শেষ আপডেট: 7th January 2025 18:31
দ্য ওয়াল ব্যুরো: জসপ্রীত বুমরার কট্টর প্রতিদ্বন্দ্বী কে? স্টিভ স্মিথ নাকি জো রুট? পরিসংখ্যান যাই বলুক না কেন, গত সাত বছরের ইতিহাস বলছে, কোনো মিডল অর্ডারের ব্যাটসম্যান কিংবা দুঁদে ওপেনার নন, বুমরাকে বার বার চ্যালেঞ্জের মুখে ঠেলে দিয়েছে চোট-আঘাত। আহত হয়েছেন, চোট পেয়েছেন, রিহ্যাবে গিয়েছেন। ছন্দে থাকা, ধারাবাহিকতার তুঙ্গে থাকা একজন পেসার প্রতিবার হোঁচট খেয়েছেন। কিন্তু কখনও ফুরিয়ে যাননি। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার ঠিক পরমুহূর্তে ঘুরে দাড়িয়েছেন।
সদ্যসমাপ্ত বর্ডার-গাভাসকার ট্রফির শেষ টেস্টে ফের একবার মাঠের বাইরে যাওয়ার পর বুমরার বোলিং কেরিয়ার নিয়ে সংশয়ের কালো মেঘ জমতে শুরু করেছে। বুমরা যে ম্যাচ শেষের আগেই চোট পেতে পারেন, এরকম অনুমান নানা মহলে শুরু হয়ে গেছিল। তাঁদের বক্তব্য—আখেরে একা কুম্ভ হয়ে দুর্গ সামলানোর খেসারতই তাঁকে গুনতে হল। বাকিদের অকর্মণ্যতা ঢাকতে টানা লং স্পেল চালিয়ে যাওয়াই আদত কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের বড় অংশ।
যদিও এই গল্প আজকের নয়। শুরু হয় ২০১৮ সালে। তখন ইংল্যান্ড-আয়ারল্যান্ড ট্যুরে গেছে ভারত। তিন মাসের লম্বা সিরিজ। সেই সিরিজের প্রথম টি-২০ ম্যাচে ফিল্ডিং করার সময় রিটার্ন ক্যাচ ধরতে গিয়ে বুমরার বাম হাতের বুড়ো আঙুলে চোট লাগে। ব্যাস! তিন সপ্তাহের জন্য বাদ।
ফিরে আসেন অন্তিম তিন টেস্ট ম্যাচে। শেষ করেছিলেন যেখানে, সেখান থেকে শুরু করেন নয়া দৌড়। ঝুলিতে আসে ১৪ উইকেট। টেন্ট ব্রিজ টেস্টে পাঁচ উইকেট দখলের দৌলতে ম্যাচ জেতে ভারত–সেটাই সিরিজের একমাত্র জয়। আর এখানেই বুমরা অনন্য! পিক আপ নেন অতি দ্রুত। শূন্য থেকে শুরু করেও ফর্মের চূড়োয় উঠতে সময় নেননি কোনোদিন। চোট-আঘাতের বিরতিতেও তাঁর ছন্দপতন হয় না।
পরের বছর, ২০১৯-এও একই ছবি। তবে এবার হাত নয়। আঘাত আরও গুরুতর। কোমরের নীচের অংশে চোট পান বুমরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে হ্যাটট্রিক পাওয়ার পরই চোট। এবার তিন সপ্তাহ নয়, তিন মাস। একাধিক ঘরোয়া সিরিজ থেকে নাম তুলে নেন তিনি। ২০২০-র গোড়ায় নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে কামব্যাক করেন বুমরা। কিন্তু দুর্ভাগ্য সে বছরও পিছু ছাড়ে না। এবার তলপেট। সিডিনিতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ফিল্ডিং করতে গিয়ে পেটের নীচের অংশে হ্যাঁচকা টান–যার জেরে প্রায় এক মাস মাঠের বাইরে বুমরা।
টানা চোট লেগে থাকার একটা খারাপ দিক হচ্ছে, পুরোনো আঘাত সেরে গিয়েও সারে না। ‘অন্তর্গত রক্তের ভেতর এর খেলা’ যেন চলতেই থাকে। তারপর আচমকা আগের চেহারায়, কখনও আরও তীব্রভাবে, হানা দেয়। বুমরার দুঃস্বপ্নের নেপথ্যে এও একটা গুরুতর কারণ। পুরোনো পিঠের আঘাত ফের একবার ফিরে আসে। গোটা আইপিএল, ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল—২০২৩ সালে একের পর এক টুর্নামেন্ট হাতছাড়া হয়। বাধ্য হয়ে ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে চার মাস রিহ্যাবে থাকার পর বুমরার ফের একবার কামব্যাক।
এই তালিকারই সর্বশেষ সংযোজন সিডনি টেস্ট। ফারাক একটাই। বাকি চোটগুলোর ক্ষেত্রে আগাম অনুমান করা সম্ভব হয়নি। ফিল্ডিং কিংবা বোলিং করতে গিয়ে আচমকা আহত হয়েছেন বুমরা। কিন্তু সিডনির চোট যেন স্বেচ্ছায় ডেকে আনা। নিজের ফিটনেসের আগে দলকে রাখারই মাশুল গুনতে হল ভারতীয় পেসারকে।