শেষ আপডেট: 15 December 2023 03:12
দ্য ওয়াল ব্যুরো: গর্ভে থাকতেই ধরা পড়েছিল ক্রনিক কিডনির (সিকেডি) রোগ। বিশ্বে সবচেয়ে বড় ত্রাস এই সিকেডি। চিকিৎসকরা সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন এই সন্তান জন্মালে ১২ বছরের বেশি বাঁচবে না। জন্মের পরেই ধরা পড়ে কিডনির অসুখ বিপদসীমা পার করে ফেলেছে। সদ্যোজাত শিশুকে তুলোয় জড়িয়ে বড় করেন বাবা-মা। ক্রিকেট শেখান। সেই ছেলেই আজ অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার ক্যামেরন গ্রিন। বয়স ২৪ বছর।
চিকিৎসকদের ভবিষ্যতবাণী মেলেনি। অদম্য মনের জোর ও জীবনযাত্রায় নিয়ন্ত্রণ ক্রনিক কিডনির অসুখকে দমিয়ে রেখেছে। সেকেন্ড স্টেজে পৌঁছেও ২২ গজের রাজা ক্যামেরন। পঞ্চম স্টেজই নাকি চ্যালেঞ্জ। ওই পর্যায় থেকে কিডনি বিকল হওয়া শুরু হবে। তখন ডায়ালিসিস ছাড়া গতি নেই। ধীরে ধীরে সেই প্রক্রিয়াও ফেল করতে থাকবে। তখন কিডনি প্রতিস্থাপনই একমাত্র পথ। তবে অন্তিম পর্যায় নিয়ে ভাবছেন না ক্যামেরন। কিডনির মারণ অসুখ নিয়েই মাঠে দৌড়ে, ছুটে খেলছেন তিনি। দেশকে জেতাচ্ছেনও। মাত্র ২৪ বছরেই মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে উঠেছেন ক্যামেরন।
বাবার সঙ্গে ক্যামেরন
মা বি ট্রাচি তখন ১৯ সপ্তাহের গর্ভবতী। আলট্রাসোনোগ্রাফি করে ধরা পড়ে গর্ভস্থ সন্তানের কিডনির রোগ রয়েছে। এই সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে তার ক্রনিক কিডনির রোগ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। হয়ও তাই। ক্যামেরনের জন্মের পরেই ডাক্তাররা দেখেন ক্রনিক কিডনির অসুখ বিপজ্জনক পর্যায়ে রয়েছে ছেলের। চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে ভবিষ্যৎবাণী করেন এই ছেলের আয়ু মাত্র ১২ বছর।
বাবার কোলে ছোট্ট ক্যামেরন
লড়াইটা সেদিন থেকেই শুরু হয় বাবা গ্যারি ও মা ট্রাচির। ছেলেকে মৃত্যুভয় পেতে দেননি বাবা-মা। বরং ছোট থেকেই ধেলাধূলায় অভ্যস্ত করেছেন। ক্রিকেট খেলায় ছোট থেকেই আগ্রহ ছিল ক্যামেরনের। তাঁর অধ্যবসায় ও পরিশ্রম ছিল দেখার মতো। সেই ছেলেই জাতীয় দলে সুযোগ পায় ও একদিন বিশ্বখ্যাত হয়ে ওঠে।
Cameron Green has chronic kidney disease.
— 7Cricket (@7Cricket) December 14, 2023
There are five stages to it, with the fifth stage requiring a transplant or dialysis.
This is how Green - currently at stage two - manages the condition every day... pic.twitter.com/ikbIntapdy
চিকিৎসকরা বলছেন, ক্রনিক কিডনির রোগের পাঁচটি পর্যায় রয়েছে। শেষ পর্যায় বা ফিফথ স্টেজে গেলে তখন কিডনি প্রতিস্থাপন করার দরকার হয়। কিডনি আর রক্ত শোধন করতে পারে না। কিডনি শুধু শরীর থেকে রেচন পদার্থই বার করে না, তার ভূমিকা আরও বেশি। যেমন--রক্তে সোডিয়াম, পটাশিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে কিডনি। অ্যাসিডোসিস হয়ে রক্তে অ্যাসিডের মাত্রা যাতে লাগামছাড়া না হয়ে যায় সেদিকেও তার কড়া নজর। হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ঠিক রাখতেও এর ভূমিকা আছে। তা ছাড়া, শরীরে জলের ভারসাম্য বজায় রাখা, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করা, হাড়ের স্বাস্থ্য ভাল রাখা, কিডনির দায়িত্ব অনেক। ক্যামেরনের যে অসুখ হয়েছে তাতে কিডনির ভালভগুলো বিকল হয়ে যেতে বসেছে। বলে প্রস্রাব ব্লাডারে জমা হয়ে বাইরে না বেরিয়ে আবার কিডনিতে ফিরে আসছে। ধীরে ধীরে কিডনির রক্তজালকগুলোও নষ্ট হতে বসেছে।
২৪ বছরের ক্যামেরন যখন ২২ গজের লড়াইয়ে নামেন তখন শরীরের এই প্রতিবন্ধকতা ভুলে যান। লড়াইটা তখন আর শরীরের সঙ্গে নয়, লড়াইটা হয় দেশকে জেতানোর জন্য। আর তাতেই যে মনোবল তিনি পান তা মারণ রোগকেও দমিয়ে রাখতে পারে। রেখেওছে টানা ২৪ বছর। আয়ু আর কতদিন জানা নেই অজি ক্রিকেটারের। তবে এখনও তিনি খেলতে চান। ক্যামেরন বলেছেন, “কিডনি এখনও ৬০ শতাংশ সচল আছে। আমি ভাগ্যবান এখনও অনেকদিন খেলতে পারব।”