শেষ আপডেট: 15th October 2024 20:15
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কে জাগে রে? বাঙালির রাত জাগার রাত। নিশুতি রাতে তিনি সদর দরজায় উঁকি দিয়ে দেখবেন, কোন ঘরে দীপ জ্বলে আছে। আলপনার পাদপদ্মে পা রেখে তিনি সেই ঘরে আপনি বাঁধা পড়বেন। ঘরে আসবে শ্রী, ধন-সৌভাগ্য, শান্তি-সমৃদ্ধি। ‘লক্ষ্মী মানে শ্রী, সুরুচি। লক্ষ্মী সম্পদ আর সৌন্দর্যের দেবী। বৈদিক যুগে মহাশক্তি হিসেবে তাঁকে পুজো করা হতো। তবে পরবর্তীকালে ধনশক্তির মূর্তি নারায়ণের সঙ্গে তাঁকে জুড়ে দেওয়া হয়,’—বলছেন নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ী। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘বাংলার ব্রত’ বইতে এই লক্ষ্মীপুজো সম্পর্কে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। সেখানে তিনি জানান, দেবীর কাছে ভালো ফলনের কামনা করাই আসলে এই পুজোর নৃতাত্ত্বিক কারণ।
পুজো বা ব্রতকথার সঙ্গে আলপনার একটি সম্পর্ক রয়েছে। আলপনা আসলে ‘কামনার প্রতিচ্ছবি।’ নীহাররঞ্জন রায় তাঁর ‘বাঙ্গালীর ইতিহাস’-গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমাদের লক্ষ্মীর পৃথক মূর্তিপূজা খুব সুপ্রচলিত নয়।…আমাদের লোকধর্মে লক্ষ্মীর আর একটি পরিচয় আমরা জানি এবং তাঁহার পূজা বাঙালী সমাজে নারীদের মধ্যে বহুল প্রচলিত। এই লক্ষ্মী কৃষি সমাজের মানস-কল্পনার সৃষ্টি; শস্য-প্রাচুর্যের এবং সমৃদ্ধির তিনি দেবী। এই লক্ষ্মীর পূজা ঘটলক্ষ্মী বা ধান্যশীর্ষপূর্ণ চিত্রাঙ্কিত ঘটের পূজা…। বাঙালী হিন্দুর ঘরে ঘরে নারীসমাজে সে পূজা আজও অব্যাহত। বস্তুত, দ্বাদশ শতক পর্যন্ত শারদীয়া কোজাগর উৎসবের সঙ্গে লক্ষ্মীদেবীর পূজার কোনও সম্পর্কই ছিল না।’
ধন ও সৌভাগ্যের দেবী মা লক্ষ্মী। অবাঙালিদের মধ্যে লক্ষ্মীপুজোর রেওয়াজ কালীপুজো বা দিওয়ালির দিনে। কিন্তু বাঙালির ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী পূজিতা হন দেবীপক্ষের শেষের এই পূর্ণিমাতে। পশ্চিমবঙ্গে এবং বাংলাদেশে কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর চল রয়েছে। তবে আচারে-রীতিতে যথেষ্ট ফারাক রয়েছে দুই বাংলার। পশ্চিমবঙ্গে পুজো হয় মূলত মাটির প্রতিমায়, কিন্তু বাংলাদেশে প্রধানত সরায় আঁকা লক্ষ্মীর পুজো হয়।
