শেষ আপডেট: 27th February 2025 17:59
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তেইশের বিশ্বকাপ ফাইনালে (World Cup Final) ওঠা। চব্বিশের টি-২০ বিশ্বকাপ (T-20 World Cup) জয়। আর চলতি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে (Champions Trophy) আপাতত দুই ম্যাচের দুটিই নিছক জয় নয়, বাংলাদেশ (Bangladesh) আর পাকিস্তান (Pakistan)—দুই এশীয় টিমকে দাপটের সঙ্গে উড়িয়ে দেওয়া। সাদা বলের আইসিসি টুর্নামেন্টে সাম্প্রতিক সময়ে টিম ইন্ডিয়া (India) সত্যিই অপ্রতিরোধ্য শক্তি।
কিন্তু চাঁদেরও কলঙ্ক থাকে। ভারতের ওয়ান ডে টিমও তেমনই নিষ্কলুস নয়। তারও গায়ে লেগেছে বিতর্কের আঁচ। একদম হাতেগরম উদাহরণ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ভেন্যু সংক্রান্ত বিতর্ক। বাকি সমস্ত দলকে যেখানে পাকিস্তানের তিনটি স্টেডিয়ামে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে খেলতে হচ্ছে, সেখানে ভারত শুধুমাত্র দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে নামছে, নামবে। একটি মাঠ, তা যতই নিরপেক্ষ ময়দান হোক, সেখানেই সমস্ত ম্যাচ খেলতে নামছেন রোহিতরা। আর এই ‘অনৈতিক সুবিধা’ নিয়ে সরব হয়েছেন বিপক্ষ দলের অনেক খেলোয়াড়—প্রাক্তন, বর্তমান মিলিয়ে।
কিন্তু এই দাবি কতটা সঙ্গত? কতটা যুক্তিযুক্ত? সত্যি কি ভারত গোপন আঁতাতে দুবাইয়ের মাঠ হাসিল করেছে? পাচ্ছে অন্যায্য অ্যাডভান্টেজ? নাকি পুরোটাই মিডিয়ার হাওয়ায় ভাসানো খবর? পরিকল্পিতভাবে ভারতকে একঘরে করে তাদের প্রাপ্য দাবি কেড়ে নেওয়ার মতলব?
চলতি বিতর্কের ধুয়ো উঠেছিল ইংল্যান্ড মহল থেকে। এই অনৈতিকতা নিয়ে প্রথম সরব হয় ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকা। সেখানে প্রাকাশিত একটি প্রতিবেদন এই দাবি সরবে তোলে। কিন্তু তারপর সব থিতিয়ে যায়। টুর্নামেন্টের সূচি প্রকাশিত হলেও কেউ রা কাড়েনি। কেউ অভিযোগ তোলেনি: কেন শুধুমাত্র ভারতই খেলবে দুবাইয়ে?
এই প্রশ্ন ফের উস্কে ওঠে ইংল্যান্ডের হতশ্রী পারফরম্যান্সের পর। সাড়ে তিনশোর উপর রান খাড়া করেও বাটলার-বাহিনী অস্ট্রেলিয়ার হাতে কিস্তিমাত খেলে মাইকেল আথারটন সরব হন। তারপর আফগানিস্তানের হাতে ল্যাজেগোবরে হওয়ার পর সেই সুরে সুর মেলান প্রাক্তন ইংল্যান্ড অধিনায়ক নাসের হুসেন।
তাঁদের অভিযোগ ছিল পাঁচ দফা। যার ভিত্তি ছিল এরকম:
এক, বাকি টিমকে হয় করাচি নয়তো রাওয়ালপিন্ডি কিংবা লাহোরের তিন স্টেডিয়ামে ঘুরেফিরে খেলতে যেতে হচ্ছে। সেখানে ভারত নামছে স্রেফ দুবাই ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে। এর ফলে যাতায়াতের সময় বাঁচছে রোহিতদের। আরও বেশিক্ষণ ট্রেনিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখছে টিম ইন্ডিয়া। কম ক্লান্তি, বাড়তি সময়। এটা কি বাড়তি সুবিধা নয়?
