আফগানিস্তানের মহিলা ক্রিকেটারেরা
শেষ আপডেট: 23rd January 2025 17:56
দ্য ওয়াল ব্যুরো: পাশে দাঁড়ান। আওয়াজ তুলুন। তবেই ফিরতে পারব ময়দানে। ক্রিকেটের ময়দানে… জীবনেরও! দেশের পুরুষ ক্রিকেটারদের উদ্দেশে এমনই বার্তা পৌঁছে দিলেন আফগানিস্তানের মহিলা ক্রিকেটার ফিরোজা আমিরি। যিনি এই মুহূর্তে তালবানি সন্ত্রাসের ভয়ে দেশছাড়া। আশ্রয় নিয়েছেন আস্ট্রেলিয়ায়।
অথচ পরিস্থিতি বরাবর এমনটা ছিল না। কোভিডকালেও না। ২০২০ সালে বাকি দুনিয়ার মতো আফগানিস্তানও অতিমারির কবলে পড়েছিল। আর্থিক মন্দা, লকডাউনের বাধা—সবকিছু উপেক্ষা করে দেশের ২৫ জন মহিলাকে চুক্তিবদ্ধ করেন আফগান ক্রিকেট বোর্ড।
কিন্তু এই ছবি দ্রুত বদলে যায় ঠিক পরের বছর। যখন অগস্ট মাসে আফগানিস্তান পুনর্দখল করে তালিবান শক্তি। আর ক্ষমতায় এসেই আর সবকিছুর মতো মেয়েদের স্বাধীনতা কেড়ে নেয় তারা। অবরোধের ঘেরাটোপে পড়েন ফিরোজা আমিরি, বেনাফশা হাফিজিরা। তাঁদের অনেকেই পালিয়ে যান অস্ট্রেলিয়া। এখনও কেউ ক্যানবেরা, কেউ সিডনিতে রয়েছেন শরণার্থী হিসেবে। দেশে রয়ে যান যাঁরা, তাঁদের সকলে পুড়িয়ে দেন ব্যাট,বল,উইকেট সহ খেলার সমস্ত সরঞ্জাম।
স্বদেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়েও আফগান মেয়েরা কিন্তু ক্রিকেটকে ভুলে থাকেননি। নিছক বেঁচে থাকার তাগিদে বেছে নেননি অন্য কোনও পেশা। বদলে ক্লাব ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। নিয়মিত মাঠে যান তাঁরা। চুটিয়ে প্র্যাকটিস করেন। তাঁদের এই জেদ ও সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ড। ইতিমধ্যে চলতি মাসের শেষে একটি ম্যাচেরও আয়োজন করা হয়েছে। খেলা হবে মেলবোর্ন স্টেডিয়ামে। এই ম্যাচের শীর্ষক নামটিও কিন্তু ভীষণ প্রাসঙ্গিক ও প্রতীকী: ‘আফগানিস্তান মহিলা একাদশ বনাম সীমান্তমুক্ত ক্রিকেট একাদশ’।
কিন্তু বিদেশ-বিভূঁইয়ে সমাদরই কি যথেষ্ট? এমনটা মনে করছেন না ফিরোজা আমিরি। তিনি ফিরতে চান দেশে, ফিরতে চান ঘরে। তিনি চান বদলে যাক দেশের আমূল অবস্থা। বদলে যাক মানুষের মন। যেন অনুমতি মেলে ময়দানে নামার। দেশের অগণন মানুষদের সামনে খেলার। বিশ্বের বড় মঞ্চে দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার। আর এই কারণে ,মহম্মদ নবী, রশিদ খানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ করেছেন তিনি। সে অনুরোধ মিহি সুরের কাতরোক্তি নয়। বরং, দার্ঢ্য মেজাজে বলা আত্মবিশ্বাসী আবেদন।
সম্প্রতি অস্ট্রেলিয়ার একটি পডকাস্টে অতিথির চেয়ারে বসে ফিরোজা বলেন, ‘আফগান পুরুষ দলের ক্রিকেটাররা বিশ্বের সামনে যথেষ্ট ভালো ভাবমূর্তি তৈরি করতে পেরেছেন। এই অবস্থায় যদি তাঁরা আমাদের সমর্থন করেন, তাহলে সেটা জোরালো প্রভাব ফেলবেই ফেলবে। তাঁদের অনুরোধের জেরে যদি আগামি দিনে আমরা ক্রিকেট খেলতে পারি, তাহলে একদিন লেখাপড়া করতে পারব, স্কুলে যেতে পারব। একটা পথ ধীরে ধীরে অনেকগুলো আগল খুলে দেবে। যদি তাঁরা আমার গলা শুনতে পান, তাহলে এই জায়গা থেকে আমি চেঁচিয়ে বলতে চাই—দয়া করে আফগান মহিলা ক্রিকেটারদের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠুন। প্লিজ, আমাদের জন্য আরও কিছু করুন। আপনারাই আফগানিস্তানের সবচেয়ে পরিচিত মানুষ। লক্ষাধিক মেয়ের ভরসাও হয়ে উঠতে পারেন আপনারাই।‘
এই পরিস্থিতিতে, অসুবিধে যে অনেক, মেনে নিচ্ছেন ফিরোজাও। তিনি বলেন, রশিদ খানদের পরিবার নিয়ে দেশে থাকতে হয়। ক্ষমতাসীন সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুললে নেমে আসতে পারে শাস্তির খাঁড়া। তাঁরা বিপদে পড়ুন, এমনটা চান না ফিরোজা। মহিলাদের ক্রিকেট খেলা রদ করার প্রতিবাদে ইতিমধ্যে আফগানিস্তানের সঙ্গে দুই-দেশীয় সিরিজ খেলতে অস্বীকার করেছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। বেনাফশা, ফিরোজারা চান এই পরিস্থিতির দ্রুত বদল ঘটুক। আবার যেন ক্রিকেটের মূলস্রোতে ফিরে আসতে পারেন তাঁরা। ফিরে আসতে পারেন জীবনের চেনা ছন্দে।