শেষ আপডেট: 24th March 2025 18:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: বাংলাদেশের স্থানীয় সময় সকাল ন'টাতেই টসে নেমেছিলেন তামিম ইকবাল ও রায়ান রাফসান। ভেন্যু: বিকেএসপি। উপলক্ষ: ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে মহামেডান বনাম শাইনপুকুর ম্যাচ। টসের প্রক্রিয়া ভালোভাবে মিটে গিয়েছিল৷
এরপর ওয়ার্ম আপ। তারপর ড্রেসিং রুমে খানিকের বিশ্রাম শেষে সাড়ে ন'টা নাগাদ মাঠে নেমে পড়া। পূর্বনির্ধারিত পরিকল্পনা অনুযায়ী এই ছিল শিডিউল।
কিন্তু গা ঘামানোর সময়ই দেখা দেয় বিপত্তি। বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করেন তামিম। ড্রেসিংরুমে ফিরে যাওয়ার পর তার মাত্রা আরও বেড়ে যায়৷ ভেবেছিলেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা। ক্লাবের কর্তা তারিকুল ইসলামকে একথাই বলেছিলেন তিনি। সবার অনুরোধে তামিম বিশ্রাম নিতে যান। তারপর ব্যথা বুকের পাশাপাশি সরে আসে মুখের দিকে।
আর কালক্ষেপ করেননি৷ নিজের গাড়িতে চড়েই হাসপাতালের উদ্দেশে রওনা হন তামিম। ন'টা কুড়ি নাগাদ দলের ফিজিও ম্যাচ রেফারি দেবব্রত পালকে জানিয়ে দেন অধিনায়কের অসুস্থতার কথা। একদিকে হাসপাতালে তামিম। অন্যদিকে তাঁকে ছাড়াই নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে নেমে পড়েছে মহামেডান দল।
কেপিজে হাসপাতালে যাওয়ার পর গোড়ায় প্রাথমিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা ছাড়া সেভাবে কিছুই করা হয়নি৷ ইসিজি ও অন্যান্য কিছু টেস্টের পর তামিম ঠিক করেন, ঢাকায় গিয়ে ভালভাবে ডাক্তার দেখাবেন৷ আপাতত এ-ই ঠিক আছে। ইতিমধ্যে ঢাকায় ফোন করে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে ফেলেছে মহামেডান কর্তৃপক্ষ। তা উড়িয়ে আনা হয়েছে বিকেএসপির মাঠে৷
এই খবর পেয়ে ফের হাসপাতাল থেকে বিকেএসপি ফিরে আসেন তামিম। ঠিক হয় হেলিকপ্টারে চড়ে তক্ষুনি ঢাকা রওনা হবেন। কিন্তু উঠতে গিয়ে আচমকা জ্ঞান হারান তিনি। মুখ দিয়ে বেরোতে থাকে ফেনা। খবর পেয়ে ছুটে আসেন চিকিৎসক। পালস খুঁজতে গিয়ে তিনি পালস খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়? সকলেই নিরুত্তর!
তখন এগিয়ে আসেন বিকেএসপির চিকিৎসক। তিনি পরামর্শ দেন, এমন অবস্থায় হেলিকপ্টারে উড়িয়ে নিয়ে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে৷ তার চাইতে কেপিজে হাসপাতালেই চিকিৎসা শুরু হোক৷
বেলা গড়িয়ে ততক্ষণে সাড়ে এগারোটা বেজে গিয়েছে৷ এই অবস্থায় তামিমকে স্থানীয় হাসপাতালেই নিয়ে যাওয়া হয়। অ্যাম্বুলেন্সে নিয়ে যাওয়ার সময় তামিমের পাশে বসেছিলেন ক্লাবের ট্রেনার ইয়াকুব চৌধুরি৷ পুরো সময়জুড়ে তিনি ক্রিকেটারের বুকে পাঞ্চ করে যান৷ সেই সময় এতটাই সংকটাপন্ন অবস্থা যে, তামিম কারও ডাকে সাড়া পর্যন্ত দিচ্ছিলেন না।
হাসপাতালে পৌঁছনোমাত্র তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়৷ খবর পেয়ে ততক্ষণে পরিবারের সদস্যেরা ছুটে এসেছেন৷ চিকিৎসার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে রাখা হয়েছে চিকিৎসক দেবাশিস চৌধুরিকে। তাঁর নির্দেশেই অ্যাঞ্জিওগ্রাম, অ্যাঞ্জিওপ্লাস্ট ও স্টেন্ট করানো হয়৷ তখনই হৃদযন্ত্রে ধরা পড়ে ব্লক৷ পরানো হয় রিং৷
আপাতত হাসপাতালে সিসিইউতে রয়েছেন তামিম। আগামি ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা গুরুত্বপূর্ণ। রাখা হবে পর্যবেক্ষণে। তারপর শারীরিক অবস্থার হালহকিকত নিয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু বলা সম্ভব৷ আপাতত সংজ্ঞা ফিরেছে। পরিবার ও চিকিৎসকদের সঙ্গে কথাও বলেছেন তামিম ইকবাল।