শেষ আপডেট: 16th April 2025 15:30
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মঙ্গলবার দুপুরে মিরপুরে বিসিবি (BCB) কার্যালয়ে হঠাৎ করেই উপস্থিত হয় দুর্নীতি দমন কমিশন (Anti Corruption Unit) (দুদক)। আগে থেকে কোনও খবর না থাকায় এর ফলে হতচিকত হয়ে পড়েন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (Bangladesh Cricket Board) কর্তারা। ক্রিকবাজের প্রতিবেদন সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন সদস্যের একটি দল সেখানে তল্লাশি চালিয়েছে এবং বেশ কিছু নথি বাজেয়াপ্ত করেছে। দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় দুদকের এই অভিযান বলে জানা গিয়েছে।
মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সদর দফতর। সেখানে মূলত তিনটি অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালায় দুদকের প্রতিনিধিদল। অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, বিসিবির আয়োজনে মুজিব শতবর্ষ উদযাপনের খরচের হিসাব, তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত বিপিএলের টিকিট বিক্রির হিসাব ও তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ফির অনিয়ম। বাংলাদেশ দুর্নীতি দমন শাখার আধিকারিকরা সাংবাদিকদের বলেছেন, এই তিনটি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা বিসিবির কাছে তথ্যাদি জানতে চেয়েছেন।
দুদকের সহকারী ডিরেক্টর আল আমিনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এদিন বিসিবির সদর দফতরে যায়। সেখানে প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালান আধিকারিকেরা। তল্লাশির সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিফ একজিকিউটিভ নিজাম উদ্দিন চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, তদন্তকারীদের সব রকম সাহায্য করা হবে।
দুদকের সহকারী ডিরেক্টর আল আমিন বলেন, মুজিব শতবর্ষের অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রায় ২৫ কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছিল। তবে অভিযোগ আছে, এর মধ্যে মাত্র ৭ কোটি টাকার খরচ দেখানো হয়। বাকি ১৯ কোটি টাকার মতো খরচের হিসাব দেওয়া হয়নি।’ এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ফাইন্যান্স বিভাগের কাছে তথ্যাদি চেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া টিকিট বিক্রি থেকে প্রায় ২ কোটি টাকা আয় হয়েছে বলেও জেনেছে দুদক, যেটার হিসাব দেখানো হয়নি। সব মিলিয়ে ২০ কোটি টাকার বেশি গরমিল থাকতে পারে।
এর পাশাপাশি গরমিল পাওয়া গিয়েছে, বিপিএলের টিকিট বিক্রির আয়ের ক্ষেত্রেও। সংবাদমাধ্যমকে দুদক আধিকারিকরা জানান, বিপিএলের ১১তম আসরেই যেখানে ১৩ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে, সেখানে তৃতীয় থেকে দশম আসর পর্যন্ত আট মরসুমে টিকিট বিক্রি থেকে মোট আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। বিসিবির কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ নিয়ে বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে বিসিবি চুক্তি করত এবং ওই চুক্তি অনুযায়ী টিকিট বিক্রি করত। টিকিট বিক্রি থেকে নির্দিষ্ট একটা অঙ্ক বিসিবিকে দিত, যেটা তাদের আয় হিসাবে ধরা হতো।
প্রাক্তন বিসিবি সভাপতি হিসাবে যখন দায়িত্বে নাজমুল হাসান ছিলেন, সেই সময় তৃতীয় বিভাগ বাছাই ক্রিকেটের এন্ট্রি ৫০ হাজার থেকে একলাফে ৫ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা করে দেওয়া হয়েছিল। এতে প্রতিযোগিতা থেকে সরে যায় প্রায় সব দলই। প্রতিবছর মাত্র দু’টি করে দল উচ্চ এন্ট্রি ফি দিয়ে নামমাত্র প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে। জানা গিয়েছে এ নিয়েও তদন্ত করবে দুর্নীতি দমন শাখা।
দুদক আধিকারিকরা বলেন, এন্ট্রি ফি বাড়িয়ে দেওয়ায় গত কয়েক বছরে এ প্রতিযোগিতায় ২-৩-৪টি করে দল অংশ নিত। এবার এন্ট্রি ফি কমিয়ে ১ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা করায় ৬০টি দল অংশ নিতে পেরেছে। এখানেও কোনও অসংগতি থাকলে সেটিও যাচাই করে দেখবে দুর্নীতি দমন শাখা।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের সহকারী ডিরেক্টর বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁরা বিসিবির কাছে ওই তিনটি বিষয়ে তথ্যাদি চেয়েছেন। এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমকে বিসিবির বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের চিফ এগজিকিউটিভ নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, তাঁরা সমস্ত বিষয়ে সাহায্য করবেন। অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ম্যানেজমেন্ট টিম বিসিবির পরিচালনা পরিষদের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করি এবং বোর্ডের কার্যক্রম পরিচালনা করি। আমাদের কাজ হচ্ছে বোর্ডের নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা।’