দুই, ভারত দুবাইতেই ট্রেনিং করছে, সেখানেই খেলছে। ফলে পরিস্থিতির সঙ্গে ধাতস্থ হয়ে উঠেছে খুব সহজে। বাকি টিমগুলিকে বারবার পরিবর্তিত ভেন্যুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে হচ্ছে। এটাও টিম ইন্ডিয়ার পালেই হাওয়া দিয়েছে।
তিন, বিরাটরা এখন থেকেই জানেন, তাঁরা সেমিফাইনাল ও ফাইনালে উঠলে কোথায় খেলবেন। ফলে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা টুর্নামেন্ট শুরু থেকেই ছকে ফেলা সম্ভব হয়েছে। ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এমনকি পাকিস্তানও সেই সুযোগ পায়নি।
চার, দুবাইয়ের একটি মাঠে খেলা মানেই পিচ নরম হয়ে আসবে। তাতে বাড়তি সুবিধা পাবেন কুলদীপ, অক্ষরের মতো স্পিনাররা। বাকি মাঠের পিচ কখনও পেসার-বান্ধব, কখনও স্পিনারদের সাহায্য করেছে। ফলে বাকি দল খেলোয়াড় বাছাই নিয়ে ধন্দে থাকলেও ভারত বুঝে ফেলেছে, কেমন কম্বিনেশনে ঘুঁটি সাজালে ম্যাচ জেতা যাবে। এরই সূত্রে নাসির হুসেন আওয়াজ তুলেছেন, ‘এতদিনে বুঝতে পারছি, কেন টিম ইন্ডিয়া পাঁচজন স্পিনার নিয়ে খেলতে এসেছে!’
পাঁচ, করাচি, রাওয়ালপিন্ডি এবং লাহোরের জলবায়ুও আলাদা। সেই অনুযায়ী বাকি দলকে প্রথম একাদশ বেছে নিতে হচ্ছে। ভারতকে এমন ঝামেলার মুখে পড়তে হচ্ছে না। তারা একই ভেন্যুর সঙ্গে মানিয়ে-গুছিয়ে নেওয়া খেলয়াড়দেরই সুযোগ দিয়ে চলেছে।
পাঁচ দফা অভিযোগ। শুনতে অকাট্য মনে হলেও এর ভেতরেই রয়েছে অনেক ছিদ্র। মাত্র তিনটি যুক্তি দিয়েই এই অভিযোগগুলি নস্যাৎ করে ফেলা যায়।
প্রথমত, ২০২৩ বিশ্বকাপে যখন বাকি সমস্ত টিমকে ৮টি ভেন্যুতে খেলতে হয়েছিল, তখন ভারত ঘুরে ঘুরে খেলেছিল ৯টি স্টেডিয়ামে। আর কোনও দল এত বেশি মাঠে খেলেনি। তখন কেন এই ইস্যুতে সরব হয়নি কেউ?
দ্বিতীয়ত, গোড়ায় আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির শিডিউলের যে খসড়া তালিকা প্রকাশিত হয় (পরে যা বাতিল করা হয়েছিল) সেখানে ভারতের সমস্ত ম্যাচ রাখা হয়েছিল লাহোরে। কই, তখন তো কোনও টিম ‘এক স্টেডিয়ামে খেলার অনৈতিক তত্ত্ব’ নিয়ে টুঁ শব্দটি করেনি!
তৃতীয়ত, ভারত-পাক দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক উত্তাপ মেটানোর কোনও উদ্যোগ আয়োজক দেশ হিসেবে পাকিস্তান নেয়নি। যৌক্তিকভাবে একাধিক প্রদেশে গিয়ে খেলা টিম ইন্ডিয়ার পক্ষে সম্ভব ছিল না। অথচ এর বিকল্প কোনও উপায়ও তারা রাখতে পারেনি। এর খেসারত ভারত কেন দেবে?
তা ছাড়া আইসিসি-র আলোচনার টেবিলে তো সমস্ত টিমের জনপ্রতিনিধি উপস্থিত থেকেছেন, থাকেন। তাঁরা চলতি বিতর্ক নিয়ে সেই সময় বাক্যব্যয়, যুক্তি খরচ করেননি কেন? সবাই এককাট্টা হয়ে ভারতকে বাদ দিয়ে টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা করলেও সেটা কি আদৌ বাস্তবায়িত হতে পারত? ইংরেজ শিবিরের কাঁদুনিকে তুলোধনা করে সুনীল গাভাসকারের বলা এই দুই অকাট্য যুক্তি অস্মিতায় ভরা—বলতে পারেন কেউ কেউ, কিন্তু এর সারবত্তা অস্বীকার করাটা সত্যি দুরূহ।