শেষ আপডেট: 3rd October 2022 11:29
দ্য ওয়াল ব্যুরো: সন্ধিপুজো দুর্গাপুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। প্রতিবছর মহাষ্টমী আর মহানবমী, দুই তিথির সন্ধিক্ষণে এই পূজা অনুষ্ঠিত হয় বলে একে ‘সন্ধিপূজা’ নামে অভিহিত করা হয়। মনে করা হয়, এই সময়েই দেবী দুর্গা চামুণ্ডার রূপ ধরে চন্ড ও মুন্ড নামে দুই ভয়ঙ্কর অসুরকে নিধন করেছিলেন। মহাষ্টমীর এক দণ্ড এবং মহানবমীর এক দণ্ড, এই আটচল্লিশ মিনিটে দেবী দুর্গার বদলে পূজা পান তাঁরই অঙ্গজাত ভয়ংকরী দেবী চামুণ্ডা। (Devi Chamunda)
বেদের সপ্তমাতৃকাই কালক্রমে পৌরাণিক শক্তি হয়েছেন, এই সপ্তমাতৃকার মধ্যেই দেবী চামুণ্ডা অন্যতমা। দেবী চামুণ্ডা আর কালীকে এক করে দেখানো হয়েছে দেবীমাহাত্ম্যমে। দেবী পার্বতীর অঙ্গজাত দেবী কৌশিকী বা দুর্গার ভ্রুকুটিকুটিল রাগি কপাল থেকে কালীর আবির্ভাব হয়। অসুররাজ শুম্ভ ও নিশুম্ভের দুই অত্যাচারী সেনানায়ক চণ্ড আর মুণ্ডকে মারার দায়িত্ব দেবী দুর্গা তুলে দেন দেবী কালীর হাতে। সেই দুই দৈত্যের সঙ্গে প্রচণ্ড যুদ্ধে লিপ্ত হন সেই ঘোররূপা দেবী এবং শেষ পর্যন্ত তাদের বধ করেন। এরপর তিনি নিহত দুই অসুরের ছিন্ন মুণ্ড দেবী কৌশিকীর কাছে নিয়ে গেলে তিনি অত্যন্ত আনন্দিত হন এবং চণ্ড ও মুণ্ড বধের ফলে দেবী কালীর নাম হয় চামুণ্ডা (Devi Chamunda)।
আবার বরাহ পুরাণ অনুসারে, মাতৃকারা একে অন্যের দেহ থেকে উৎপন্ন হয়েছিলেন। চামুণ্ডা উৎপন্ন হন দেবী নারসিংহীর পা থেকে। এই দেবী ভয়ংকরী। রক্তবীজ নামক এক দানবের রক্তপান করায় তাঁর গায়ের রং টকটকে লাল।
দেবী চামুণ্ডার (Devi Chamunda) রূপ অতি ভীষণ। তাঁর গায়ের রঙ নিকষ কালো (বা লাল)। তিনি ত্রিনয়না, কঙ্কালসার দেহ। তাঁর ভয়াল মুখমণ্ডলে দপদপ করে রক্তবর্ণের তিনটি কোটরাগত চোখ, মুখের সামনে বিরাট বিরাট দাঁতের পংক্তি। দেবী দীর্ঘ নখর ও স্ফীত উদর যুক্তা, নরমুণ্ডমালা শোভিতা। বর্ণনাভেদে চার, আট, দশ বা দ্বাদশভূজা। দেবীর হাতে থাকে ডমরু, ত্রিশূল, খড়্গ, সর্প, খট্বাঙ্গ, বজ্র, ছিন্নমুণ্ড ও রক্তে ভরা পাত্র। শব অথবা প্রেতের উপর দাঁড়িয়ে থাকেন দেবী। তিনি অস্থি, কঙ্কাল, সাপ আর বিছের অলংকারে ভূষিতা, যা ব্যাধি ও মৃত্যুর প্রতীক। নরকরোটির যজ্ঞোপবীত ধারিণী; মাথায় জটার মুকুট, সেই চুলের জঙ্গলে আটকে আছে আধখানা চাঁদ।
ভূত ও প্রেতের দল দেবীর সঙ্গী। বিভিন্ন বর্ণনায় নরকঙ্কাল ও শৃগাল প্রভৃতি পশু বেষ্টন করে থাকে দেবীকে। যে শবের উপর দেবী উপবিষ্ট থাকেন, শৃগালের দল সেই শবের মাংস ভক্ষণ করে। চামুণ্ডা তাঁর পরাজিত শত্রুদের রক্ত পান করেন।
জৈনধর্মেও চামুণ্ডার পূজা প্রচলিত আছে। তবে জৈনরা হিন্দুদের মতো মদ-মাংস দিয়ে দেবীর পুজো করেন না। বদলে নিরামিষ নৈবেদ্য নিবেদন করেন দেবীর পূজায়। রামকৃষ্ণ ভাণ্ডারকরের মতে, চামুণ্ডা প্রকৃতপক্ষে মধ্যভারতের বিন্ধ্য অঞ্চলের অরণ্যচারী উপজাতি সমাজে পূজিত দেবী। এইসব উপজাতিদের মধ্যে চামুণ্ডার উদ্দেশ্যে পশু ও নরবলি প্রদান এবং মদ উৎসর্গের প্রথা বিদ্যমান ছিল।