান্ডউইচের দামই আকাশ ছুঁয়ে যায়। ভিড় ঠেকাতে রেস্তোরাঁগুলোয় প্রবেশমূল্য চালু হয়। এবারের ইউরোয় সেই ঢেউ এসে পৌঁছেছে রাইনের তীরে। মিউনিখ, স্টুটগার্ট, বার্লিন, লাইপজিগের মত বড় বড় শহরে তো বটেই, এমনকি একেবারে ছোটোখাটো মফস্বল শহরেও বিরাট বিরাট জায়ান্ট স্ক্রিন খাটানো হয়েছে। যেসব রেস্তোরাঁয় ক্রেডিট কার্ড অবধি চলে না, সেখানেও পেল্লায় এলইডি টিভি লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন দল এবার ছোট ছোট শহরে নিজেদের শিবির ফেলে রয়েছে। তাদের অনুশীলন দেখার জন্য রীতিমত গণ-উন্মাদনা তৈরি হয়েছে জার্মানিতে। আর এতেই ঘৃতাহুতি দিচ্ছে ঘরোয়া দলের পারফরম্যান্স। 

বিভিন্ন সমীক্ষায় ধরা পড়েছে, এক বিরাট অংশের জার্মানরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন, এবারেই তাঁদের ট্রফি খরা কাটতে চলেছে। ইউরো আসতে চলেছে জার্মানিতেই। দলকে প্রায় ঘষেমেজে সাজিয়েছেন ৩৬ বছরের তরুণ কোচ নাগেলসমান। অবসর ভেঙে ফিরিয়ে এনেছেন ক্রুজকে। হাঙ্গেরিকে ২-০ গোলে হারানোর পর নাগেলসমান বলেছিলেন, 'আমাদের ফ্যানরা স্বপ্ন দেখছেন। আমাদের কাজ তাঁদের সেই স্বপ্নটা দেখিয়ে যাওয়া।' আজ সুইজারল্যান্ডের হয়ে অতএব নামার আগে ফুরফুরে মেজাজে জার্মান দল। অঙ্ক এমনই যে, জয়ের চাইতে হারলে 'লাভ' বেশি। সুইসরা অবশ্য এসব ভাবছে না। সুইস কোচ মুরাত ইয়াকিন যেমন বলে দিয়েছেন, জার্মানদের যথেষ্ট ভোগানোর ক্ষমতা ধরেন তাঁরা। দলের একাধিক খেলোয়াড় বুন্দেশলিগায় খেলেন। মাঠের সঙ্গে পরিচিত। 'আগের দুই ম্যাচে ভাল ফল পেয়েছি। এবারেও ভাল খেলে দেখাতে চাই', বলছেন ইয়াকিন। 


ভিডিও স্টোরি