সার্জেনের বক্তব্য, ঋষভ সামারসল্টে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জিমনাস্ট হলেও এই কসরত অহেতুক বিপদ ডেকে আনতে পারে।
ঋষভ পন্থ
শেষ আপডেট: 30 June 2025 08:46
দ্য ওয়াল ব্যুরো: তিন বছর আগে হাড়কাঁপানো শীতের রাতে যখন ঋষভ পন্থকে মারাত্মক জখম অবস্থায় মুম্বইয়ের একটি বেসরকারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়, তখন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসককে তাঁর প্রথম প্রশ্নই ছিল, ‘আমি কি আবার খেলতে পারব?’
একটা দুর্ঘটনা, ‘মর্মান্তিক’ বিশেষণটা জুড়লেও যার প্রাবল্য ঠিকমতো বোঝানো অসম্ভব, প্রাণে বাঁচবেন কি না ঠিক নেই, প্রাণে বাঁচলেও হাঁটতে পারবেন কি না অনিশ্চিত—সেই পরিস্থিতিতে খেলতে পারা-না পারা ঋষভের কাছে জীবনমরণের সমস্যার চেয়েও জোরালো ও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দেখা দেয়।
ক্রিকেট দেবতা কোনওকালেই পুরোপুরি সদয় হননি। কেরিয়ারে এই আলো, এই অন্ধকার। এই সাফল্য, এই ব্যর্থতা। ঋষভ পন্থের ক্রিকেটজীবন বরাবর বন্ধুর, খেলোয়াড়ভাগ্য অস্থির। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বর, নতুন বছরে পা রাখার দু’দিন আগে দিল্লি থেকে রুরকি যাওয়ার পথে দুর্ঘটনা! গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মেরে উলটে পড়ে। শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মারাত্মকভাবে আঘাত পান ঋষভ। তড়িঘড়ি হাসপাতালে আনা হয়। অর্থোপেডিক সার্জেন ডা. দীনশ পার্দিওয়ালা ছিলেন অপারেশনের দায়িত্বে।
তাঁর নজরদারি ও তত্ত্বাবধানে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ঋষভ। ফিরেছেন স্বাভাবিক জীবনের স্রোতে, ক্রিকেটের ময়দানে। জাতীয় দলের জার্সিতে আপাতত তিনি ইংল্যান্ডে। প্রথম টেস্টে করেছেন জোড়া সেঞ্চুরি, যে রেকর্ড ভারতের আর কোনও ক্রিকেটারের নেই। চোখধাঁধানো ইনিংসে যেমন নজর কেড়েছেন, তেমনই রংচঙে সামারসল্টে উচ্ছ্বাস দেখিয়ে অনুরাগীদের চর্চায় ঋষভ।
যদিও ডিগবাজির ভেল্কিতে সায় নেই দীনশ পার্দিওয়ালার। সার্জেনের বক্তব্য, ঋষভ সামারসল্টে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জিমনাস্ট হলেও এই কসরত অহেতুক বিপদ ডেকে আনতে পারে। তিনি বলেন, ‘ঋষভ পন্থ দেখতে মোটাসোটা হলেও আদতে বেশ চটপটে। তা ছাড়া নমনীয়ও বটে। আর এই কারণে ইদানীং ও বারকয়েক সামারসল্ট দেখিয়েছে। এটা ভালভাবে প্র্যাকটিসের পর নিখুঁতভাবে পেশ করলেও অহেতুক ঝুঁকি!’
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৬ জানুয়ারি গাড়ি দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ঋষভ। দীর্ঘ চার ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারে হাঁটুর তিনটি লিগামেন্ট সারাই ও টেন্ডন ও মেনিস্কাস মেরামত করা হয়। তবু অপারেশন শেষে অনেক সপ্তাহ বিছানায় পড়েছিলেন ঋষভ। হাতদুটো এতটাই ফুলে গিয়েছিল যে নিজে দাঁতও মাজতে পারতেন না। তারপর ধীরে ধীরে জল নিজের হাতে খাওয়া শুরু। এক পা-দু’পা ক্রাচে ভর দিয়ে হাঁটা। সবশেষে চার মাস বাদে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়ানো, চলাফেরা!
ঋষভ চলেছেন, ফিরেছেন, মাঠে নেমেছেন, সেঞ্চুরি করেছেন। হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যাত্রাপথের পরের অধ্যায় লেখা হয়েছে বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। দীর্ঘ এক বছরের কষ্টসাধ্য রিহ্যাবিলেশন। যার ফলশ্রুতি ধাপে ধাপে স্বাভাবিকতা ফিরে আসা, জীবনের মূল স্রোতে প্রত্যাবর্তন।