পিএসএল ২০২৫
শেষ আপডেট: 9 May 2025 19:55
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতের প্রত্যাঘাত ও লাগাতার সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে নিরাপত্তার ইস্যুকে ঢাল করে পিএসএলের বাকি আটটি ম্যাচ আরবভূমিতে সরানোর কথা ঘোষণা করেছিল পাক ক্রিকেট বোর্ড (পিএসবি)। সকালবেলার এই ইতিবাচক পরিস্থিতি ভরসন্ধেবেলা যে এভাবে আমূল বদলে যাবে সেটা বোধ হয় দু:স্বপ্নেও কল্পনা করেননি পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পাকিস্তানের আশায় জল ঢেলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহির ক্রিকেট সংস্থা এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, পিএসএল আয়োজন করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ হিসেবে দর্শানো হয়েছে ‘নিরাপত্তা'র ইস্যুকে। যে সুরক্ষার প্রশ্নে ক্রিকেট লিগ সরানোর ফন্দি এঁটেছিল পাকিস্তান, কার্যত তা মুখ থুবড়ে পড়েছে।
এর চেয়েও তাৎপর্য বিষয় হচ্ছে, নিরাপত্তা ছাড়াও আরব আমিরশাহির হাত গুটিয়ে নেওয়ার আরেকটি অন্যতম কারণ ভারতের সঙ্গে নিবিড় দোস্তি। যেটা চলতি বছরের চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পর নিবিড়তর হয়েছে। সর্বশেষ আইসিসি টুর্নামেন্ট আয়োজনের বরাত পাকিস্তান পেলেও ভারত সমস্ত ম্যাচ খেলেছিল দুবাইয়ের ময়দানে। সেই সূত্রে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব আরও পোক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, অতীতেও বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে আরব৷ সেটা হতে পারে আইপিএল আয়োজন নিয়ে। কিংবা একুশের টি-২০ বিশ্বকাপ নিয়ে। সব সময় টিম ইন্ডিয়াকে অতিথির মর্যাদায় সমাদর ও সাহায্য করেছে তারা। ফলে সাম্প্রতিক যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ভারতের শত্রু পাকিস্তানের মেহমানগিরি করে আরব বরাবরের মিত্র দেশকে অসন্তুষ্ট করতে নারাজ৷ তা ছাড়া আরবে এই মুহূর্তে বিপুল সংখ্যক দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর বাস। বৈচিত্র্যময় জাতিবিন্যাস। তাঁরা ভারত-পাক উত্তেজনা নিয়ে বিভিন্ন ধাঁচের মতামত পোষণ করেন। ফলে এই অবস্থায় দুবাইভূমিতে পিএসএল অনুষ্ঠিত হলে নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পড়বে৷
প্রসঙ্গত, ভারত-পাক সংঘাতের আবহে আইপিএল (IPL 2025) আপাতত স্থগিত। যদিও আজ সকালেই আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যুদ্ধাকালীন তৎপরতায় পিএসএলের (PSL 2025) বাদ বাকি সমস্ত ম্যাচ সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে (UAE) সরানোর সিদ্ধান্ত নেয় পাক ক্রিকেট বোর্ড (PCB)। পিসিবির তরফে জারি করা বিবৃতিতে জানানো হয়, পাকিস্তান সুপার লিগের (PSL) আটটি ম্যাচ আরবে আয়োজিত হবে। সেই সমস্ত ম্যাচের ভেন্যু ও সময় পরে ঘোষণা করার আশ্বাসও দেয় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড। উল্লেখ্য, গতকাল রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়াম (Rawalpindi Stadium) ও তার চারপাশ ড্রোন হামলায় (Drone Attack) ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভেঙে পড়ে মাঠের একাংশ। ধসে যায় একটি রেস্তরাঁও। আহত হন তিন জন স্থানীয় বাসিন্দা। কালকেই রাত আটটা নাগাদ পেশোয়ার জলমি ও করাচি কিংসের খেলা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই হামলার জেরে সেই ম্যাচ বাতিল করা হয়।
এই পরিস্থিতির আঁচ পড়ে দু’দেশের ক্রিকেট ময়দানে। একদিকে ধর্মশালায় বন্ধ করে দেওয়া হয় পাঞ্জাব কিংস বনাম দিল্লি ক্যাপিটালসের ম্যাচ। অন্যদিকে দুই দেশের সংঘাতময় পরিস্থিতিতে বিদেশের বেশ কয়েক জন ক্রিকেটার, বিশেষ করে ইংল্যান্ডের খেলোয়াড়দের বড় অংশ যারা পিএসএল খেলছেন, তাঁরা পাকিস্তান ছেড়ে নিজেদের দেশে ফিরে যাওয়ার তোড়জোড় শুরু করেন। তখনই লিগের ভবিষ্যৎ বাঁচাতে এগিয়ে আসে পিসিবি। চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি জানান, রাওয়ালপিন্ডিতে ড্রোন আঘাত হেনেছে ভারতই। এই অবস্থায় নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে পিএসএল চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।
যদিও নাকভির অভিযোগ নস্যাৎ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, রাওয়ালপিন্ডিতে ড্রোন হামলা ভারত করেনি। বুধবার পাক সেনা ভারতের ১৫টি আলাদা আলাদা জায়গা টার্গেট করায় পালটা আঘাত করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু নিশানা ছিল পাকিস্তানের বায়ুসেনার বেশ কিছু ঘাঁটি। কোনও শহরে প্রত্যাঘাত করা হয়নি। যদিও আর কথা না বাড়িয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে আরবে বাদবাকি ম্যাচ সরানোর ব্যবস্থা করে পাক ক্রিকেট বোর্ড। বিদেশি ক্রিকেটারদের সুরক্ষা ও খেলোয়াড়দের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত বলে পিসিবি সূত্রে জানানো হয়। আপাতত আরবের অসহযোগিতাই যাবতীয় উদ্যোগ বিশ বাঁও জলে।