লক্ষ্মীর উৎপত্তি বৈদিক শাস্ত্র ও বিভিন্ন পুরাণ অনুসারে লক্ষ্মীর উদ্ভব ও পরিচিতি নিয়ে নানা রকম ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। কিছু পুরাণ অনুযায়ী লক্ষ্মী দেবসেনা রূপে জন্ম নিয়ে কার্তিকেয়র পত্নী হন। আবার কিছু পুরাণ মতে তিনি গণেশপত্নী। নদীরূপিনী সরস্বতীই আদিতে উর্বরতা ও শস্যদায়িনী দেবী। পরে লক্ষ্মী-সরস্বতী একইরূপে গণ্য হওয়ার সময় থেকে শস্য ও সম্পদের দেবী হিসেবে লক্ষ্মীকে গণ্য করা আরম্ভ হয়। আবার শস্যের দেবী হিসেবে গণ্য হওয়ার কারণে লক্ষ্মীকে ধরিত্রী বা বসুমতী হিসেবেও ভাবা শুরু হয়।
বৈদিক লক্ষ্মী কিন্তু শস্য-সম্পদের দেবী ছিলেন না। বরং নদীরূপিনী সরস্বতী শস্যদাত্রী হিসেবে গণ্য হতেন। কেন? নদী পলি মাটি ভরাট করে উর্বর করত ভূ-তট। এর পরে তো বৈদিক আর্যরা চাষাবাদ শিখল ‘নিম্নবর্গ’-এর কাছে। সম্পদ এলো আর্যদের হাতে। শাসক বা শোষক হলেন তাঁরা। অন্য মতে, দক্ষযজ্ঞের প্রাক্কালে পিতৃগৃহে যেতে বদ্ধপরিকর ছিলেন সতী। আর মহাদেব বদ্ধপরিকর তাঁকে আটকাতে। বাধ্য হয়েই আঙুল বাঁকাতে হল মহামায়াকে। অনুমতি পেলেন “দশমহাবিদ্যা” অর্থাৎ নিজের প্রধান দশটি রূপ— কালী, তারা, ষোড়শী, ভৈরবী, ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা, ধূমাবতী, বগলামুখী, মাতঙ্গী এবং কমলার বেশে স্বামীকে ভয় দেখিয়ে। দেবী মহালক্ষ্মীই হলেন এই শেষ মহাবিদ্যা কমলা। সঙ্গে দুটি হাতি থাকার কারণে দেবীকে ‘গজলক্ষ্মী’ নামেও ডাকা হয়ে থাকে।
শাস্ত্রমতে, তাঁর পিতা ভৃগু ও মাতা খ্যাতি। সঙ্গী বা স্বামী হলেন পালনকর্তা বিষ্ণু। পরমপদম পুরাণ অনুসারে, দেবী মহালক্ষ্মী লক্ষ্মী, ভূদেবী (ধরিত্রী দেবী) এবং নীলাদেবী— এই তিন রূপে বিভক্ত হয়ে ভগবান বিষ্ণুর দুপাশে অবস্থান করেন। এঁদের মধ্যে নীলাদেবী বয়সে স্বামীর চেয়েও বড়। ফলে তিনি বিষ্ণুর তৃতীয়া স্ত্রী হয়েও তাঁর ডানপাশে অবস্থান করেন। অন্যদিকে ভূদেবী এবং লক্ষ্মী থাকেন যথাক্রমে বাঁ পাশে এবং সামনে।
বেদ–পুরাণ ঘাঁটলে শ্রী–লক্ষ্মীর দুই ছেলের সন্ধান মেলে। চিক্লীত ও কর্দম। ‘চিক্লীত’ মানে ‘আর্দ্রতা’ আর ‘কর্দম’ হল ‘কাদা’। দুটোই কৃষি সভ্যতার বিকাশের প্রতীক। একবার রম্ভায় আসক্ত ইন্দ্র দুর্বাসা মুনিকে ‘অপমান’ করেন। তখন দুর্বাসার অভিশাপে লক্ষ্মীর হল নির্বাসন। দোষ করলেন ইন্দ্র, শাস্তি পেতে হবে লক্ষ্মীকে! অভিশাপে ইন্দ্রের ইন্দ্রপুরী হলো শ্রীহীন। স্ত্রী লক্ষ্মী, ইন্দ্রের অনুমতি নিয়ে পাতালে, মানে সমুদ্রে প্রবেশ করলেন।
