প্লে-অফের আগেই দেশে ফিরছেন এবারের আইপিএলে ঝড় তোলা একাধিক ইংরেজ ক্রিকেটার।
শেষ আপডেট: 15th May 2024 16:16
এই প্রতিবেদন দেখলে লোকে রে-রে করে তেড়ে আসতে পারে! ঔপনিবেশিক হ্যাংওভার কাটেনি নাকি মশাই? কিন্তু কবি তো লিখেই গিয়েছেন, ভাল-মন্দ যাহাই হউক, সত্যেরে সহজেই নিতে হবে। এবারের আইপিএলে কিন্তু ইংরেজ ক্রিকেটাররা মোটামুটি কাঁপিয়ে দিয়েছেন। টি-২০ বিশ্বকাপে যদি এই ফর্ম চলে, তাহলে নিঃসন্দেহে কাপ এবারেও লন্ডনের বিমানেই উঠবে। আপাতত সাত সমুদ্রের ওপার থেকে ডাক এসে পৌঁছেছে! ইংল্যান্ড বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, অনেক আইপিএল খেলে নিয়েছো, এবার মানে-মানে টি-২০ বিশ্বকাপের প্রস্তুতির জন্য দেশে ফিরে এসো। চার ম্যাচের একটা টি-২০ সিরিজ খেলবে পাকিস্তানের সঙ্গে। একেবারে গা ঘামিয়ে পাকিস্তান রওনা দেবে নিউ ইয়র্ক, ইংল্যান্ড উঠবে বার্বেডোজের বিমানে।
???????????????? ????????????????????????????, ???????????????????????? ???????????????????????? ????
— KolkataKnightRiders (@KKRiders) May 14, 2024
Go well, champ! pic.twitter.com/grzojmFhl6
ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা বিদায় নেওয়ায় বেজায় আতান্তরে পড়েছে আইপিএলের একাধিক দল। সবচেয়ে বিপাকে কলকাতা নাইট রাইডার্স ও রাজস্থান রয়্যালস। মোটের ওপর এখনও অবধি লিগ টেবিলের হিসেব দেখলে সবার ওপরে আছে তারা। কিন্তু রাজস্থানের জস বাটলার ও কলকাতার ফিল সল্ট আপাতত লন্ডনের বিমানে উঠে পড়েছেন। এতেই কপালে ভাঁজ পড়েছে কেকেআরের। অ্যাদ্দিন কলকাতার ওপেনিং জুটিতে কার্যত ম্যাচের পর ম্যাচ ঝড় তুলেছেন ফিল সল্ট ও সুনীল নারাইনের ওপেনিং জুটি। ১২ ম্যাচ খেলে ৪৩৫ রান রয়েছে সল্টের। রাসেল-রিঙ্কু জুটিকে সেভাবে খেলতেই হয়নি। স্ট্রাইক রেট ১৮২! নারাইন-সল্ট জুটিতে ৮৯৬ রান রয়েছে কেকেআরের। চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত, গৌতম গম্ভীরদের এবার ভাবনা, সল্টের বিকল্প কে হবেন? নাম অবশ্য রয়েছে। আফগান তারকা ওপেনার রহমানুল্লাহ গুরবাজ। তিনিও সল্টের মতই ঝোড়ো ওপেনের পাশাপাশি কিপিংটাও ভাল করে দেন। কিন্তু গুরবাজ টানা বাইরে ছিলেন। গুজরাত টাইটান্সের বিরুদ্ধে আমেদাবাদে কেকেআর গুরবাজকে নামাতে পারে বলে কথা হচ্ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে এক বলও না খেলে ম্যাচ ভেস্তে যায়।
মঙ্গলবার সল্টকে আবেগঘন বার্তা দিয়ে বিদায় সম্বর্ধনা দিয়েছে কলকাতা। নিলামে বিক্রিই হ'ননি। পরে জেসন রয়ের বদলি হিসেবে তাঁকে নেয় কেকেআর। অথচ বাকিটা সল্ট নিজের ব্যাটেই জবাব দিয়ে দেন। সতীর্থরা সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, মিস করবেন সল্টকে। কলকাতা সমর্থকদের কেউ কেউ তো এও বলে দিচ্ছেন, সল্টের জন্য তাঁদের একাংশ বিপক্ষে ভারত না থাকলে বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের ম্যাচগুলোয় সল্ট-বেয়ারস্টো-বাটলারদেরই সমর্থন করবেন!
