Date : 14th May, 2025 | Call 1800 452 567 | [email protected]
সেনার তথ্য পাচার! পাক হাইকমিশনে কর্মরত এক কর্মীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত ছাড়ার নির্দেশ কেন্দ্রেরবাসের ধাক্কায় ভাঙে শরীরের একাধিক হাড়, মহিলাকে বাঁচাতে অসাধ্য সাধন করল কলকাতার হাসপাতালপহেলগাম হামলা, অপারেশন সিঁদুর নিয়ে এখনও চুপ শাহরুখ! পাকিস্তান প্রেম? সামনে এল আসল তথ্য'নির্বাচন অভ্যন্তরীণ বিষয়', ভারতকে বার্তা বাংলাদেশের, হাসিনার দলের ‘অপকর্ম’ তুলে ধরে বিবৃতি ঢাকারসৌদি আরব থেকে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের ঐতিহাসিক বিনিয়োগ নিয়ে দেশে ফিরছেন ট্রাম্প মুর্শিদাবাদে কালবৈশাখীর তাণ্ডব! বজ্রাঘাতে দু'জনের মৃত্যু, আহত আরও একহজের জন্য ইন্সপেক্টর নিয়োগেও দুর্নীতি! বড় অভিযোগ নওসাদেরআওয়ামী লিগের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণায় উদ্বিগ্ন ভারত ফের জানাল, হাসিনার দলকে বাদ দিয়ে ভোট নয়'পাশে আছি', ভারতীয় সেনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে কলকাতা থেকে পাঠানো হচ্ছে হাজার চিঠিত্রিদেশীয় সিরিজে দুরন্ত পারফরম্যান্সের দাম পেলেন মান্ধানা, উঠে এলেন প্রথম দুইয়ে
PR Culture in Indian Cricket

‘পিআর টিম’ থেকে ‘ব্র্যান্ডিং’: কীভাবে ভারতীয় ক্রিকেটকে অধঃপাতে ঠেলছে নায়কবন্দনার সংস্কৃতি

Advertisement

সৌরভ, শচিনদের জমানা, কিংবা আরেকটু পিছিয়ে কপিল, গাভাসকারের আমলে গেলে এই শব্দের অস্তিত্বই ছিল না। তখন ক্রিকেট ছিল স্রেফ ময়দানের লড়াই, ব্যাটার-বোলার-ফিল্ডারের উত্তপ্ত সংঘর্ষ।

‘পিআর টিম’ থেকে ‘ব্র্যান্ডিং’: কীভাবে ভারতীয় ক্রিকেটকে অধঃপাতে ঠেলছে নায়কবন্দনার সংস্কৃতি

গ্রাফিক্স: শুভ্র শর্ভিন

Advertisement

শেষ আপডেট: 18 February 2025 23:46

রূপক মিশ্র 

খেলাটা বদলে গেছে।

কথাটা আর চায়ের দোকানে ভাঁড় হাতে বসে থাকা বিগতযৌবন সরকারি কেরানিবাবুর আক্ষেপ নয়। এই দীর্ঘশ্বাস হু হু করে বইতে শুরু করেছে ক্রিকেটের ‘সভ্য’ সমর্থকদের মনে। আর সেই বাতাসে ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে বেশ কিছু শব্দ ও শব্দবন্ধ। যেমন: ‘ইনস্টাগ্রাম প্রজন্ম’, ‘সেলেব্রিটি কালচার’ কিংবা ‘ব্র্যান্ডিং’। এই তালিকারই নবতম সংযোজন ‘পিআর টিম’। ভেঙে বললে: পাবলিক রিলেশন টিম। বাংলায়: জনসংযোগ রক্ষাকারী দল।

সৌরভ, শচিনদের জমানা, কিংবা আরেকটু পিছিয়ে কপিল, গাভাসকারের আমলে গেলে এই শব্দের অস্তিত্বই ছিল না। তখন ক্রিকেট ছিল স্রেফ ময়দানের লড়াই, ব্যাটার-বোলার-ফিল্ডারের উত্তপ্ত সংঘর্ষ। দল আগে, সবার আগে। খেলোয়াড়, তিনি যত বড় ক্রিকেটারই হোন না কেন, থাকবেন টিমের প্রচ্ছায়ায়। ব্যক্তিপূজনের রমরমা তো দূর অস্ত, তার ছিটেফোঁটাটুকুও তখন নজরে আসেনি। নায়কের ইমেজ নিয়ে সমর্থকদের মাথাব্যথা তখনও ছিল। শচিন সেঞ্চুরি পেলেন কি পেলেন না, কুম্বলে রান খেলেন কি খেলেন না—এটা নিয়ে সমর্থকেরা চিন্তিত হতেন বটে। কিন্তু দল ছিল সমর্থকদের আশা-নিরাশার ভরকেন্দ্র। আর তাকে ঘিরেই ঘুরপাক খেত সমূহ আবেগ, আবেদন।