ইন্দ্র আর কী করেন? বিষ্ণুর করুণা পেতে শুরু করলেন কঠোর তপস্যা। বিষ্ণু সন্তুষ্ট হয়ে লক্ষ্মীকে বললেন, সিন্ধুর কন্যা হয়ে জন্ম নিতে। সেই কথা মেনে লক্ষ্মী সাগরে গিয়ে সমুদ্র–কন্যা রূপে জন্মালেন। সমুদ্রমন্থনের সময় কামধেনু থেকে ঐরাবত, রম্ভা থেকে মেনকা, সবাইকে ফিরে পেলেন ইন্দ্র, সমুদ্রগর্ভ থেকে উঠে এলেন লক্ষ্মীও। তিনি পুনরায় বিষ্ণুর বক্ষলগ্না হলেন। শ্রী ফিরে পেল স্বর্গ, মর্ত্যও। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণের দৃষ্টিকোণ থেকে শ্রী আর লক্ষ্মী অভিন্ন। এই জায়গাটাতেই রামায়ণ–মহাভারত অন্য কথা বলছে। শ্রী নাকি লক্ষ্মী নন। আলাদা দেবী। তিনি সাদা কাপড় পরে সমুদ্র থেকে উঠে এসেছিলেন। তাঁকে পাওয়া নিয়ে দেবতা আর অসুরদের মধ্যে যুদ্ধও হয়েছিল। এই শ্রী সুখ–সমৃদ্ধির দেবী।
যদিও, মন্থনের পর যিনি উত্থিতা হলেন, তিনি কিন্তু লক্ষ্মী নন। সেই দেবীর নাম শ্রী। এই শ্রী ও লক্ষ্মী দুই পৃথক দেবী ছিলেন। পরে দুজনে মিলেমিশে এক হয়ে যান। তাঁর এক হাতে পদ্ম, আরেক হাতে অমৃতের কলস। তাঁর রূপে-গুণে আকৃষ্ট হয়ে দেব-দানবের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়। শেষ পর্যন্ত ছলেবলে বিষ্ণু তাঁকে পত্নীরূপে গ্রহণ করেন। লক্ষ্মী ও শ্রী একাকার হয়ে বিষ্ণুর পত্নী হন। তিনি পদ্মাসনা আর বাহন শ্বেত পেঁচা। তবে উপপুরাণের অর্বাচীন পৃষ্ঠায় লক্ষ্মী একবার তুলসী, একবার ঘোটকী হয়েও জন্মান। জ্যোৎস্না প্লাবিত এই পৃথিবীর হেমন্তে আসেন শুধু একরাতের অতিথি হয়ে।
আসলে লক্ষ্মী হলেন বাঙালির দেবী। লৌকিক দেবী। আগে আমাদের সমাজে বিশেষ করে গ্রামে দুর্গাপুজো নিয়ে এত মাতামাতি ছিল না। বরং কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোই ছিল বড় উৎসব। মধ্যযুগে বণিকেরা এই পুজো করতেন। ঘোর বর্ষার পর প্রসন্ন শরতে জলপথে বাণিজ্যযাত্রার আগে হত পুজো। মৈমনসিংহ গীতিকার মতো প্রাচীন বাংলা সাহিত্যে লক্ষ্মীপুজোর উল্লেখ দেখে বোঝা যায়, সেকালে এই পুজোর জনপ্রিয়তা কতটা ছিল।
