জাগুয়ারুন্ডি, যাদের ফাঁদে ফেলা প্রায় অসম্ভব
ট্রপিকাল রেনফরেস্ট, ম্যানগ্রোভ, সাভানা থেকে শুরু করে মরুভূমির ঝোপ, সব জায়গায় টিকে থাকতে পারে জাগুয়ারুন্ডিরা।
জাগুয়ারুন্ডি (Herpailurus yagouaroundi) হলো উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকার ঘন জঙ্গলে থাকা এক ধরনের বুনো বিড়াল। যার সঙ্গে আত্মীয়তা আছে কাউগার ও চিতার। সমতল থেকে ছ’হাজার ফুট উচ্চতায় থাকা জঙ্গলে চলে এদের অবাধ বিচরণ। যদিও কলম্বিয়ায়, ১৫০০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের ওপরেও এদের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছে।
ট্রপিকাল রেনফরেস্ট, ম্যানগ্রোভ, সাভানা থেকে শুরু করে মরুভূমির ঝোপ; সব জায়গায় টিকে থাকতে পারে জাগুয়ারুন্ডিরা। যেখানে তাদের লুকিয়ে থাকা সম্ভব, সেখানে থাকতে পছন্দ করে এরা।
জাগুয়ারুন্ডিরা কখনও দলবেঁধে থাকেনা। দূর্গম অরণ্যে একা থাকে, নয়তো স্ত্রী ও পুরুষ জোড়ায় জোড়ায় থাকে। ছোট পা, গোল কান, সরু মাথার জাগুয়ারুন্ডিরা উচ্চতায় ২০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। ওজন হতে পারে ৯ থেকে ১১ কেজি। তবে স্ত্রীদের থেকে পুরুষ জাগুয়ারুন্ডিরা আকারে বড় হয়। তিরিশটি তীক্ষ্ণ দাঁত থাকে জাগুয়ারুন্ডিদের চোয়ালে। এদের গড় আয়ু ১৫ বছর।
জাগুয়ারুন্ডিদের গায়ের রঙ সাধারণত লালচে-বাদামী অথবা ছাই রঙের হয়। জন্মের পর শাবকদের গায়ে কিছুদিনের জন্য ফুটকি দেখা যায়। পরে তা আবার মিলিয়ে যায়। লাল রঙের জাগুয়ারুন্ডিদের দেখা যায় খোলা ও শুষ্ক এলাকায়। ছাইরঙা জাগুয়ারুন্ডিদের দেখা যায় গভীর জঙ্গলে। কোনও কোনও জায়গায় কালো জাগুয়ারুন্ডিও দেখতে পাওয়া গিয়েছে।
জাগুয়ারুন্ডিরা কুশলী পর্বতারোহী। সাঁতার কাটতে ওস্তাদ। তাছাড়া এরা অসম্ভব দ্রুতগতিতে গাছে চড়তে পারে। যদিও শিকার করতে ভালোবাসে সমতলভূমিতেই। শিকারের ওজন মোটামুটি কেজি খানেকের মধ্যে থাকে। সাধরণত পাখি, সরীসৃপ, বড় ইঁদুর, খরগোশ, বনমুরগী ও ছোট খাটো স্তন্যপায়ী শিকার করে খায়। প্রত্যেকদিন প্রায় ৪০০ গ্রাম খাবার খায় জাগুয়ারুন্ডিরা।
সাধারণত সূর্য্যোদয়ের আগেই সক্রিয় হয়ে ওঠে জাগুয়ারুন্ডিরা। সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে শিকার খোঁজার পালা। সবচেয়ে বেশি শিকার করে দুপুরে। ক্ষরস্রোতা নদী এরা অক্লেষে সাঁতরে পার হয়ে যায়। শূন্যে প্রায় সাত ফুট লাফিয়ে উঠে, গোলকিপারের দক্ষতায় উড়ন্ত পাখি শিকার করে।
জাগুয়ারুন্ডিরা প্রায় ১৩ ধরনের আওয়াজ করতে পারে। মাঝে মাঝে পাখিদের মত কিচিরমিচির করে পাখিদের বিভ্রান্ত করে দেয়। এটা ওদের পাখি শিকারের কৌশল। এছাড়াও জঙ্গলের কিনারায় থাকা গ্রামে, মাঝে মাঝে হানা দিয়ে হাঁস মুরগী খেয়ে যায়। এছাড়াও জলে নেমে মাছ ধরে খায়, গাছে উঠে মারমোসেট বাঁদর খায়। এমনকি ছোট হরিণ শিকার করতেও দেখা গিয়েছে জাগুয়ারুন্ডিদের।
তিন বছর বয়েসে জাগুয়ারুন্ডিরা প্রজননক্ষম হয়ে ওঠে। জানুয়ারি থেকে মার্চ, এদের প্রজনন কাল। স্ত্রী জাগুয়ারুন্ডি গর্ভধারণ করে ৭০ থেকে ৭৫ দিন। ফাঁপা গাছের কোটরে, পাহাড়ি গুহায় বা ঘন ঝোপের ভেতরে জন্ম দেয় এক থেকে চারটি পর্যন্ত শাবক। তিন সপ্তাহ দুধ দেওয়ার পর, মা জাগুয়ারুন্ডি শাবকদের জন্য কঠিন খাবার খুজে আনে। ছ’সপ্তাহ বয়েসে শিশু জাগুয়ারুন্ডিরা পাখি বা গিনিপিগের মাংস খেতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
অত্যন্ত গোপনে ঘোরাফেরা করে জাগুয়ারুন্ডিরা। এরা এত চালাক যে এদের ফাঁদ পেতে ধরা প্রায় অসম্ভব। তাই খুবই কম গবেষণা করা সম্ভব হয়েছে এদের নিয়ে। যদিও বেলিজ, মেক্সিকো এবং ব্রাজিলে এদের নিয়ে গবেষণা হয়েছে।
ব্রাজিলে পাওয়া গিয়েছে ৫ লক্ষ বছরের পুরোনো জাগুয়ারুন্ডির ফসিল। অনুমান করা হচ্ছে প্লিস্টোসিন যুগের শেষপর্ব থেকেই আধুনিক জাগুয়ারুন্ডির উৎপত্তি হয়েছিল।