আমাদের মনে পড়বে বিশের দশকের কথা। যখন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির নেতৃত্বাধীন দল হিসেবে টিম ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ডিং চলত। বিজ্ঞাপনী বিরতিতে টিভির পর্দায় ফুটে উঠত ‘মেন ইন ব্লু’য়ের স্লোগান। অর্থাৎ, যেটা বলতে চাইছি, ক্রিকেটে বিশেষ একটি ইস্যুকে স্পটলাইটে এনে ফোকাস করার প্রবণতা সেই সময়ও ছিল। কিন্তু তখন প্যাকেজিং হত ‘দল’কে ঘিরে, কোনও ‘ব্যক্তি’কে কিংবা বিশেষ কোনও ‘নায়ক’কে কেন্দ্র করে নয়।

পিআর বাহিনীর উৎপাত শুরু হওয়ার পর এই এপিসেন্টার বদল গেছে। পুরোপুরি উলটে গেছে বিশেষভাবে নজরে রাখার ইস্যুগুলি। এখন ক্রিকেটার, যিনি নায়ক কিংবা নায়কেরও ঊর্ধ্বে দেবতুল্য, তাঁর মহিমা কীর্তনে ব্যস্ত সকলে। ‘সকলে’ বলতে কারা? সাধারণ দর্শক, অনুরাগী মহল? মোটেও না। এই কাজে সরাসরি লিপ্ত বিজ্ঞাপনী সংস্থা থেকে ধারাভাষ্যকার, সোশ্যাল মিডিয়া ফ্যান পেজ থেকে শুরু করে খেলা সম্প্রচাকারী চ্যানেল—সক্কলে!

কী করে তারা? সাদা বাংলায় বললে: পুলটিশ মারে। মানে, ইতিমধ্যে দর্শকদের চোখে ‘নায়ক’ বনে যাওয়া খেলোয়াড়, যিনি কেরিয়ারের অস্তাচলে এসে দাঁড়িয়েছেন, রিফ্লেক্স কাজ করছে না, টাইমিং হাতের গ্রিপ ছেড়ে সেই কবে পালিয়েছে, ফর্ম ক্রমশ নেমেই চলেছে নেমেই চলেছে—তাঁর ধারাবাহিক খারাপ পারফরম্যান্সে ‘পিআর কুল’ লাগাতার তাপ্পি মেরে যায়। ধরা যাক, রোহিত শর্মা দশ রানে আউট হলেন। এর আগে হয়তো তিনি বার আষ্টেক দুই অঙ্কের রানও ছুঁতে পারেননি। এবারের দশ রান দেখে তো তক্ষুনি রাগে ফেটে পড়বেন সাধারণ সমর্থকেরা!

ঠিক সেই সময়ই পরিত্রাতা হয়ে ওঠে পিআর টিম। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেয় গুচ্ছের রিল। যেখানে ওই দশ রানের অতিসংক্ষিপ্ত, ব্যর্থ ইনিংসে রোহিতের হাঁকানো দুটি চারকে ফোকাসে তুলে আনা হয়। ছোট ছোট ক্লিপিং; তাতে জুড়ে যায় লতা, রফি কিংবা অরিজিৎ সিংয়ের আবেগস্নাত গান। ব্যাস! আমার-আপনার ক্রোধ গলে জল। রাগ তো দূরের কথা, মনে জন্ম নেয় করুণা। আর এরই জেরে সমর্থকদের চাপ সইতে হয় না তাঁদের। দল থেকে বিতারণের বিতর্কও থাকে মাঠের বাইরে। উলটে মাইলেজ পেয়ে যান দেবত্ব উন্নীত ক্রিকেটারেরা। শুধু টিকে থাকেন না, বহাল তবিয়তে বিরাজ করেন ড্রেসিং রুমে।

