শেষ আপডেট: 11th March 2025 23:26
দ্য ওয়াল ব্যুরো: দোলপূর্ণিমার আগের রাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে হোলিকা দহন হয়। যা বাংলায় 'ন্যাড়া পোড়া' নামে পরিচিত। ওই যে আজ আমাদের ন্যাড়া পোড়া, কাল আমাদের দোল। ন্যাড়া পোড়া বা চাঁচর পোড়া অনেক জায়গা হয়ে থাকলেও এর পিছনে পৌরাণিক কী কাহিনি রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। কেনই বা ন্যাড়া পোড়া হয়, তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বহু মানুষের মনে। হোলিকা দহন বা ন্যাড়া পোড়ার পিছনে রয়েছে লম্বা গল্প।
কথিত আছে, রাক্ষস রাজা হিরণ্যকশিপু ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমতাশালী ও দাম্ভিক। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের সমান মনে করতেন। কঠোর তপস্যার ফলে ভগবান ব্রহ্মা তাকে এক বিশেষ বর প্রদান করেন, যার ফলে কোনও মানুষ বা প্রাণী তাকে বধ করতে পারবে না। তার মৃত্যু ঘরের ভেতরেও হবে না, বাইরেও হবে না। দিনেও হবে না, রাতেও হবে না। কোনও অস্ত্র দিয়ে তাকে মারা যাবে না। জল, স্থল বা আকাশ—কোনও স্থানেই তার মৃত্যু হবে না। এই বর পাওয়ার পর হিরণ্যকশিপু আরও অত্যাচারী হয়ে ওঠেন।
হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহ্লাদ ছিলেন শ্রী বিষ্ণুর পরম ভক্ত। কিন্তু তার পুত্রের ঈশ্বরভক্তি কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না হিরণ্যকশিপু। তিনি নানাভাবে প্রহ্লাদকে কষ্ট দিতে থাকেন, কিন্তু প্রতিবারই শ্রী হরির কৃপায় প্রহ্লাদ রক্ষা পান। অবশেষে, তিনি প্রহ্লাদকে আগুনে পুড়িয়ে মারার পরিকল্পনা করেন। এই ষড়যন্ত্রে সাহায্য করেন তার বোন হোলিকা।
হোলিকার কাছে ছিল একটি জাদুকরী গায়ে দেওয়ার শাল, যা ভগবান ব্রহ্মার আশীর্বাদে তাকে আগুন থেকে রক্ষা করত। পরিকল্পনা অনুযায়ী, হোলিকা প্রহ্লাদকে কোলে নিয়ে আগুনে বসেন, ধারণা ছিল প্রহ্লাদ পুড়ে যাবে, কিন্তু হোলিকার ওই শালটির জন্য কিছুই হবে না।
ঘটে যায় উল্টোটা। আগুনের মধ্যে প্রবেশ করা মাত্র শালটি হোলিকার শরীর থেকে উড়ে গিয়ে প্রহ্লাদের গায়ে পড়ে। ফলে হোলিকা আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়, কিন্তু ভক্ত প্রহ্লাদ শ্রী বিষ্ণুর কৃপায় সম্পূর্ণ অক্ষত থাকেন।
এই ঘটনা থেকেই নাকি অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির বিজয়ের প্রতীক হিসেবে হোলিকা দহনের প্রথা শুরু হয়।
বিশ্বাস করা হয়, পাঞ্জাবের মুলতান অঞ্চলের প্রহ্লাদপুরী মন্দিরে প্রথম হোলিকা দহন উদযাপিত হয়েছিল। কিছু বিশেষ অঞ্চলে শবর উপজাতিরা চাঁচর পোড়ানোর মাধ্যমে এই উৎসবে সামিল হন।
হোলিকা দহন মূলত অশুভ শক্তির বিনাশ এবং শুভ শক্তির উদয়ের প্রতীক। তাই ভিন্ন নামে হলেও, দেশের সর্বত্র এই রীতি ধর্মীয় নিষ্ঠা ও উৎসাহের সঙ্গে পালন করা হয়।