লিভারপুল
শেষ আপডেট: 28 April 2025 11:22
দ্য ওয়াল ব্যুরো: মে ১৯৯০। অ্যালান হানসেনের হাতে উঠল ফার্স্ট ডিভিশনের তাজ। ট্রফি জিতল লিভারপুল। সেই ১৮তম লিগ খেতাব ঢুকল রেড আর্মির ট্রফি ক্যাবিনেটে।
এর দু'বছর বাদে প্রথম ডিভিশন লিগের নামটুকু বদলে যাবে। ‘ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ’ নামে তা আরেকটু ঝাঁ চকচকে, আরেকটু রংচঙে মোড়কে নবরূপে হাজির হবে। কিন্তু এই নামান্তরই যেন লিভারপুলের অভিশাপ হয়ে উঠবে। মরশুমের পর মরশুম গড়াবে, সিজনের পর সিজন এগোবে… আর ‘ইংল্যান্ড সেরা’র তকমা কিছুতেই জুটবে না। এর মধ্যে ইউরোপে শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখবে তারা। কিন্তু ঘরোয়া ময়দানে চূড়ান্ত ব্যর্থ। সিজন পাল্টাবে। চিত্রনাট্য বদলাবে না৷
নানান ম্যানেজারের আসা-যাওয়ার পর যখন কুর্সিতে বসলেন য়ুর্গন ক্লপ, ভাগ্যের চাকা যেন আস্তে আস্তে ঘুরতে শুরু করল। প্রথম বছরই অবশ্য অসাধ্য সাধন করেননি তিনি। ম্যাঞ্চেস্টার সিটির একাধিপত্যে থাবা বসানো চাট্টিখানি কথা ছিল না। তবু লাগাতার পরিশ্রমের পর অবশেষে শিকে ছেঁড়ে। প্রিমিয়ার লিগ জেতে লিভারপুল। আজ থেকে পাঁচ বছর আগে।
কিন্তু তখন কোভিডের সময়৷ ফলে লকডাউনজনিত বিধিনিষেধের জেরে ফাঁকা স্টেডিয়ামে উচ্ছ্বাস দেখাতে হয়েছিল মো সালাহ, ভ্যান ডাইকদের। পরের চার বছর তীরে এসেও তরী ডুবেছে। শেষ হাসি হেসেছে পেপ গোয়ার্দিওলার সিটি ব্রিগেড।
ন'বছরের সম্পর্ক ছিন্ন করে ক্লপ যখন সরে গেলেন, অনেকেই মনে করেছিলেন শূন্যস্থান ভরাট করতে সময় লাগবে। নবাগত আর্নে স্লটও কি খুব একটা আশাবাদী ছিলেন? অতি বড় লিভারপুল-ভক্তও কি ভেবেছিলেন এবারের প্রিমিয়ার লিগে সেরার শিরোপা তাদের মাথায় উঠতে চলেছে? সেরা চার দলের মধ্যে সিজন শেষ করে পরের বছর চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলার ছাড়পত্র জোগাড় করাটাই বিরাট সাফল্য হতে পারে লিভারপুলের—এমন লক্ষ্যমাত্রাই দাঁড় করান বিশেষজ্ঞদের একটা বড় অংশ।
গতকাল টটেনহ্যামের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে এমনই সব তত্ত্ব, আশা-আশঙ্কার কথা নিশ্চয় মনে পড়ছিল স্লটের। যে ম্যাচ হতে পারত টপে ফোরে ওঠার জন্য মরণবাঁচন লড়াই, সেটাই কার্যক্ষেত্রে হয়ে দাঁড়াল সেরার তকমা পাওয়ার মঞ্চ। লক্ষ্যটাও তিন পয়েন্টের নয়, মাত্র এক পয়েন্টের। একটা ড্র-ই যথেষ্ট।
যদিও ম্যাচ শুরুর পর উল্টো ছবি ফুটে ওঠে। ডমিনিক সোলাঙ্কির গোলে এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম৷ প্রিলিউডের অ্যান্টি ক্লাইম্যাক্সের সুর বেজে ওঠে। তবে কি আজকেও খালি হাতেই ফিরতে হবে সালাহদের? ফের এক সপ্তাহের অপেক্ষা?
সমর্থকদের মনে যখন এমনই আশঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছে তখনই পরিত্রাতা হয়ে ওঠেন লুইজ দিয়াজ। সাবোজলাইয়ের লো ক্রস থেকে বাড়ানো বল জোরালো শটে জালে জড়াতে ভুল করেননি। আট মিনিট বাদে অ্যালেক্সিস ম্যাক অ্যালিস্টারের গোলে এগিয়ে যায় লিভারপুল। ব্যবধান বাড়ান ডাচ উইংগার কোডি গ্যাকপো৷ দ্বিতীয়ার্ধে মো সালাহ সিজনের ২৮ তম গোল করে জয় একপ্রকার নিশ্চিত করেন। ৬৯ মিনিটের মাথায় টটেনহ্যাম ডিফেন্ডার ডেস্টিনি উডোগির আত্মঘাতী গোলে পাঁচ গোলের মুকুট মাথায় তোলে স্লটের টিম।
এই জয়ের সুবাদে লিভারপুল শুধু সিটির টানা পাঁচ বার প্রিমিয়ার লিগ জয়ের স্বপ্ন ভাঙল না, কুড়িতম লিগ খেতাব জিতে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের গড়ে তোলা রেকর্ডেও থাবা বসাল। লিভারপুল কুড়িটির মধ্যে আঠারোটি জিতেছে ‘ফার্স্ট ডিভিশন ট্রফি’ নামে। দুটি ‘প্রিমিয়ার লিগ’।