কবে থেকে এই মোড়বদলের শুরু? বিশেষজ্ঞদের মতে, আইপিএলের সম্প্রচার স্বত্ব যবে থেকে ‘সোনি’ থেকে ‘স্টারে’র হাতে চলে গেল, তবে থেকেই ভারতীয় ক্রিকেটের দর্শনগত ফারাক প্রকট হয়ে উঠেছে। একটা ছোট্ট উদাহরণে বিষয়টি বুঝতে পারবেন, যদি আইপিএলে ওভারের মধ্যে বিজ্ঞাপন বিরতি লক্ষ করেন। কয়েক সেকেন্ড বা কয়েক মিনিট মাত্র সময়। অথচ তার মধ্যে ক্রমাগত আসতে থাকে বিরাট কোহলির বিভিন্ন ভঙ্গিমায় খেলা শট, সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে হেলমেট খোলার জয়োদ্ধত ক্লিপিং! আর এভাবেই আপনার অবচেতনে সেঁধিয়ে যায় বিরাটের নায়কোচিত প্রতিমা। মাঠের পারফরম্যান্সের বদলে আপনার নিউরোনে ঝড় তোলে কোহলির প্রায় ঈশ্বরিক মহিমা—যার সঙ্গে ক্রিকেটীয় কোনও সংযোগ নেই। সবই ইমেজের খেলা!

আর এই অবসসেশনই ছড়িয়ে পড়ছে সাম্প্রতিক প্রজন্মের মনে। ঈষৎ ঠাট্টার সুরে যাদের ‘ইনস্টাগ্রাম জেনারেশন’ বলে দেগে দেয় অনেকে। তারা এই অ্যাডভার্টাইজমেন্টকেই ভেবে নেয় ‘খেলা’; ময়াদানের ‘খেলা’ থাকে সহস্র যোজন দূরে। এরই সূত্রে দলকে পিছনে ঠেলে সামনে এগিয়ে আসে নায়ক বন্দনা। তারা আর দলকে নয়, ব্যক্তি ক্রিকেটারদের আরাধনা করে। ছোট্ট প্রমাণ: আইপিএল টুর্নামেন্টে গুজরাত টাইটানস কিংবা লখনউ সুপার জায়ান্টসদের মতো নতুন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলির তেমন সমর্থক না জোটা। এখনও যে সিএসকে, কেকেআর বাজার কাঁপায়, তার একমাত্র কারণ এদের দীর্ঘদিন আইপিএল খেলা কিংবা অনুরাগীদের অটুট বিশ্বস্ততা নয়। এর অন্যতম কারণ: মহেন্দ্র সিং ধোনি, রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলির মতো ক্রিকেটারদের হিমালয়সদৃশ ইমেজের মোহ! যা কাটিয়ে নতুন ‘দলে’ কিছুতেই মন বসাতে পারে না কোনও সমর্থক।

তাহলে এর সমাধান কী? রাহানের মতো বঞ্চিত ক্রিকেটার কিংবা অশ্বিনের মতো সদ্য প্রাক্তন খেলোয়াড়দের ‘নায়কপূজার’র সংস্কৃতির বিরুদ্ধে নাগাড়ে মুখ খোলা? নাকি তারকা ক্রিকেটারদের অবসরগ্রহণ? পিআর টিমের ছড়ানো আফিমের নেশায় দেশের তামাম ক্রিকেট অনুরাগীরা যেভাবে বুঁদ হয়ে রয়েছেন, তা থেকে পরিত্রাণের উপায় হয়তো সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া মেলাটা মুশকিল। সম্প্রতি বিসিসিআইয়ের তরফে যে দশ দফা ফরমান জারি হয়েছে তার একটি ধারায় বলা হয়েছে, খেলোয়াড়েরা কোনও টুর্নামেন্টে নিজেদের ব্যক্তিগত সহায়ক, শেফ, ট্রেনার, ম্যানেজার কাউকে নিয়ে যেতে পারবেন না। কথার কথা নয়, এই নীতি ইতিমধ্যে লাগুও হয়ে গেছে। প্রশাসনিক তরফে বোর্ডের শীর্ষ মহল থেকে যেভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, তা দেখে আশা করাই যায়, সুদিন সমাগতপ্রায়!

Advertisement

Advertisement


ভিডিও স্টোরি