শেষ আপডেট: 10th January 2025 15:05
পাড়ায় পাড়ায় ম্যাটাডোরগুলো সেজে উঠছে সকাল থেকেই। কোনওটা লাল-হলুদে মুড়ে যাচ্ছে, আবার কোনওটা সবুজ-মেরুনে। আবার কিছু পাড়ায় কয়েকটা ম্যাটাডোর লাল-সবুজ, মেরুন-হলুদ, সব মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের মজাই আলাদা। এ এক এমন উৎসব, যার নেই কোনও ধর্ম, নেই কোনও জাত-পাত, নেই কোনও শ্রেণীর পার্থক্য। খবরে ডার্বির ডেট ঘোষণা মানে এক অদ্ভুত উন্মাদনা। টানা অনেকদিন মেঘলা আবহাওয়ার পর যখন আচমকা রোদের দেখা মেলে, ঠিক যেমন আনন্দ হয়, তেমনই আনন্দ হয় ডার্বির খবর পেলে। আবার একটা ডার্বি। ‘যতবার ডার্বি, ততবার হারবি’। দুই দলই অপরজনকে একই সুরে আওয়াজ দিচ্ছে। পাড়ায় কাদের পতাকা কত বড় হল সেটাও একটা চরম কম্পিটিশন।
সন্ধ্যেবেলা ডার্বি মানে সকাল থেকে উত্তেজনা। দুপুরের আড্ডায় প্রায় ৯০ মিনিটের ম্যাচ। এই ম্যাচে অবশ্য প্লেয়ার লাগে না। এগুলো মৌখিক ম্যাচ। বাক্য ব্যয় করে কে জিতলো। দুপুরবেলা সব বাঙালি পরিবারে খাওয়া দাওয়া হয়ে যায় খুবই তাড়াতাড়ি। কারণ বিকেল গড়ালেই আবহাওয়া পালটে যাবে। কেউ কেউ বেরিয়ে পড়বে জার্সি গায়ে, আবার কেউ কেউ ব্যস্ত হয়ে পড়বে পাড়ায় টিভি লাগিয়ে আসর জমাতে। এরকমটাই ছিল আমাদের ছেলেবেলার ডার্বি।
তাহলে কি এখন সেই উন্মাদনায় খানিক ভাটা পড়েছে? জানি না। জানতে চাইওনা। টিকিয়ে রাখতে চাই এই উন্মাদনা। এখন আর ম্যাটাডোরে করে যাওয়া হয় না মাঠে। নিজের গাড়িতে যাই। জানলার কাঁচ খুলে রাখি যাওয়ার সময়। পাশের ম্যাটাডোরে উঁকি মারি গাড়ি চালাতে চালাতেই, খোঁজার চেষ্টা করি নিজের ছেলেবেলা। দেখতে পাই নিজেকে আজও ওই ম্যাটাডোরে হৈ হৈ করতে করতে যাচ্ছি। আকাশ পাতাল এক করে দেওয়া চিৎকার করতাম উন্মাদের মত।
এখন বুঝি, এরকম উন্মাদনা তো উন্মাদের মতই হওয়া উচিৎ। আজ বড্ড রিজার্ভড হয়ে গেছি। তবে সেটা বাইরে থেকেই। আমার ভেতরটা আজও গাড়ি চালাতে চালাতেই নেচে ওঠে, সিটি বাজায়, পতাকা ওড়ায়। এগুলো আর বাইরের কেউ এখন দেখতে পায়না, আমি শুধু দেখতে পাই আমার ভেতরে। আজও ডার্বির আগের রাতে জার্সিটা বের করে গায়ে দিয়ে ঘরে ঘুরে বেড়াই। এমনিই।