কোথাও কলার বাকলকে গোল করে নারকেলের নতুন কাঠি দিয়ে আটকানো হয়। তাতে সিঁদুর দিয়ে স্বস্তিকা চিহ্ন আঁকা হয়। কলার বাকল দিয়ে তৈরি এই চোঙাকৃতির ভিতরে নিচুনি রাখা হয়। কাঠের আসনের উপরে লক্ষ্মীর পা অঙ্কিত আলপনার উপরে ৯টি চোঙা রাখা হয়। এই ৯টি বাকলের মধ্যে পঞ্চশস্য দেওয়া হয় সর্বশেষে শীষযুক্ত নারকেল রেখে লাল চেলি দিয়ে ঢেকে বউ সাজিয়ে লক্ষ্মী কল্পনা করা হয়। নবপত্রিকা বা কলার পেটোর তৈরি নৌকা এই পুজোর অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই নৌকা এখনও বহু ঘরেই তৈরি হয়ে থাকে। তবে বাজারেও এখন কিনতে পাওয়া যায় কলার পেটো। একে সপ্ততরী বলা হয়। এই তরীকে বাণিজ্যের নৌকা হিসাবে ধরা হয়। তাতে অনেকেই টাকা কিংবা পয়সা, চাল, ডাল, হরিতকি, কড়ি, হলুদ রাখেন। আবার বেতের ছোট চুপড়ি বা ঝুড়িতে ধান ভর্তি করে তার ওপর দুটি কাঠের লম্বা সিঁদুর কৌটো লালচেলি দিয়ে মুড়ে দেবীর রূপ দেওয়া হত। একে বলা হয় ‘আড়ি লক্ষ্মী’।
অনেক বাড়িতেই পূর্ববঙ্গীয় রীতি মেনে সরার পটচিত্রে পুজো করা হয়। এই সরাতে লক্ষ্মী, জয়া-বিজয়া সহ কয়েকটি বিশেষ পুতুলকে চিত্রায়িত করা হয়। লক্ষ্মী সরাও হয় নানা রকম, যেমন ঢাকাই সরা, ফরিদপুরি সরা, সুরেশ্বরী সরা এবং শান্তিপুরী সরা। নদিয়া জেলার তাহেরপুর, নবদ্বীপ এবং উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন স্থানে লক্ষ্মীসরা আঁকা হয়। তবে অঞ্চল ভেদে লক্ষ্মীসরায় তিন, পাঁচ, সাত পুতুল আঁকা হয়। এতে থাকে লক্ষ্মী, জয়া বিজয়া সহ লক্ষ্মী, রাধাকৃষ্ণ, সপরিবার দুর্গা ইত্যাদি। ফরিদপুরের সরায় দেবদেবীরা সাধারণত একটি চৌখুপির মধ্যে থাকেন। আবার সুরেশ্বরী সরায় উপরের অংশে মহিষমর্দিনী আঁকা হয় আর নীচের দিকে থাকেন সবাহন লক্ষ্মী।
লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা কেন? কেউ কেউ বলেন, লক্ষ্মীর দেওয়া ধন যারা অপব্যবহার করে, তাদের কপালে লেখা আছে যমের দণ্ড—এই কথা ঘোষণা করে লক্ষ্মীর বাহন। এছাড়া ধনসম্পত্তি, সে টাকাকড়ি হোক বা সাধনধনই হোক, সদাজাগ্রত অবস্থায় রক্ষা করতে হয়। রাতে সবাই যখন ঘুমায়, তখন পেঁচা জেগে থাকে। পেঁচাই সেই ধনসম্পদ পাহারা দেয়।
ধান হল লক্ষ্মীর প্রতীক। চাল , অন্ন , খাদ্যশস্য হল লক্ষ্মীর প্রতীক। তাই যারা খাদ্য অপচয় করে , তাদের ওপর দেবী লক্ষ্মী কখনোই তুষ্ট হন না। ধানক্ষেতের আশেপাশে ইঁদুর বা মূষিকের বাস এবং এরা ধানের ক্ষতি করে থাকে। পেঁচক বা পেঁচার আহার হল এই ইঁদুর। গোলাঘরকে লক্ষ্মীর প্রতীক বলা হয়। গোলাঘরের আশেপাশে ইঁদুরের বসবাস। পেঁচা এই ইঁদুরকে খেয়ে খাদ্যশস্য রক্ষা করে।
