শেষ আপডেট: 24th September 2024 10:00
দ্য ওয়াল ব্যুরো: কালো ধোঁয়া উড়িয়ে, জোরালো শব্দ করে, গাঁকগাঁক করে ছুটে চলা গতির যুগে বড্ড বেমানান সে। তার শ্লথ গতি, বড়সড় চেহারা, নিজের পথে নিজের মতো দূষণহীন চলা-- এসবই যেন বড় বিড়ম্বনার কারণ হয়ে উঠেছে। তাই শেষমেশ বিদায় নিল সে। হারিয়ে গেল শহর থেকে। কারণ, আজ তার প্রয়োজন ফুরিয়েছে। বোঝা হয়ে উঠেছে সে। তাই কলকাতায় আর চলবে না ট্রাম। দেড় শতক ধরে শহরের নস্টালজিয়া বহন করে, বহু মানুষের যাত্রাপথের বিশ্বস্ত সঙ্গী হয়ে থেকে, শহরের অন্যতম এক বৈশিষ্ট্য হয়ে উঠে, দেশ-বিদেশের প্রশংসা কুড়িয়ে বিদায় নিল সে।
সম্প্রতি, শহরে ট্রাম পরিষেবা চালু রাখার দাবিতে ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের তরফে হাই কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করা হয়েছিল। তাতেই সরকারের ট্রাম-নীতি জানতে চেয়েছিল আদালত।
নবান্ন সূত্রের খবর, প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনার পরে, শেষমেশ শহর থেকে ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বালিগঞ্জ-ধর্মতলা ও শ্যামবাজার-ধর্মতলা রুটে শেষ যে দু'টি ট্রাম চলত, তাও বন্ধ করে দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
তাহলে কি আগামী প্রজন্ম কি আর চোখেও দেখতে পাবে না এই যান? তা যাতে না হয়, সে জন্য ধর্মতলা থেকে ময়দান পর্যন্ত লুপ লাইনে ট্রামের জয় রাইডের ব্যবস্থা থাকবে বলে জানা গেছে। দেশ-বিদেশের পর্যটকরা উপভোগ করতে পারবেন ট্রামযাত্রা।সেটি বাদ দিয়ে শহরের বাকি সব ট্রামলাইনও এবার তুলে ফেলা হবে।
এই প্রসঙ্গে পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, 'কোর্ট এই নিয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানতে চেয়েছিল। আমরা বলেছি, ময়দান-ধর্মতলা ছাড়া বাকি কোনও রুটে ট্রাম চলবে না। লাইনও তুলে ফেলব। রাস্তা বাড়েনি। যান বেড়েছে। তাই যানজট হচ্ছে। এভাবে ট্রান চালানো অসম্ভব।'
বস্তুত, কলকাতায় প্রায়ই অভিযোগ ওঠে, ট্রামলাইনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটার। তার উপর ট্রামের গুরুত্বও বর্তমানে প্রায় নেই। বরং যানজট বাড়ায় তার শ্লথ গতি ও বড় চেহারা। তার উপর জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তা অনেক কম। ফলে এমনিতেই যান নিয়ন্ত্রণ একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তার মধ্যে রাস্তার উপর ট্রামলাইন যেন আরও সমস্যা বাড়ায়। তাই সব দিক ভেবেই এই সিদ্ধান্তে সিলমোহর পড়ল।
তথ্য বলছে, একসময় কলকাতায় গমগম করে ট্রাম চলত ২৭-২৮টি রুটে। বছর ১৫ আগেও এক ডজন রুটে সচল ছিল ট্রাম। ট্রামের টিংটিং ঘণ্টিতে, কাঠের সিটে, শেষ আসনে বসে খাওয়া বাদামভাজার খোলসে যে কত সুখদুঃখ-হাসিকান্না জমে আছে, তার ইয়ত্তা নেই। ভারতের আর কোনও শহরে ট্রাম চলে না। তাই এই ট্রাম শুধু কলকাতার গর্বের ঐতিহ্য নয়, নস্টালজিয়াও। আজ সে ফেয়ারওয়েলের মঞ্চে। দেড়শো বছর ধরে শহরের ‘ঐতিহ্য’ হয়ে থেকে গেলেও ‘হেরিটেজ’ তকমা জোটেনি তার।