শেষ আপডেট: 15th January 2025 18:46
তিনি দৃষ্টান্ত গড়ে দিয়েছেন।
নিজের জীবনের বিনিময়ে, প্রতিভার অপচয় করে সকলের চোখের সামনে মেলে ধরেছেন একটা সাদা পাতা। যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা আছে: প্রতিভা থাকাটা কোনও কাজের কথা নয়। দরকার মেহনত। দরকার সংযম। নয়তো স্রেফ ফুরিয়ে যাবে। পুড়ে ছাই হয়ে যাবে তোমার কদর, তোমার গরিমা।
এই দেয়াললিখন সময় থাকতে দেখতে পাননি, নাকি দেখতে চাননি বিনোদ কাম্বলি? ১৯৯২ সালে টেস্টে অভিষেকের পর প্রথম আটটি টেস্ট ইনিংসে দুটো দ্বিশতরান এবং দুটো সেঞ্চুরি! ২৪ বছর পেরোতে না পেরোতেই দেশের হয়ে খেলে ফেলবেন ১৭টি টেস্ট।
অথচ এই মানুষটাই কিনা দেশের হয়ে শেষ টেস্ট খেলতে নামলেন তিন বছর বাদে, ১৯৯৫-এর নভেম্বর মাসে, নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে… ওড়িশার কটকে। সেই শেষ। দেশের হয়ে আর কামব্যাক করতে পারেননি তিনি। তাক লাগানো আরও একটি বিষয় হচ্ছে, অফ ফর্মের জেরে বাদ চলে যাওয়া এক ব্যাটসম্যান যখন অবসর নিলেন, তখন তাঁর নামের পাশে রয়েছে মোটে ১,০৮৪ রান। অথচ গড় ৫৪.২০!
এক অদ্ভুত এই বৈপরীত্য। অথচ এ বৈপরীত্য বিস্ময়ের নয়। এটাই ভবতব্য তাঁদের, যাঁদের প্রতিভা আছে, সংযম নেই। ক্ষমতা আছে, নিয়ন্ত্রণ নেই। গতি আছে, স্থৈর্য নেই। ধূমকেতুর মতো উত্থান আর আলোর রোশনাই দেখিয়ে এক লহমায় ফুরিয়ে যাওয়া তাঁদের ললাটলিখন। এই লিখন খণ্ডাবে কে?
উত্তরটা আজও অজানা। আজও অধরা। তাই কাম্বলিদের দেখে আমরা বিচলিত হই, সতর্ক হই। কিন্তু পরিত্রাণের কোনও পথ বাতলে দিতে পারি না। তা সে পিভি সিন্ধু যতই বলুন না কেন, উপার্জনের পাশাপাশি সঞ্চয়ে মন দিন, আশাপাশের শুভানুধ্যায়ীদের পরামর্শ মেনে চলুন... আমরা জানি, কাম্বলিদের পতনের ঐতিহ্য, প্রতিভার অপচয়ের এই অবিরাম ধারাস্রোত কোনওদিন বন্ধ হবে না। বন্ধ হতে পারে না। যদি হয়, তাহলে নতুন করে প্রতিভার জন্ম নেওয়ার রাস্তাটাই যাবে বন্ধ হয়ে! এই উৎকেন্দ্রিকতা, এই বিনাশ প্রতিভার এক ধরনের প্রতিক্রিয়া মাত্র। এর বল্গা ধরে রাশ টেনে রাখলে ওয়াংখেড়ের বাইশ গজে জন্ম নেন সচিন, অ্যাডিলেডে ভূমিষ্ঠ হন কোহলি। আর এই বিনাশী শক্তির পায়ে পা মেলালে দেয়াললিখনে লেখা হয় একের পর এক নাম: পৃথ্বী শ, অজয় শর্মা, অজয় জাদেজা…
অজয় শর্মা
দিল্লির হয়ে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন। ১০ হাজারের ওপর রান। গড় ৬৭.৪৬। ১৯৮৮ সালের এশিয়া কাপে দেশের হয়ে খেলার সুযোগ পান। এরপর ২০০০ সালে ওঠে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ। জোটে আজীবন নির্বাসনের শাস্তি। শেষমেশ খেলার দুনিয়া থেকে পুরোপুরি সরে আসেন অজয়। গড়ে তোলেন লন্ড্রি ও ড্রাই ক্লিনিংয়ের ব্র্যান্ড।
মনোজ প্রভাকর
ইনিও দিল্লির। একাধিক এশিয়া কাপে দেশের হয়ে খেলেছেন। তুখোড় অলরাউন্ডার। টেস্ট, ওয়ান ডে দু’ধরনের ক্রিকেটে ওপেনিং বোলার ও ওপেনিং ব্যাটার হিসেবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড রয়েছে প্রভাকরের ঝুলিতে। টেস্টে নিয়েছেন ৯৬টি উইকেট। এক দিনের ক্রিকেটে ১৫৭টি। এহেন বর্ণময় ক্রিকেট জীবনে কালি পড়ে ১৯৯৯ সালে। তেহলকা ফাঁস করে ম্যাচ গড়াপেটার বৃত্তান্ত। সেই কাণ্ডে অভিযুক্ত হন মনোজ। নির্বাসিত হন চিরজীবনের জন্য।
অজয় জাদেজা
কুখ্যাত ম্যাচ ফিক্সিং কাণ্ডে জাদেজার নামও জড়িয়েছিল। পাঁচ বছরের জন্য নির্বাসনের সাজা পান। অথচ একটা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতের লোয়ার মিডল অর্ডারের বিশ্বস্ত সৈনিক হয়ে উঠেছিলেন অজয়। পরে দিল্লির রঞ্জি টিমের কোচের ভূমিকায় দেখা গেছে তাঁকে। এখন তিনি আফগানিস্তান টিমের মেন্টর। তবু বেটিংয়ের জালে জড়িয়ে অজয় নিজের প্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। বাইশ গজের বদলে তাঁকে বিনোদন দিয়েছে রিয়্যালিটি শোয়ের মঞ্চ।
পৃথ্বী শ
কাম্বলি ছিলেন সচিনের সতীর্থ। পৃথ্বীকে মনে করা হত সচিনের আদত উত্তরসূরী। কাম্বলির মতো তাঁরও উত্থান ধূমকেতুসদৃশ। ২০১৮ সালে আইসিসি উঠতি তারকাদের পাঁচজনের একটি তালিকা প্রকাশ করে। সেখানে জায়গা করে নিয়েছিলেন মহারাষ্ট্রের এই তরুণ। অথচ নিয়তির চক্রে ঠিক তার পরের বছরই ডোপিং টেস্টে পৃথ্বী দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে সাসপেন্ড করা হয়। এই ধাক্কা কাটিয়ে আর ফিরে আসতে পারেননি তিনি। চলতি মরশুমে আইপিএল নিলামে অবিক্রীত রয়ে গেছেন তিনি। বাদ পড়েছেন মুম্বইয়ের রঞ্জি টিম থেকেও। বাইশ গজে ব্যাট হাতে বোলারদের শাসনের বদলে নাইটক্লাবে হুল্লোড় ও মিডিয়ার সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে খবরের শিরোনামে জায়গা করে নিয়েছেন পৃথ্বী শ।