শেষ আপডেট: 3rd February 2025 10:38
দ্য ওয়াল ব্যুরো: এতদিন ম্যাঞ্চেস্টার সিটি পাঁচ গোলে বিপক্ষকে উড়িয়ে দিচ্ছে, ইচ্ছেমতো টিকিটাকা স্টাইলে ছেলেখেলা করছে—এমন ছবি দেখাটাই দস্তুর ছিল। চলতি মরশুমে সবকিছুই উলটপুরাণ। যার আরও এক নজির ফুটে উঠল লন্ডনের এমিরেটস স্টেডিয়ামে। ছত্রভঙ্গ ডিফেন্স, ছন্নছাড়া মাঝমাঠ৷ তার উপর একের পর এক মিস পাস। আর্সেনালের বিরুদ্ধে খেলতে নেমে রেকাবিতে নৈবেদ্য সাজানোর মতো তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট মিকেল আর্টেটার দলকে উপহার দিল পেপ গোয়ার্দিওলার টিম। নিট ফল: আর্সেনাল ৫-১ ম্যাঞ্চেস্টার সিটি।
এবার সিটি প্রিমিয়ার লিগ জিতবে না। এটা আগেই ঠিক হয়ে গেছিল। অঙ্কের হিসেবে নয়, পারফরম্যান্সের নজরে। দু-তিন গোলে এগিয়ে থেকেও খালি হাতে ফেরে যে টিম, তার আর যাই হোক, চ্যাম্পিয়ন হওয়া সাজে না৷ গতকাল অবশ্য এগিয়ে থাকার প্রশ্নই ওঠেনি। শুরু থেকেই ব্যাকফুটে চলে যায় সিটি। মাত্র দু'মিনিটের মাথায়, ম্যানুয়াল আকেঞ্জির ভুলে। প্রথমে হাই প্রেসিংয়ের দৌলতে সিটি ডিফেন্ডারের পা থেকে বল কাড়েন কাই হাভের্ৎজ। তারপর বাড়িয়ে দেন অধিনায়ক মার্টিন ওডেগার্ডের উদ্দেশে। জোরালো শটে বল জালে জড়ান নরওয়ের অধিনায়ক।
প্রথমার্ধে চাপ বজায় রাখে আর্সেনাল। ইন পজেশন (বল পায়ে) ৪-৩-৩ এবং উইদআউট পজেশন (বল ছাড়া) ৫-২-৩ ফর্মেশনে ঘুঁটি সাজিয়েছিলেন মিকেল আর্টেটা। ফলে সিটির পায়ে বল থাকলেও টমাস পার্টে, ডেক্লান রাইসদের প্রেসিংয়ের জেরে গানার্সদের রক্ষণ ভেদ করতে পারেননি ফিল ফডেনরা। এরই মধ্যে মার্টিনেলির গোল অফসাইডের জন্য বাতিল হয়, কাই হাভের্ৎজ সহজ সিটার মিস করেন। নয়তো ফার্স্ট হাফেই ‘গেম ওভার’ হয়ে যেত।
দ্বিতীয়ার্ধে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে সিটি। শুরুর ৪৫ মিনিটে মাত্র ছ'বার পায়ে বল ঠেকিয়েছিলেন আর্লিং হালান্ড। সেকেন্ড হাফে, ৫৫ মিনিটের মাথায় কামব্যাক করেন নরওয়ের গোল মেশিন। সাভিনহোর ক্রসে জোরালো হেডার। গোল। স্কোরলাইন ১-১।
এরপর সবাই যখন ভাবতে শুরু করেছে রাশ টেনে ধরবে পেপ বাহিনী, ঠিক তখনই ফের একবার এগিয়ে যায় আর্সেনাল। তাও গোল খাওয়ার মাত্র ৩৮ সেকেন্ডের মাথায়! মিডফিল্ডার টমাস পার্টের শট ডিফেন্ডার জন স্টোনসের পিঠে ধাক্কা মেরে বাঁক খেয়ে জালে জড়ায়। তার আগে পার্টেকে মিস পাস বাড়িয়ে আর্ধেক কাজ সেরেই ফেলেছিলেন ম্যান সিটির ফিল ফডেন!
এভাবে আচমকা গোল খেয়ে ছন্দহীন হয়ে পড়েন মাটেও কোভাচিচরা। শেষ ত্রিশ মিনিট ধরে নাগাড়ে আক্রমণ শানাতে থাকে আর্সেনাল। প্রথমে নবাগত লুইস-স্কেলি এবং তারপর ফার্স্ট হাফে সহজ সুযোগ নষ্ট করা কাই হাভের্ৎজ গোল করে ব্যাবধান বাড়ান (৪-১)। ম্যাচের অন্তিম লগ্নে, অতিরিক্ত মিনিটে ইথান নুয়ানেরির দৃষ্টিনন্দন গোল কেকের উপর পাঁচটি চেরির সাজ সম্পূর্ণ করে।
এই ফলের সৌজন্যে ২৪ ম্যাচে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে লিভারপুলের (২৩ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট) ঘাড়ের উপর নিশ্বাস ফেলা জারি রাখল আর্সেনাল। সিটি বহুদূর দাঁড়িয়ে (৪১ পয়েন্ট)। আজ চেলসি ওয়েস্ট হ্যামকে হারালে কিংবা ড্র করলে পেপের টিম নেমে যাবে পাঁচে।
নিজের কোচিং কেরিয়ারে এর আগে কোনওদিন লিগ ম্যাচে এত বড় ব্যাবধানে হারের মুখ দেখেননি গোয়ার্দিওলা। সদ্য ডিভোর্স হয়েছে, আর্থিক নিয়মভঙ্গের জেরে ক্লাবের মাথায় ১১৫-টিরও বেশি অভিযোগের খাঁড়া ঝুলছে, দল ছাড়ছেন, ছাড়তে চাইছেন একের পর এক বিশ্বস্ত, অনুগত খেলোয়াড়, ব্যাকরণ ভুলে হাস্যকরভাবে গোল খাচ্ছে একদা অপরাজেয় টিম।
পেপ গোয়ার্দিওলার সময় ভালো যাচ্ছে না।