পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট দশটি দেশ, যাদের ‘স্বাধীন রাষ্ট্র’ ভাবতেই অবাক লাগে
(১০) মাল্টা (৩১৬ বর্গকিলোমিটার)
অনেকগুলি দ্বীপের সমষ্টি এই মাল্টা। যেগুলির মধ্যে মাত্র তিনটি দ্বীপে মানুষ বাস করে। এই ছোট্ট দেশটিতে বাস করেন প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত মাল্টা ছিল ব্রিটিশ কলোনি। বর্তমানে স্বাধীন। পর্যটনশিল্প হল দ্বীপরাষ্ট্রটির আয়ের একমাত্র পথ।
(৯) মালদ্বীপ (২৯৮ বর্গ কিলোমিটার)
ভারত মহাসাগরর এই দেশটি প্রায় হাজারের বেশি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। এটি হল পৃথিবীর সবচেয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা দেশ। সব দ্বীপগুলিকে এক করতে আয়তন হবে যা ছড়িয়ে আছে ৯০ হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকায়। ব্রিটিশের আওতায় থাকলেও ১৯৬৫ সালে দ্বীপ রাষ্ট্রটি স্বাধীন হয়। অসামান্য সুন্দর কিছু সৈকত দেশটির মূল উপার্জন করে পর্যটন থেকে। ২০০৪ সালের সুনামিতে ক্ষতি হয়েছিল।
(৮) সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস (২৬৯ বর্গ কিলোমিটার)
ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের মাঝে দুটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত এই রাষ্ট্র। যা সেন্ট কিটস নামেই বেশি পরিচিত। আমেরিকা মহাদেশের সবচেয়ে ছোট স্বাধীন রাষ্ট্র এই সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস। ষোড়শ শতাব্দীতে ফরাসি ও ব্রিটিশ কলোনি হয়ে গিয়েছিল। তার আগে দ্বীপদুটিতে বাস করত আমেরিকার উপজাতিরা। স্বাধীন হওয়ার পরেও ব্রিটিশ কমনওয়েলথভুক্ত হওয়ায় দেশটির প্রধান ইংল্যান্ডের রানী এলিজাবেথ। দেশটি আয় করে আখ চাষ থেকে। এছাড়াও আয় আসে পর্যটন শিল্প থেকে।
(৭). মার্শাল দ্বীপপুঞ্জ (১৮১ বর্গ কিলোমিটার)
উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরে অবস্থিত এই দ্বীপরাষ্ট্রের জনসংখ্যা ৬৮ হাজার। মাত্র ৭০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের দেশটিতে বাস করেন মাইক্রোনেশিয়ানরা। ষোড়শ শতাব্দীতে ইউরোপীয়রা দেশটি শাসন করত। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় দেশটিতে হানা দিয়েছিল জাপান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকা শাসনে ছিল দেশটি। স্বাধীনতা পেয়েছিল ১৯৭৯ সালে। আমেরিকা ৬৭ টি পরমাণুবোমা পরীক্ষা করেছিল এই দেশের ঘাঁটি থেকে। বর্তমানে দেশটি মূল উপার্জন আসে সমুদ্রে টুনা মাছ ধরা থেকে।
(৬). লিচেনস্টাইন (১৬০ বর্গকিলোমিটার)
মধ্যযুগ থেকেই স্বাধীনতা ভোগ করছে আল্পসের কোলে লুকিয়ে রাষ্ট্র লিচেনস্টাইন। সুইৎজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ার সঙ্গে সীমানা আছে দেশটির। পৃথিবীর অন্যতম ধনী রাষ্ট্র এই লিচেনস্টাইন। মূল উপার্জন আসে দেশের ব্যাঙ্কগুলি থেকে। সারা বিশ্বের মানুষরা টাকা জমান এদেশের ব্যাঙ্কগুলিতে। এখানে ট্যাক্স খুবই কম, কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে পাওয়া যায় মোটা সুদ। এছাড়াও পর্যটন থেকেও আয় করে দেশটি।