প্রায় একই গল্প রাজস্থানের জস বাটলারের। ১১ ম্যাচে ৩৫৯ রান, স্ট্রাইক রেট ১৪০। যশস্বী জয়সওয়ালের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে ভাল ব্যাট করেছেন বাটলার। রাজস্থানের সেট অর্ডার ছিল অ্যাদ্দিন, বাটলার-যশস্বী-সঞ্জু-রিয়ান পরাগ-ধ্রুব জুড়েল। এবার বাটলারের জায়গায় কে ওপেন করবে সেই নিয়ে বেশ ভাবনায় রাজস্থান কোচ কুমার সঙ্গাকারা। এমনিতেই শ্রীলঙ্কান কিংবদন্তী তাঁর দলের মিডল অর্ডার নিয়ে খুশি নন। চেন্নাই সুপার কিংসের বিরুদ্ধে হারার পরে ফোঁসফাঁস করেছেন, ওপেনিং জুটি দাঁড়াতে না পারলে মিডল ওভারে আর সেভাবে রান উঠছে না। বাটলারের জায়গায় রাজস্থান আরও এক ইংরেজ টম কোলার-ক্যাডমোরকে খেলানোর কথা ভাবছে। আপাতত বিশ্বকাপের দলে তিনি নেই। ফলে শেষ অবধি ফাইনালে উঠলে শেষ অবধিই ক্যাডমোরকে পাবে রাজস্থান।
বাটলারকেও মহাসমারোহে বিদায় দিয়েছে রাজস্থান। বিমানবন্দরে যাবেন বলে গাড়িতে ওঠার আগে বাটলার বলে দিয়েছেন, আইপিএল জিতলেই যেন 'ফেসটাইমে' তাঁকে ফোন করা হয়।
চেন্নাইয়ের হয়ে এরকম চিন্তার জায়গা মইন আলি। যদিও ধারে-ভারে মইন এবারের আইপিএলে তেমন নজর কাড়তে পারেননি। মাত্র চার উইকেট নিয়েছেন পুরো মরসুমে। কিন্তু গুজরাতের বিরুদ্ধে ব্যাটে পঞ্চাশ হাঁকিয়েছেন মইন। চাইলে ব্যাটটা ভালই করেন। এমনিতেই বোলিং-এ চেন্নাইয়ের হাল খারাপ। মুস্তাফিজুর রহমান, মাথিসা পাথিরানা চলে গিয়েছেন। রবীন্দ্র জাডেজা, ড্যারিল মিচেল, সিমরজিৎ সিংহের সঙ্গে তাই মইনও প্লে-অফে বড় ভূমিকা নিতেই পারতেন। তিনি না থাকায় অতএব মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মাথাব্যথা তো কিঞ্চিৎ বাড়লই।
আইপিএলে এবারের মত আশা শেষ পাঞ্জাব কিংসের। পুরো মরসুম ধরেই ধারাবাহিকতার অভাব ভুগিয়েছে পাঞ্জাবকে। সঙ্গে চোট-আঘাতে সমস্যা আরও বেড়েছে। অধিনায়ক শিখর ধওয়নকে কাঁধের চোটের জন্য শুরুর কয়েকটা ম্যাচের পর আর পায়নি পাঞ্জাব। নেতৃত্বে ছিলেন ইংল্যান্ডের স্যাম কারান। তাঁর সঙ্গে লিয়াম লিভিংস্টোন, জনি বেয়ারস্টোরা নজর কেড়েছেন একাধিকবার। বিশেষ করে কলকাতায় কেকেআরের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের নাটকীয় জয়ের দিনটা বহুদিন মনে থেকে যাবে কলকাতার ক্রিকেটপ্রেমীদের। প্রথমে ব্যাট করে ২৬১ তোলার পরে সমর্থকরা অনেকেই ইডেন ছেড়ে বাড়ির পথ ধরেছিলেন। এই ম্যাচে আর দেখার কী থাকতে পারে? এমনিতেই পাঞ্জাবকে নিয়ে এবারে উন্মাদনা কম। কিন্তু পাল্টা ব্যাট করতে নেমে তাণ্ডব শুরু করলেন জনি বেয়ারস্টো। ৪৮ বলে ১০৮, মারলেন আটটা চার, ন'টা ছক্কা। সঙ্গে শশাঙ্ক সিংহের ২৮ বলে ৬৮ রানের জেরে ১৮ ওভার ৪ বলেই জয় তুলে নেয় পাঞ্জাব। বেয়ারস্টো, কারান, লিভিংস্টোন সকলেই এই সপ্তাহের মধ্যে ফিরে যাবেন দেশে। ফিরবেন আরসিবির উইল জ্যাকসও। একসময় লিগ টেবিলের তলায় পড়ে থাকা আরসিবি আজ উঠে এসেছে ছয়ে। এখনও প্লে-অফের আশা পুরোপুরি শেষ হয়নি। সৌজন্যে, রজত পতিদার, উইল জ্যাকস এবং অধিনায়ক বিরাটের ধারাবাহিক ফর্মে থাকা। শেষ অবধি আরসিবি প্লে-অফে যেতে পারলে জ্যাকসকে যে মিস করবেন তাঁরা, বলাই বাহুল্য!