শেষ আপডেট: 15th May 2022 12:57
দ্য ওয়াল ব্যুরো: ভারতে যে কত রকমের বাজার (Market) আছে, তা গুনে শেষ করা যায় না। ঝাঁ চকচকে শপিং মলের সঙ্গে এ সমস্ত বাজারের বিস্তর ফারাক। প্রতিটা বাজার অভিনব, স্বতন্ত্র। এমনকি সে সব বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে পর্যটনও!
দেশে রয়েছে এই হাফ ডজন ভৌতিক জায়গা! দু’টি আবার এ রাজ্যেই, যাবেন নাকি
দেশজুড়ে এরকম নানা বাজারের আকর্ষণে পর্যটকরা ভিড় করেন নানা প্রান্তে। কেনাকাটা করতে তো বটেই, সেইসঙ্গে ঘুরে দেখাও যেন এক অভিজ্ঞতা। উপরি পাওনা, দামদর করে বেশ কম টাকায় ঝুলি ভরানোর সুযোগ।
মণিপুরের বিখ্যাত বাজার ইমা কেইথেল। এর আরেক নাম মায়েদের বাজার। বাজারটি পরিচালনা করেন শুধুমাত্র মহিলারা। সর্বধর্ম নির্বিশেষে মহিলারা এই বাজারে পণ্য বিক্রি করতে আসেন সেই ১৯৩৯ সাল থেকে। প্রায় তিন হাজার মহিলা ব্যবসায়ী এই বাজারে ব্যবসা চালান। খাবার, হস্তশিল্পের পণ্য, গৃহস্থালীর জিনিস থেকে শুরু করে সবই মেলে এখানে।
উত্তর দিল্লির তিব্বতি কলোনির বিখ্যাত বাজার মজনু কা টিল্লা। এখানে সস্তায় দারুণ দারুণ সব জিনিস পাওয়া যায়। জামাকাপড়, চপ্পল, ব্যাগ, পোস্টার-- সব পাবেন বেশ সস্তায়। রয়েছে তিব্বতি হস্তশিল্পের বহু দোকান। তিব্বতি সাবেকি খাবার এবং চাইনিজ খাবারের জন্যও বিখ্যাত এই বাজারটি।
জয়পুরের জোহরি বাজার, আন্তর্জাতিক রত্ন এবং গয়নার বাজার। এখানে দামী রত্ন কেটে পালিশ করা, গয়না তৈরি করা, কুন্দনের গয়না ইত্যাদি হযে থাকে। বহু বছর ধরে এই কাজই করে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। অনামী হলেও বিশ্বের সেরা গয়নার ডিজাইনারদের এখানে পাবেন।
দেশের জনপ্রিয় রাতের বাজার গোয়ার ইংগু স্যাটারডে বাজার। কেনাকাটা, বিনোদন, পার্টি, খাওয়া দাওয়া সবই হয় এখানে। ১৯৯৯ সাল থেকে চলছে এই বাজার। দেশি, বিদেশি পর্যটকরা গিয়ে ভিড় করেন এখানে। সস্তায় অ্যালকোহল এবং সঙ্গে গান শোনার দারুণ ঠিকানা এটি। বাজারে পাবেন জাঙ্ক জুয়েলারি, সুইমিং স্যুট, হস্তশিল্পের নানা কাজ, মশলা, ট্যাটু ও পিয়ার্সিং পার্লার, বার এবং দারুণ সব বিদেশি খাবার।
অ্যান্টিক গ্রামাফোন হোক কিংবা ক্রিং ক্রিং করে বাজা টেলিফোনের রিসিভার, মুম্বইয়ের চোর বাজারে সব পাবেন। তবে নামে চোর বাজার হলেও এখানে চোরাই মাল বিক্রি হয় না। শতাব্দী প্রাচীন এই বাজারের নাম ছিল শোর বাজার। ব্রিটিশদের ভুল উচ্চরাণের খেসারত দিতে গিয়ে এটির নাম এখন হয়ে গেছে চোর বাজার।
উত্তরপ্রদেশের প্রাচীন কনৌজ বাজারটির ঐতিহ্য অসাধারণ। এটি মূলত সুগন্ধীর বাজার। এখানে প্রবেশ করলেই নানা সুগন্ধী তেল, গোলাপ জল, সুগন্ধীর গন্ধ আপনার নাকে বসে যাবে। সাড়ে ছয়শোটিরও বেশি সুগন্ধী কারখানা রয়েছে এখানে। বেশিরভাগ কারখানাতেই সুগন্ধী তৈরি হয় সাবেকি প্রথা মেনে। গঙ্গা নদীর তীরে প্রাচীন শহর কনৌজের আরেক নাম সুগন্ধী নগরী।
জলের মধ্যেই আস্ত বাজার! জম্মু-কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের ভাসমান সবজি বাজারটি বিশ্ব বিখ্যাত। নৌকায় করে সবজি, ফুল, জিনিসপত্র নিয়ে নদীর জলে ভেসে থাকেন বিক্রেতারা। ক্রেতারা পছন্দমতো সবজি কিনে নেন। নিজের চোখে না দেখলে এই বাজারের অভিনবত্ব বোঝানো সম্ভব নয়।
মেঘালয়ে শিলং-এর পুলিশ বাজারে ভারতবিখ্যাত। সাবেকি দোকান থেকে শুরু করে অত্যাধুনিক শো রুম সবই মিলবে এখানে। গোটা বাজারটি একটি গোলাকার অংশের মধ্যে আবদ্ধ। স্থানীয়রা একে বলেন চক। মশাল, ড্রাই ফ্রুটস, শো পিস, শীতের পোশাক, খাবার দাবার সবই পাবেন এখানে।
অসমের জোনবিল মেলা। কার্বি, খাসি, তিওয়া এবং জয়ন্তীয়া আদিবাসীরা এই মেলার হর্তকর্তা। মকড়সংক্রান্তির সময় এই মেলাটি বসে। অসমে সেই পরবের নাম মেঘ বিহু। পাহাড়ের কোনা খামচি থেকে নিজের নিজের পণ্য নিয়ে সমতলে নেমে আসেন আদিবাসী বিক্রেতারা। অংশ নেন মেঘালয়ের আদাবিসীরাও। বিক্রেতারা মূলত আদিবাসী হলেও ক্রেতারা প্রায় সকলেই সাধারণ মানুষ। এখানে ব্যবসা চলে মূলত বিনিময় প্রথায়। সেই প্রাচীন যুগের মানুষদের ব্যবসায়িক রীতি বিনিময় প্রথা। সম্ভবত বিশ্বের মধ্যে এই একটিমাত্র স্থানেই বিনিময় প্রথা আজও রয়ে গিয়েছে।
কলকাতার নিউ মার্কেট। ভারতের সেরা এবং অভিনব বাজারগুলির মানচিত্রে নামটি জ্বলজ্বল করছে। পিংপং বল থেকে পিকাসোর ছবি-- সবই পাবেন এখানে। ফুটপাথে নানা জিনিসের পসরা সাজিয়ে যেমন দোকানিরা হাঁকাডাক করবেন, তেমনই সাবেকি নিলাম ঘরে পেয়ে যেতে পারেন হাজার হাজার বছরের পুরোনো নানা জিনিস। কথায় বলে নিউমার্কেটে নাকি বাঘের দুধও মেলে!