শেষ আপডেট: 10th November 2023 16:34
দ্য ওয়াল ব্যুরো: চলতি বছরের কথা। দিল্লির বিমানবন্দরের বাইরে সাংবাদিকদের ভিড়। এ কোনও নতুন দৃশ্য নয়। সেদিন দেখা গিয়েছিল, বিমানবন্দরের বাইরে একজনকে ঘিরে ধরে আছেন সাংবাদিকরা। অনেকেই ভেবেছিলেন কোনও নেতা-মন্ত্রী বা অভিনেতা হবেন। কিন্তু না, ওই ভিড়ের আকর্ষণ ছিলেন একজন ৯৫ বছরের বৃদ্ধা!
কৌতূহলেরবশে অনেকেই সেই ভিড়ে মিলিয়ে গিয়েছিলেন। জানার চেষ্টা করেছিলেন কে সেই বৃদ্ধা, যাঁকে নিয়ে সাংবাদিকদের এত উৎসাহ। তিনি আর কেউ নন, তাঁর নাম ভগওয়ানি দেবী দাগার। নামটা চেনা চেনা লাগছে কি? আরও ভাল করে বললে, ভগওয়ানি দেবী পরিচিত 'স্প্রিন্টার দাদি' হিসেবে!
৯৫ বছর বয়সেও তিনি বারবার দেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন। সেই ভগওয়ানি দেবী এবারের ২২তম মাস্টার্স অ্যাথেলিট এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা ফলালেন। ডিসকাস থ্রো, শট পুট আর জ্যাভলিন থ্রো--- এই তিন বিভাগে সোনা জিতেছেন ভারতের 'স্প্রিন্টার দাদি'।
World Champion 95-year-old Bhagwani Devi Dagar From New Delhi is now the Asian Champion to grab 3 Gold Medals (Shotput, Discuss & Javelin Throw) in the 22nd Asian Masters Athletics Championship, New Clark City, Philippines. pic.twitter.com/J2FwnnMOzJ
— ANI (@ANI) November 10, 2023
দিল্লির বাসিন্দা ভগওয়ানি দেবীর জীবন আর পাঁচজন মহিলার মতো। আগেকার দিনে মেয়েদের বিয়ে হত খুব কম বয়সেই। ভগওয়ানি দেবীর জীবনেও তার অন্যথা হয়নি। কিন্তু তাঁর জীবন যে অন্যখাতে বইবে, তা হয়তো তিনি নিজেও ভাবেননি।
বয়সের গণ্ডি তখন তিরিশও পেরোয়নি, কোলে চলে আসে এক সন্তান। ছেলে, মেয়ে, স্বামীকে নিয়ে সুখের সংসার ছিল তাঁর। কিন্তু সেই সুখ বেশিদিন স্থায়ী হল কই। ভগওয়ানি দেবীর পেটে তখন তাঁদের আর এক সন্তান, তখনই ঘটে এক মারাত্মক দুর্ঘটনা। সেই দুর্ঘটনা কেড়ে নেয় ভগওয়ানি দেবীর স্বামী ও ছেলেকে।
সেই ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই দ্বিতীয় ধাক্কা। মাত্র চার বছর বয়সেই মারা যায় ভগওয়ানি দেবীর বড় মেয়ে। দুই সন্তান ও স্বামীহারা যুবতীর অবস্থা তখন অসহায়। চোখের জল শোকায় না, খিদের জ্বালায় ছটফট করে তাঁর সদ্যোজাত ছেলে। কী করবেন এমন অবস্থায় ভেবে পান না ভগওয়ানি দেবী।
ঠিক করেন, যে করেই হোক ছেলেকে বাঁচাতে হবেই। জীবনের এক কঠিন লড়াইয়ে নেমে পড়েন ভগওয়ানি দেবী। ছেলেকে মানুষ করানো, তাকে পড়াশোনা করিয়ে বড় করা, বিয়ে দেওয়া--- সবই একার হাতে করেছেন ভগওয়ানি দেবী।
জীবন সংগ্রামে লড়াই করতে করতে ভগওয়ানি দেবী ভুলতেই বসেছিলেন তাঁর স্বপ্নের কথা। ছোট থেকেই খেলাধুলা করতে ভালবাসতেন। কিন্তু ছোট বয়সেই বিয়ে সংসার হয়ে যাওয়ায় সেই স্বপ্ন চাপা পড়েই যেতে বসেছিল। কিন্তু জীবনের একটা বড় সময় পেরিয়ে আসার পর ফের নিজের স্বপ্ন পূরণ করার ইচ্ছে জাগে ভগওয়ানি দেবীর মনে।
ভগওয়ানি দেবীর এই ইচ্ছে নতুন করে জন্ম দিয়েছিল তাঁরই নাতি বিকাশ দাগার। বিকাশ নিজে একজন অ্যাথেলিট। ঠাকুমার হাতে তিনিই তুলে দেন লোহার বল! বাকিটা ইতিহাস। ৭০ বছর পেরিয়ে যাওয়া বৃদ্ধার জীবনে বইতে থাকে অন্যখাতে। কঠিন অনুশীলন ও অধ্যাবসায় ভগওয়ানি দেবীকে সাফল্য এনে দিল।
২০২২ সালে ফিনল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ওয়ার্ল্ড মাস্টার্স চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়েছিলেন বছর ৯৪-এর ভগওয়ানি। সেখানে সোনা ফলান তিনি। প্রথমবারেই তিনটে মেডেল জেতেন। অনামী ভগওয়ানি দেবী সকলের কাছে হয়ে ওঠেন 'স্প্রিন্টার দিদা'। সেখানেই থেমে যাননি। আজও তিনি ছুটছেন। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তিনিও এগিয়ে চলেছেন।