শেষ আপডেট: 17th February 2025 17:03
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ২০১৫ সাল। কাঠফাটা রোদ্দুর মাথায় প্রায় দর্শকশূন্য ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে রঞ্জির ম্যাচ দেখে চলেছেন নীতা আম্বানি। আইপিএল টুর্নামেন্টে নিজের দল মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের জন্য তখন তিনি উঠতি তারকার খোঁজে। এমন ক্রিকেটার, যে এখনও ‘আকরিক’ রয়েছে। অথচ একটু সাফসাফাই করলেই রংদার ‘হিরে’ হয়ে উঠতে পারে।
আর এই সময়ই তাঁর নজরে আসেন দুই ভাই। ক্রুনাল আর হার্দিক পান্ডিয়া। ছিপছিপে শরীর, কৃষ্ণকায়। কিন্তু চোখেমুখে আগ্রাসন, একটা খিদে যেন ফুটে ফুটে বেরোচ্ছে। যেন দর্পের সুরে ঘোষণা করতে চাইছে: একটিবার সুযোগ দিন, নিজেদের জাত চিনিয়ে দেব।
সুযোগ পেয়েছিলেন তাঁরা। সুযোগ দিয়েছিলেন নীতা। বাকিটা তো ইতিহাস। রঞ্জিতে নজরে আসা, আইপিএলে নজর কাড়া আর জাতীয় দলের হয়ে খেলতে নেমে পাকাপাকিভাবে নজরে বসে যাওয়া। যদিও এই ধূমকেতু-সদৃশ উত্থান একদিনে হয়নি। কীভাবে হয়েছিল, সেটাও এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি। সম্প্রতি নীতা আম্বানি জানিয়েছেন দুই ভাইয়ের পর্দার আড়ালে থাকা সংগ্রামের কাহিনি। তিনি বলেন, খ্যাতির শিখর ছোঁয়ার আগে ক্রুনাল ও হার্দিক—দুজনেই দু’বেলা ম্যাগি খেয়ে দিন কাটাতেন। আর সেটাও এক বছর দু’বছর নয়। অর্থকষ্ট সামলে তিন বছর এভাবেই ম্যাগি পেটে ট্রেনিংয়ে ঘাম ঝরাতেন তাঁরা।
নীতার বক্তব্য, ‘আইপিএলে একটাই ধরাবাঁধা বাজেট থাকে। সমস্ত টিম একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা খরচ করে। এই কারণে সব সময় নতুন তারকার খোঁজে আমাদের মাথা খাটাতে হয়। তাই আমি মুম্বইয়ের রঞ্জি ম্যাচ দেখতে ছুটে যেতাম। সেই ২০১৫ সাল থেকে। একদিন এক স্কাউট এসে আমায় জানায়, দুই ভাই দারুণ খেলছে। অচেনা, অজানা। কিন্তু যথেষ্ট প্রতিশ্রুতিমান তাঁরা। একদিন তাদের সঙ্গে দেখা করি, কথা বলি। তারপর ক্রুনাল ও হার্দিক দুজনের পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে সই করানোর সিদ্ধান্ত নিই। মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের ড্রেসিং রুমে কথা বলার ফাঁকে দুজনে আমায় একদিন জানায়, কীভাবে তিন বছর স্রেফ ম্যাগি, নুডলস খেয়ে দিন কাটিয়েছেন তাঁরা। সেই সময় তাঁদের কাছে কোনও টাকা, সঞ্চয় কিচ্ছু ছিল না।‘
এই প্রসঙ্গে উঠে এসেছে জসপ্রীত বুমরাহর কথাও। যদিও প্রথম দর্শনে তাঁর হাবভাব মোটেও মুগ্ধ করেনি নীতাকে। তিনি বলেন, ‘জসপ্রীতকে দেখি যখন, তখন ওঁর শরীরী ভাষা দেখে অদ্ভুত লেগেছিল। মোটেও স্বাভাবিক ঠেকছিল না। কিন্তু স্কাউট আমায় বলে, বুমরাহর শরীর কথা না বললেও বল কথা বলে। আর তার প্রমাণ আমি খুব জলদি পেয়েছিলাম। বাকিটা তো সবারই জানা।‘
ক্রুনাল, হার্দিক, জসপ্রীতের সরণি বেয়েই ফ্র্যাঞ্চাইজিতে যোগ দিয়েছেন তিলক বর্মার মতো ক্রিকেটার। প্রতিশ্রুতিতে যার জুড়ি মেলা ভার। তাই কিঞ্চিৎ শ্লাঘা দেখিয়ে নীতা যখন মুম্বই ইন্ডিয়ান্সকে ‘ভারতীয় ক্রিকেটের নার্সারি’ বলে ঘোষণা করেন, তখন সেই অস্মিতার সমালোচনা চললেও তাকে মোটেও অগ্রাহ্য করা যায় না।