শাক্ত মতে তন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রতিষ্ঠান তারাপীঠ। আর যে কারণে তারাপীঠ আলাদা তা হল এটাই একমাত্র কালীমন্দির যেখান থেকে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার দিন তারা মায়ের রথযাত্রা হয়।
তারাপীঠ
শেষ আপডেট: 27 June 2025 04:56
উড়িয়ে ধ্বজা অভ্রভেদী রথে
ওই যে তিনি ওই যে বাহির পথে ....
বছরে এই একটা দিনই মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে পথে বের হন তিনি। তিনি তারাপীঠের তারা মা। আষাঢ় মাসে পুরীর জগন্নাথদেব যখন সেজেগুজে রথে চড়ে মাসির বাড়ি যান, ঠিক তখনই বীরভূমে তারা মায়ের মন্দিরেও শুরু হযে যায় আয়োজন। অবশ্য সেবায়েতরা তোড়জোড় শুরু করে দেন সকাল থেকেই। বিকেলে রথে চেপে তারা মা নগর পরিক্রমায় বেরোবেন যে।
•বামদেবের সময় থেকেই কি চলছে মা তারার রথযাত্রা ?
বীরভূমের তারাপীঠ মন্দির প্রায় দু'শো বছরের পুরনো। শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় সারা ভারতেই শাক্তপীঠ হিসেবে এই মন্দিরের বিশেষ গুরুত্ব আছে। তারাপীঠ সাধক বামাখ্যাপার সাধনক্ষেত্র তো বটেই ,তবে এমন কোনও সাধক নেই যিনি সাধন জীবনের কিছুটা সময় তারাপীঠে কাটাননি। বলা যায় শাক্ত মতে তন্ত্রচর্চার অন্যতম প্রতিষ্ঠান তারাপীঠ। আর যে কারণে তারাপীঠ আলাদা তা হল এটাই একমাত্র কালীমন্দির যেখান থেকে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার দিন তারা মায়ের রথযাত্রা হয়।
মা তারার এই রথ পরিভ্রমণ কবে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে অনেক রকম মত আছে। কেউ বিশ্বাস করেন সাধক বামাখ্যাপার আমল থেকেই এই রথযাত্রা শুরু হয়েছিল। আবার অনেকের মতে সাধক দ্বিতীয় আনন্দনাথের সময়েই মা তারার রথযাত্রা শুরু হয়েছিল। তিনিই মায়ের জন্য সতেরো ফুট উচ্চতার পেতলের রথ তৈরি করান।
আজও সেই পিতলের রথ সযত্নে রেখেছেন সেবায়েতরা। সেই রথে চড়েই আজও নগর পরিক্রমা করেন মহামায়া। প্রতি বছর রথে আসীন মা তারাকে দেখার জন্য ভক্তদের উন্মাদনা থাকে চোখে পড়ার মতো।
•প্যাঁড়া বাতাসা লুঠ দেওয়া হয় মায়ের রথ থেকে
এখন কীভাবে পালন করা হয় তারা মায়ের রথযাত্রা, এই প্রসঙ্গে কথা হচ্ছিল তারাপীঠ মন্দিরের অন্যতম সেবায়েত সজলকুমার ভট্টচার্যর সঙ্গে। সজলবাবু জানালেন, 'যদিও বহু বছর ধরে জগন্নাথদেবের রথযাত্রার দিন তারা মায়ের রথ পরিক্রমা হয় কিন্তু এখনও অনেক ভক্তই এই খবর রাখেন না। তবে যাঁরা জানেন তাঁরা দুপুর থেকেই চলে আসেন মায়ের মন্দিরের সামনে। আসলে গর্ভগৃহে ভিড়ের মধ্যে মাকে দর্শন করা, আর পথে রথে বসা সালঙ্কারা মাকে দেখার মধ্যে আকাশ পাতাল তফাত।
রথের দিন দুপুরে ভোগ দেওয়ার পর বিশেষ আরতি হয় তারা মায়ের। তারপর বেনারসি শাড়ি আর সোনার গয়নাগাঁটিতে সেজে চড়ে বসেন সুসজ্জিত রথে। মাকে রাজবেশে রানির মতো দেখায়। এমন রূপে মা তারাকে দেখে ভক্তরা ভাবাবেগে বিহ্বল হয়ে জয়ধ্বনি দিতে থাকেন। ভক্তদের মাঝখান দিয়ে মায়ের রথ চলতে থাকে। প্রথমে মা নিজের মন্দির প্রদক্ষিণ করেন।তারপর নগর ভ্রমণ করে সন্ধেবেলা ফিরে আসেন মন্দিরের সামনে।
সজলবাবু আরও জানালেন, ভক্তরা রথেই মাকে পুজো দিতে পারবেন। আর পূজারীরা রথ থেকে বিতরণ করতে থাকেন প্যাঁড়া আর বাতাসা প্রসাদ। শেষে হরির লুঠের মতো লুঠ দেওয়া হয় বাতাসা। ভক্তরা পরম আগ্রহে কুড়িয়ে নেন মায়ের প্রসাদ। তাঁরা বিশ্বাস করেন, এই প্রসাদ খেলে চলার পথের সব বাধাবিপত্তি কেটে যায়, জীবনের রথ চলে গড়গড়িয়ে।