শেষ আপডেট: 28th December 2024 12:28
দ্য ওয়াল ব্যুরো : ছেলের জন্য যেদিন নিজের চাকরি ছেড়েছিলেন, সেদিন কম কথা তাঁকে শুনতে হয়নি। যেদিন ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়িয়েছিলেন, সেদিন কম কথা তাঁকে শুনতে হয়নি। সংসারে আর্থিক অনটন যখন চরম সীমায় পৌঁছেছিল, সেদিন কম কথা তাঁকে শুনতে হয়নি। তবে শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) বাবার হয়ে জবাব দিল সুযোগ্য ছেলে। নীতীশ রেড্ডির চওড়া ব্যাট থেকে বেরিয়ে এল ঝকঝকে শতরান। চোখের সামনে ছেলের সেঞ্চুরি দেখে আর নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মুত্যালা রেড্ডি। একদিকে চোখের জল ভেঙেছে বাঁধ, অন্যদিকে সিংহগর্জনে তিনি চিৎকার করে যাচ্ছে। এ যেন এক অভুতপূর্ব দৃশ্য! একজন বাবার কাছে এর থেকে বড় প্রাপ্তি আর কীই বা হতে পারে।
মেলবোর্ন টেস্টে গোটা ভারতবর্ষের স্বপ্নপূরণ করলেন নীতীশ। তবে এই যাত্রাপথ তাঁর কাছে একেবারেই সহজ ছিল না। অন্ধ্রপ্রদেশে জন্ম। বাবা মুত্যালা রেড্ডি হিন্দুস্তান জিঙ্কস সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু, আচমকা উদয়পুরে তাঁর ট্রান্সফার হয়ে যায়। সেদিন তিনি চাকরির স্বার্থে উদয়পুরে চলে গেলে, হয়ত নীতীশ আজকের দিনটা দেখতে পেতেন না। ছাড়তে হত ক্রিকেট। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বাবা নিজের চাকরি ছেড়ে দেন। সেইসময় নীতীশের বয়স ছিল ১২ কিংবা ১৩ সাল।
এরপর ক্রিকেট মাঠে লড়াইয়ের পাশাপশি সংসারে আর্থিক অনটনের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু হয়। অনূর্ধ্ব-১২ এবং অনূর্ধ্ব-১৪ ক্রিকেট খেলার সময় ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার এমএসকে প্রসাদের চোখে পড়েন নীতীশ। এমএসকে প্রসাদের হাত ধরেই অন্ধ্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনে এন্ট্রি নেন তিনি। মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে অন্ধ্রের হয়ে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন। এরপর থেকে নীতীশকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২৩ সালে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ তাঁকে ২০ লাখ টাকায় দলে নেয়। ওই বছর তিনি একটাও ম্য়াচ খেলার সুযোগ না পেলেও ২০২৪ সালে তিনি আইপিএল টুর্নামেন্টে ধামাকাদার ব্যাটিং করেন। ১৩ ম্য়াচে তিনি ৩০৩ রান করেন।
THE CELEBRATION FROM NKR'S FATHER IS SIMPLY AMAZING. ????❤️
— Mufaddal Vohra (@mufaddal_vohra) December 28, 2024
- Nitish Kumar Reddy, you've made whole India proud. ????????pic.twitter.com/Gx1PFY7RnE
চলতি বর্ডার-গাভাসকার ট্রফিতে টিম ইন্ডিয়ায় অভিষেক হয় নীতীশের। ইতিমধ্যে শতরানের পাশাপাশি ভারতীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে এই সিরিজে সর্বাধিক রান করে ফেলেছেন তিনি। পাশাপাশি মেলবোর্ন টেস্টে ফলো-অনের লজ্জা থেকেও বাঁচিয়েছেন ভারতকে। টিম ইন্ডিয়ার কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে যে ইনিংসটা নীতীশ খেললেন, তা ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকরা আজীবন মনে রাখবেন।