জগন্নাথদেবের ভোগ দর্শন করলেই নাকি সব দুর্ভোগ দূর হয়। তাই দেশবিদেশ থেকে মানুষ আসেন প্রভুর ভোগের জন্য।
গ্রাফিক্স - দ্য ওয়াল
শেষ আপডেট: 25 June 2025 12:35
স্নানযাত্রার দিন একশো আট কলস জলে স্নান করে জ্বরে কাতর হয়ে পড়েছিলেন প্রভু জগন্নাথ। রাজবৈদ্যের পরামর্শ মতো পাঁচন সেবন করে এখন অনেকটা সুস্থ হয়ে উঠেছেন। এই ক'দিন প্রভুকে দেওয়া হচ্ছে হালকা পথ্য। সামনেই রথযাত্রা। শুরু হয়ে যাবে প্রভুর ছাপ্পনভোগ। জগন্নাথদেবের ভোগ মানে এক এলাহি ব্যাপার।
পাঁচ রকমের ভাত ,পাঁচ রকমের ডাল....
পুরীর শ্রীমন্দিরে সারাটা দিন চলে রন্ধন-যজ্ঞ। প্রভুর পছন্দের কতরকম যে পদ রান্না হতে থাকে দিনভর, তার ইয়ত্তা নেই। মূলত দু'ধরনের ভোগ তৈরি হয়। একদিকে ভাত, ডাল, তরিতরকারি, পায়েস, অন্যদিকে মুড়ি, মুড়কি, খই ও নানা ধরনের মিষ্টি। খাজা, গজা জাতীয় শুকনো মিষ্টি। পাশাপাশি থাকে চার পাঁচ রকমের মালপোয়া। পাঁচরকমের ভাত ,পাঁচ রকমের ডাল, শুক্তো, সবরকম সবজি দিয়ে তরকারি, বেগুনের মরিচপানি , নারকেল বাটা দিয়ে অনেকরকম চাটনি ,পরমান্নও কয়েক ধরনের। এত্তো আয়োজন করতে চারশো রাঁধুনি তো লাগবেই। সাতশো বাহান্নটা উনুনে রোজ রান্না হয়।
প্রভুর ভোগ রান্নার পদ্ধতিও অদ্ভুত
সকাল থেকে জ্বলে সাতশো বাহান্নটা উনুন। প্রতিটা উনুনে সাতটা করে মাটির হাঁড়ি পরপর বসিয়ে দেওয়া হয়। আর আশ্চর্যের বিষয়, সবচেয়ে ওপরের হাঁড়িটার রান্না আগে তৈরি হয়ে যায়। শুক্তো থেকে তরিতরকারি, কোনওটাই তেলে ভেজে বা কড়ায় কষে রান্না করা হয় না। এমনকী প্রভুর ভোগে কোনও রকম তেল চিনি ব্যবহার করা হয় না। জলে সবজি, মশলা সব মাটির হাঁড়িতে দিয়ে বসিয়ে দেওয়া হয়। তেলের বদলে ঘি ও চিনির বদলে গুড় দেওয়া হয় রান্নায়। তাতেই প্রভুর ভোগ হয়ে ওঠে অমৃত।
সব সবজি কিন্তু প্রভু গ্রহণ করেন না। শুনলে অবাক লাগবে, জগন্নাথদেব আলু, পেঁপে, কাঁচালঙ্কা খান না। টমেটো ও বেশ কয়েকরকম শাকও প্রভু মুখে তোলেন না। তাই ছাপ্পান্ন পদের কোনও কিছুতে এইসব সবজি থাকে না। যাই হোক দেবতার দন্তমঞ্জনের পর থেকে চলতে থাকে ভোগ নিবেদনের পালা । মধ্যরাতে ডাবের জল খেয়ে প্রভু শয়ন করেন।
ভোগ কখনও কম পড়ে না, বাড়তিও হয় না!
জগন্নাথদেবের ভোগ দর্শন করলেই নাকি সব দুর্ভোগ দূর হয়। তাই দেশবিদেশ থেকে মানুষ আসেন প্রভুর ভোগের জন্য। রোজ হাজার হাজার ভক্ত ভোগ গ্রহণ করেন। আশ্চর্যের ব্যাপার, আজ পর্যন্ত কখনও ভোগ কম পড়েনি বা বাড়তিও থাকেনি। প্রভু জগন্নাথের এমনই লীলা।