
ম্যাভিস আলভারেজ নামের ৩৭ বছরের কিউবান যুবতীর অভিযোগ, ২১ বছর আগে হাভানায় তাঁকে ধর্ষণ করেন মারাদোনা। ১৬ বছর বয়সে ধর্ষিতা হওয়ায় তাঁর ছোটবেলা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। একই সঙ্গে জুড়ে দিয়েছেন কাস্ত্রোর নাম। তবে পরোক্ষে।
কী বলেছেন এই কিউবান তরুণী?
তাঁর বক্তব্য, “তখন বিষয়টা নিয়ে জলঘোলা করা যায়নি তার কারণ ফিদেল কাস্ত্রো। তৎকালীন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে মারাদোনার সম্পর্ক আমার পরিবার জানত। ফলে আমার উপর হওয়া অত্যাচার নিয়ে আমার পরিবার কিচ্ছুটি বলেনি।” ম্যাভিস বলেছেন, “আমার বয়স তখন ১৬। আর মারাদোনা তখন চল্লিশ। এই বয়সের পার্থক্য আমার পরিবার ভাল ভাবে নেয়নি। কিন্তু তাঁরা মুখ খোলেনি কারণ কিউবা সরকার বিষয়টায় যুক্ত ছিল। সেই সাহস আমার পরিবারের ছিল না। আমি ভিতর ভিতর ডুকরে গেছি। কিচ্ছু করতে পারিনি। আমার কৈশোর কাল চুরমার হয়ে গিয়েছিল।”
গত সপ্তাহে আর্জেন্টিনার ন্যায়বিচার মন্ত্রকের সামনে জবানবন্দি দেন এই কিউবান তরুণী। তার আগে বুয়েনস আইরেসে সাংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি জানান, মাদকের নেশা ছাড়ানোর জন্য হাভানাতে একটি ক্লিনিকে থাকতেন দিয়েগো। সেখানেই আলভারেজকে ধর্ষণ করেন তিনি।
দিয়েগো আরমান্দো মারাদোনা তখন মাদকাসক্ত। ফুলে গিয়েছে চেহারা। দেখলে কেউ বলবেনি না, তাঁর কোমরের মোচরে দুলে গিয়েছিল ১৯৮৬-র মেক্সিকো বিশ্বকাপ। ওদিকে তিনি ড্রিবল করছেন আর এদিকে কলকাতায় বসে অন্নদাশংকর রায় লিখছেন, ‘মেক্সিকোতে যাচ্ছে শোনা, মারাদোনা মারাদোনা!’ সেই মাদকাসক্ত মারাদোনা কোথায় চিকৎসা করাবেন? ফুটবলের রাজপুত্রকে ফিফা প্রস্তাব দিয়েছিল মার্কিন মুলুকে যাওয়ার। সটান না বলে দিয়েছিলেন তিনি। ফিফাকে ‘সাম্রাজ্যবাদের দালাল’ হিসেবেই দেখতেন দিয়েগো। তাই আমেরিকার বদলে তাঁর অভিমুখ হয়েছিল হাভানা। বিপ্লব করা কিউবার রাষ্ট্রপতি কামাদান্তে ফিদেল কাস্ত্রো তখন বুক পেতে দিয়েছেন মারাদোনার জন্য।
তারপর আমৃত্যু মারাদোনা-কাস্ত্রো সম্পর্ক ছিল গলায় গলায়। দু’জন দু’জনকে ডাকতেন কমরেড বলে। আর্জেন্টিনায় জন্মানো কিউবা বিপ্লবের আরএক কারিগর চে গুয়েভারা সম্পর্কে যা জানার কাস্ত্রোর থেকেই জেনেছিলেন মারাদোনা। তারপর তাঁর ডান হাতের বাহুতে স্থান পেয়েছিল চে-র উল্কি। নীল সমুদ্রে জাহাজের ডেকে শুয়ে ঠোঁটে সিগার নেওয়া মারাদোনার ছবি যাতে প্রথম দেখা গিয়েছিল চে-র উল্কি তা আজও অনেকের মনে সাগরদোলার ছন্দ বুনে দেয়।
এমনিতে মারাদোনার সঙ্গে অসংখ্য নারী সংশ্রব কোনও গোপন কাহিনী নয়। গোটা দুনিয়া তা জানে। মৃত্যুর সময়ে মারাদোনার যিনি বান্ধবী ছিলেন তাঁর বয়স নিজের ছোট মেয়ের থেকেও কম ছিল। আর ফিদেল সম্পর্কেও অনেক কথা শোনা যায়। একটি ইউরোপীয় সংবাদমাধ্যম হইহই ফেলে দিয়েছিল বছর দশেক আগে। সেই ফ্যাশন ম্যাগাজিন দাবি করেছিল, সারা জীবনে ৩৫ হাজারের বেশি মহিলার সঙ্গে বিছানা ভাগ করেছিলেন কাস্ত্রো। এবং সেই ম্যাগাজিন এও বলেছিল, এ ব্যাপারে সিংহভাগ নারী কাস্ত্রোর সঙ্গে বিছানা ভাগ করতেন দুটি কারণে, এক তাঁর রূপ এবং তাঁর সম্মোহিনী ক্ষমতা।
কিন্তু এবার ধর্ষণের মতো অভিযোগে মারাদোনা-কাস্ত্রোর নাম এক বন্ধনীতে পড়ল। যে অভিযোগ তুললেন স্বয়ং কাস্ত্রোর দেশেরই এক যুবতী। তবে কেন তিনি একুশ বছর অপেক্ষা করলেন, কেন তিনি দু’জনের মৃত্যুর পর এসব বললেন তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে দুই দশক আগের ঘটনায় কিউবা সরকারেরও নাম জুড়ে গেছে। ভারতীয় সময় মঙ্গলবার সন্ধে পর্যন্ত এ ব্যাপারে হাভানার কোনও বিবৃতি প্রকাশিত হয়নি। এটাই যা কাকতালীয়!