শেষ আপডেট: 8th January 2025 14:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বিদেশ সফরে বোলিং অ্যাটাকের খোলনলচে কি বদলে ফেলার সময় এসেছে? দুজন বা তিনজন পেসার, দুজন স্পিনারের বদলে ভারতের কি উচিত চারজন সিমার ও একজন স্পিনার খেলানো? অস্ট্রিলিয়া সিরিজে এগিয়ে থেকেও ভরাডুবির পর বিশেষজ্ঞ মহলে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।
তথ্য বলছে, ভারতের ক্রিকেট টিম বরাবর-ই চার পেসারের সাবেকি মডেল অনুসরণ করে এসেছে। অন্তত, দেশের বাইরে খেলা থাকলে এই দর্শন-ই চোখ বন্ধ করে মেনে চলা হত। ব্যাটিং ভারতের চিরায়ত শক্তি। তাই তাতে ভরসা রেখেই চার পেসার ও স্পিনার বেছে নেওয়ার ঝুঁকি নিত নির্বাচকমণ্ডলী। টেল এন্ডারদের তালিকা লম্বা হলেও ক্ষতি নেই; ব্যাটাররা হাল ধরবেন, পেসাররা উইকেট নেবেন-- এমন চিন্তাই ছিল কোচ-ক্যাপ্টনদের মোদ্দা দর্শন।
হিসেবমতো, গত বছর পর্যন্ত এই মডেল অনুসৃত হয়েছে। যা মান্যতা পায় রবি শাস্ত্রী-বিরাট কোহলি জমানা (২০১৫) থেকে। দল যখন রাহুল দ্রাবিড়ের নিয়ন্ত্রণে, তখনও একই ধারা বজায় থেকে। একটা ছোট উদাহরণ ২০২৩-২৪ মরশুম। আমাদের স্মরণে থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর। সেখানে চার সিমারকে খেলিয়েছিল ভারতের টিম ম্যানেজমেন্ট-- বুমরা, সিরাজ, প্রসিধ এবং শার্দুল ঠাকুর। এই পর্বের (২০২১-২৪) পরিসংখ্যানও যথেষ্ট ইতিবাচক। প্রধান দুই পেসারের বোলিং গড় যেখানে ২৪.৯৪, বাকি দুজনের ২৭.১৮।
দ্রাবিড়ের পর শাস্ত্রী-কোহলি জুটিও কার্যকরী মডেলটি নিয়ে অহেতুক নাড়াঘাঁটা করতে চায়নি। চার পেসার খেলানোর সিদ্ধান্ত বজায় থাকে। এরপরই টিমের দায়িত্বভার তুলে দেওয়া হয় গৌতম গম্ভীরের হাতে। মজার বিষয় হচ্ছে, কোচের কুর্সিতে বসার পর গম্ভীরও পূর্বতন দর্শনের হয়েই সওয়াল করেছিলেন। একটি সাংবাদিক সম্মেলনে গৌতম সাফ জানান, কোনো ম্যাচে একজন ব্যাটার যদি হাজার রান-ও করে তাহলেও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না, তার টিম জিততে চলেছে। কিন্তু একজন বোলার যদি দুই ইনিংস মিলিয়ে কুড়ি উইকেট ঝুলিতে তোলে, তাহলে ৯৯ শতাংশ নিশ্চয়তার সঙ্গে বলা যায়, সেই দল টেস্ট ম্যাচটি জিতবেই জিতবে। শুধু টেস্ট নয়, যে-কোনও ফরম্যাটেই বোলাররা টুর্নামেন্ট জেতানোর ক্ষমতা রাখে।
কিন্তু কোচের কথায় আর কাজে যে বিস্তর ফারাক, সেটা স্পষ্ট হয়ে গেছে সদ্যসমাপ্ত বর্ডার-গাভাসকার সিরিজে। চারজনের বদলে তিন পেসারকে খেলিয়ে বাকি জায়গায় একজন অলরাউন্ডার (নীতিশ কুমার রেড্ডি)-কে খেলানোর সিদ্ধান্ত নেয় টিম ম্যানেজমেন্ট। আট নম্বর জায়গায় নীতিশের ব্যাট হাতে সার্বিক পারফরম্যান্স তেমন কার্যকর হয়নি। অন্যদিকে গোটা সিরিজে ভারতের বোলারদের মধ্যে মোটে ৭ শতাংশ ওভার করার ফলে তার বোলিংকেও তেমনভাবে কাজে লাগাতে পারেনি দল। সেই বুমরাই ভাঙা তরীর কাণ্ডারী থেকেছেন। করেছেন একের পর এক দীর্ঘ স্পেল। এবং অবধারিতভাবে চোটগ্রস্ত হয়ে শেষ টেস্টের শেষ ইনিংসে দলের বাইরে চলে গেছেন। চার পেসার খেলালে বুমরার ভার কমত, দলের বোলিং আক্রমণ আরও শাণিত হত এবং সিডনির ভাঙা পিচে ১৬২ রানের টার্গেট ছুড়ে দেওয়ার পরও দল লড়াইয়ে থাকত। মিচেল জনসনের মতো প্রাক্তন খেলোয়াড়েরা এমনটাই মনে করছেন।
চলতি বছরের জুন মাসে ইংল্যান্ড সফর। পাঁচ টেস্টের লম্বা সিরিজ। ইংল্যান্ডের পিচকেও ঐতিহাসিকভাবে পেসারদের স্বর্গভূমি মনে করা হয়। ব্যাটিং লাইন আপ-কে বাড়তি দায়িত্ব বুঝে নিতে বলে গৌতম গম্ভীরের ম্যানেজমেন্ট কি চার সিমারের ফর্মুলায় ফিরে যাবে? নজর থাকবে সেদিকে।