দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাশিয়া বিশ্বকাপে অঘটন যে হারে বাড়ছে, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিতর্কও। বিতর্কের কেন্দ্রে রেফারিং। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বিতর্কিত সিদ্ধান্তের খেসারত দিতে হয়েছে বিভিন্ন দেশকে। কিন্তু সব কিছুকে বোধহয় ছাপিয়ে গেল রবিবাসরীয় লুঝনিকি স্টেডিয়াম। সৌজন্যে ডাচ রেফারি বর্ন কুইপার্স।
খেলা তখন গড়িয়েছে ৪১ মিনিটে। ইতিমধ্যেই ইগনাসেবিচের করা আত্মঘাতী গোলে ১-০ এগিয়ে স্পেন। বলের সিংহভাগও তাঁদের দখলে। একের পর এক আক্রমণ করছেন। সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রুশ ডিফেন্স। ঠিক সেই মুহূর্তেই কর্নার থেকে দ্বিতীয় পোস্টের দিকে থাকা জুবা হেড করলেন। গিয়ে লাগল সামনে থাকা স্প্যানিশ ডিফেন্ডার জেরার্ড পিকের হাতে। উপরের দিকে হাত তুলেছিলেন পিকে। সঙ্গে সঙ্গে পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দিলেন রেফারি কুইপার্স। ইনিয়েস্তা, পিকে, র্যামোস সমেত প্রায় গোটা স্পেন টিমের কোনও আবেদনে সাড়া দিলেন না রেফারি। এমনকী নিলেন না ভারে’র সাহায্যও। গোল করে সমতা ফেরাল রাশিয়া। শুধু তাই নয়, ১-১ অবস্থায় টাই ব্রেকারে গড়াল খেলা। আকিনফিবের দুরন্ত গোলকিপিংয়ে বিশ্বকাপ থেকেই ছিটকে যেতে হলো ২০১০ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন স্পেনকে।
আর তারপর থেকেই রেফারির এই সিদ্ধান্ত নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। সাধারণ মানুষের একটা বড় অংশ এই সিদ্ধান্তের বিরোধী। তাঁদের বক্তব্য পিকে বলের দিকে পেছন ঘুরে ছিলেন। তাই তাঁর পক্ষে কখনোই জানা সম্ভব নয় যে, বল তাঁর দিকে আসছে। স্বাভাবিকভাবে লাফানোর জন্য উঠতে গিয়ে হাত উপরের দিকে উঠে গিয়েছে। তাই এটা অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল। আর অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবলের ক্ষেত্রে কীভাবে রেফারি পেনাল্টি দিলেন সেটাই প্রশ্ন তাঁদের।
https://www.youtube.com/watch?v=6Hn7-T8Sjc0
উদাহরণ হিসেবে উঠে আসছে কয়েকটি ম্যাচের কথা। আর্জেন্টিনার মার্কাস রোহো বক্সের মধ্যে হেড করতে গিয়ে হ্যান্ডবল করলেও রেফারি ভার দেখেও পেনাল্টি দেননি। অন্যদিকে পর্তুগালের বিরুদ্ধে পেনাল্টি পেয়েছে ইরান। একই ঘটনায় দু’রকম সিদ্ধান্ত হচ্ছে কীভাবে। ফিফার নিয়মে স্পষ্ট বলা আছে, ইচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল হলে পেনাল্টি, অনিচ্ছাকৃত হ্যান্ডবল হলে পেনাল্টি নয়। কিন্তু সেই সূক্ষ্ম বিভেদ তো অনেক সময় খালি চোখে বোঝা নাও যেতে পারে। রেফারিও তো রক্ত-মাংসের মানুষ। সেই জন্যই তো রয়েছে ভার প্রযুক্তি। কিন্তু চলতি বিশ্বকাপে বারবার দেখা গিয়েছে, ভারে’র সিদ্ধান্ত অনেক ক্ষেত্রে গ্রহণ করেছেন রেফারি, অনেক ক্ষেত্রে নাকচও করেছেন। এখানেই প্রশ্ন উঠছে ভারে’র যৌক্তিকতায়।
রেফারি মহলের একাংশ আবার কুইপার্সের এই সিদ্ধান্তের সমর্থন করেছেন। তাঁদের বক্তব্য পিকের হ্যান্ডবল ইচ্ছাকৃত। কলকাতার জাতীয় স্তরের রেফারি গুপীনাথ পাইন এই প্রসঙ্গে বলেন, “ বক্সের মধ্যে পিকে যদি হাত না তুলত, তাহলে হ্যান্ডবলের কোনও প্রশ্নই উঠত না। পিকে বলের দিকে পেছন ঘুরে থাকলেও বক্সের অত লোকের মাঝে তাঁর পেছনে যে লোক আছে তা তিনি জানতেন। জুবার হেড গোলমুখী ছিল। তাই গোলমুখী শট তিনি আটকেছেন হাতে। আর ভার প্রযুক্তি রেফারি নেবেন কি নেবেন না সেটা নির্ভর করে তাঁর উপর। কারণ মাঠে তাঁর সিদ্ধান্তই ফাইনাল।”
অভিজ্ঞ এই ডাচ রেফারির অবশ্য এটাই প্রথম বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নয়। ২০১৫ সালে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে চেলসির বিরুদ্ধে প্যারিস সাঁ জা’র খেলায় ইব্রাহিমোভিচকে লাল কার্ড দেখানোই উত্তেজনা ছড়িয়েছিল মাঠে। আবার ২০১৪ সালের রিয়েল মাদ্রিদ বনাম অ্যাতলেটিকো মাদ্রিদের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালের রেফারিং করিয়েছেন কুইপার্স। চলতি বিশ্বকাপে ব্রাজিল বনাম কোস্টারিকা ম্যাচে বক্সের মধ্যে নেমারকে ফাউল করার জন্য প্রথমে পেনাল্টি দেন কুইপার্স। পরে ভার প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের সিদ্ধান্ত পালটানও। তাহলে নক আউটের মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে কেন ভারে’র সাহায্য নিলেন না তিনি? নাকি হোম অ্যাডভান্টেজ পেল রাশিয়া?
https://twitter.com/GrizzKhan/status/1013433256119762945