(৫) সান মারিনো (৬২ বর্গ কিলোমিটার)
ভ্যাটিক্যান সিটির মতোই, সান মারিনোকে চারদিক থেকে ঘিরে আছে ইতালি। ইতালির উত্তরে পাহাড়ি এলাকায় লুকিয়ে আছে সান মারিনো দেশটি। পৃথিবীর সবচেয়ে পুরানো স্বাধীন দেশ বলে দাবি করে সান মারিনো। ৩০১ খ্রিস্টাব্দ থেকে দেশটির নাম লেখা আছে ইতিহাসে। সান মারিনো দেশটি উপার্জন হয় ব্যাঙ্কিং ও পর্যটন শিল্প থেকে। এই দেশটির একটা অদ্ভুত রেকর্ড আছে। ১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে মাত্র ৮.৩ সেকেন্ডে গোল দিয়েছিল সান মারিনো। যে রেকর্ড আজ পর্যন্ত ভাঙতে পারেনি বিশ্বের তাবড় তাবড় ফুটবল খেলিয়ে দেশগুলি।
(৪) টুভালু (২৫ বর্গ কিলোমিটার)
ন’টি দ্বীপ নিয়ে গঠিত টুভালু দেশটি। দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরের পাপুয়া নিউগিনির কাছে অবস্থিত দেশটি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র কয়েক ফুট ওপরে আছে এই রাষ্ট্রটি। বিশ্বউষ্ণায়নের ফলে জলতল আরও বাড়লে, আগামী কয়েক দশকের মধ্যে ডুবে যাবে এই দেশ।এই দ্বীপরাষ্ট্রটির জীবনযাত্রা বেশ কঠিন। পানীয় জলের অভাব। একমাত্র বৃষ্টি থেকে মেলে পানীয় জল। দেশটি নারকেল চাষ আর পর্যটন শিল্প থেকে আয় করে।
(৩). নাউরু (২১ বর্গ কিলোমিটার)
পলিনেশিয়ানরা কয়েক হাজার বছর আগে ক্যানো করে এসেছিল এই দেশে। ১৮৮৮ সালে দ্বীপটি দখল করে নিয়েছিল জার্মানি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত দ্বীপটির ওপর ছিল জার্মানির অধিকার। এর পরে জার্মানির কলোনিতে হানা দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ১৯৬৬ সালে স্বাধীন হয় দেশটি। ফসফেট খনি থেকে দেশটির মূল আয় আসে। মাত্র ১০ হাজার মানুষ বাস করেন এই দেশে।
(২) মোনাকো (৫৪১ একর)
তিনদিকে ফ্রান্স ও একদিকে সাগর দিয়ে ঘেরা মোনাকো। ঘনত্বের দিক থেকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল রাষ্ট্র। পৃথিবীর সেরা ধনী দেশগুলির মধ্যে অন্যতম। এই দেশ শাসন করে গ্রিমালডি পরিবার।যারা দেশটি শাসন করছে ৭০০ বছর ধরে। এখন শাসন করছেন যুবরাজ দ্বিতীয় অ্যালবার্ট। এখানে ধনীরা আসেন পয়সা ওড়াতে। জুয়া খেলা এখানে আইনসিদ্ধ। মোনাকোর রাজধানী মন্টিকার্লোতে ১৯২৯ সাল থেকে হয় মন্টিকার্লো কার-র্যালি। পৃথিবীর একমাত্র ফরম্যুলা ওয়ান রেস যা শহরের রাস্তায় হয়।
(১). ভ্যাটিক্যান সিটি (১২১ একর)
পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট স্বাধীন রাষ্ট্র। ইতালির রোম শহরের মধ্যে আছে পাঁচিল দিয়ে ঘেরা এই দেশ। এই দেশে বাস করেন মাত্র ৮৪০ জন নাগরিক। এখানের বাসিন্দারা বেশিরভাগই যাজক ও সুইস প্রহরী। এখানকার কর্মীরা আসেন প্রাচীরের বাইরের দেশ ইতালি থেকে। অর্থাৎ তাঁরা রোজ এক দেশ থেকে অন্য দেশে কাজ করতে যান। ছোট্ট এই দেশে কোনও শিল্প নেই। নেই কোনও কৃষি জমি। দেশটি আয় করে স্মারক বিক্রি ও অনুদান থেকে। আয়ের কিছুটা আসে পর্যটকদের কাছ থেকে নেওয়া প্রবেশমূল্য থেকে। এই দেশের প্রধান হলেন পোপ।