ইতিহাসের পাতায় মুদ্রা আর মূর্তি খুঁজতে বসলে গোড়ায় লক্ষ্মীদেবীর পেচক বাহন কিন্তু মিলবে না।খ্রিস্টপূর্ব ১৫০ থেকে ১০০ অব্দ। কুনিন্দরাজ ছিলেন অমোঘভূতি। হিমালয়ের বুকে ছিল তাঁর রাজ্য। সে সময়ের যে মুদ্রা পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, লক্ষ্মীদেবী বসে আছেন। সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা হরিণ। ৪১৪ থেকে ৪৫৫ খিস্টাব্দ। রাজ করছেন গুপ্ত বংশীয় সম্রাট কুমারগুপ্ত। তাঁর আমলের যেসব মুদ্রা পাওয়া গেছে, তাতে আবার লক্ষ্মীদেবী একটা ময়ূরকে খাওয়াচ্ছেন। অন্য দুই গুপ্ত রাজা, প্রথম চন্দ্রগুপ্ত ও দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের মুদ্রায়, এমনকী কুমারগুপ্তের কিছু কিছু মুদ্রাতে দেখা যাচ্ছে, লক্ষ্মীদেবী সিংহের পিঠে চেপে বসেছেন।
গুপ্তদের পর বাংলার শাসনকর্তা ছিলেন শশাঙ্ক। তাঁর আমলের মুদ্রায় লক্ষ্মীর বাহন হাঁস। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁর বাহন হিসেবে কচ্ছপকে দেখা গেছে। বিষ্ণুর দ্বিতীয় অবতার। আবার কোনও সময় দেখা গেছে, বিষ্ণুর বাহন গরুড় লক্ষ্মীদেবীরও বাহন। কিন্তু শেষমেশ তাঁর বাহন হল পেঁচা। লক্ষ্মীর সঙ্গে তার যোগাযোগ এতটাই ঘনিষ্ঠ যে দেবীর পুজো আমরা দিনের বেলায় করি না। রাতপাখির জন্যই দেবী আমাদের কাছে সান্ধ্যকালে বন্দিতা। এরপর নিশ্চয় বুঝিয়ে বলার দরকার পড়ে না যে লক্ষ্মী আর কৃষি এ বঙ্গে একাকার।
কোজাগরীর রকমফের ছিল দেখার মতো। ছড়া কেটেই মা লক্ষ্মীকে আবাহন করত গৃহস্থ। যেমন— ‘উত্তর আইলের চাউল জলেতে ভিজাইয়া, ধুইয়া মুছিয়া কন্যা লইল বাঁটিয়া। পিটালি করিয়া কন্যা পরথমে আঁকিল, বাপ আর মায়ের চরণ মনে গাঁথা ছিল।’ করজোড়ে বাড়ির নারীরা একসঙ্গে বলতেন, ‘আঁকিলাম পদ দু’টি, তাই মাগো নিই লুটি। দিবারাত পা দু’টি ধরি, বন্দনা করি। আঁকি মাগো আলপনা, এই পূজা এই বন্দনা।’ সব ছড়ার মধ্যেই থাকে বাসনা, অভিমান এবং আকাঙ্ক্ষা। পেঁচা, কড়ি, ধানের গোলা আঁকার সঙ্গে সঙ্গে তাই ছড়া কাটা হতো। ‘আমি আঁকি পিটুলির গোলা, আমার হোক ধানের গোলা। আমি আঁকি পিটুলির বালা, আমার হোক সোনার বালা।’ সেই সঙ্গে থাকে মন শুদ্ধ করার বার্তাও। ‘আঁকিলাম আলপনা, দূরে ফেলি আবর্জনা। শুভ-শুদ্ধ মন নিয়ে, করি তব আরাধনা।’