শেষ আপডেট: 19th September 2023 13:33
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi) সবকিছুতেই নিজের কৃতিত্ব দাবি করেন। কিছুদিন আগে চন্দ্রযানের সফল অবতরণের জন্য বিজেপির নেতারা তাঁর কৃতিত্ব দাবি করেছিলেন। এবার আইনসভায় নারীদের জন্য আসন সংরক্ষণ (Women Reservation Bill) বিল নিয়েও একইরকম দাবি করা হচ্ছে। মঙ্গলবার বিলটি লোকসভায় পেশ করা হয়। তার নাম 'নারী শক্তি বন্ধন অভিনিয়ম'। এর আগে সোমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পায়। তার পরেই খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও জলশক্তি মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী টুইট করে বলেন, 'একমাত্র মোদী সরকারই মহিলাদের আসন সংরক্ষণের দাবি পূরণ করতে পারে। এই সরকারের সেই নৈতিক সাহস আছে। সেজন্য নরেন্দ্র মোদীজিকে অভিনন্দন জানাই।'
বহুদিন ধরে ওই বিল পাশ করানোর চেষ্টা চলছে। তা প্রথমবার সংসদে (Parliament) পেশ করা হয় ১৯৯৬ সালে। ২০১০ সালে রাজ্যসভায় বিলটি পাশ হয়ে যায়। কিন্তু লোকসভায় পাশ হয়নি। নিয়মমতো ওই বিল পাশ হওয়ার জন্য সংসদের (Parliament) দুই কক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সদস্যের সমর্থন চাই। সেই সঙ্গে দেশে যতগুলি বিধানসভা আছে কমপক্ষে তার অর্ধেককে বিলটি অনুমোদন করতে হবে। তবেই ওই বিল আইনে পরিণত হবে। তখন সংসদের দুই কক্ষ ও বিধানসভাগুলির এক তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষিত থাকবে মহিলাদের জন্য। ওই সংরক্ষণের মধ্যে আবার তফসিলি জাতি-উপজাতিভুক্ত মহিলাদের জন্য আলাদা করে সংরক্ষণের ব্যবস্থা আছে।
মহিলাদের জন্য আইনসভায় নিশ্চয় আসন সংরক্ষিত হওয়া উচিত, কিন্তু এতেই নারী ক্ষমতায়ন হয়ে যাবে ভাবা ভুল হবে। আমাদের দেশের নানা ক্ষেত্রে এখনও জাঁকিয়ে বসে আছে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা তথা নারীবিদ্বেষ। এমনকি যাঁরা মহিলাদের জন্য আসন সংরক্ষণের বিল (Women Reservation Bill) পাশ করাতে যাচ্ছেন, সেই রাজনীতিকরাও এর ব্যতিক্রম নন। মাঝে মাঝে তাঁদের অনেকে এমন মন্তব্য করেন, তাতে বোঝা যায়, আমাদের রাজনীতিকদের এক বড় অংশের মানসিকতা মধ্যযুগে পড়ে রয়েছে।
মোদীর (Narendra Modi) নিজের দলের নেতা দয়াশংকর সিং একসময় দলিতনেত্রী মায়াবতীকে যৌনকর্মীদের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। ২০২০ সালে কেরল প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি মুল্লাপাল্লি রামচন্দ্রন মন্তব্য করেন, এলডিএফ সরকার এক 'দুশ্চরিত্র' মহিলাকে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে। সেই মহিলা একের পর এক কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ করছেন। ২০১৪ সালে উত্তরপ্রদেশে ভোটের আগে মুলায়ম সিং ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিরোধিতা করেছিলেন। তাঁর মন্তব্য ছিল, 'লেড়কে লেড়কে হ্যায়, গলতি হো যাতি হ্যায়।' এর অর্থ, ছেলেরা তো ছেলেদের মতো হবেই। মাঝে মাঝে তাদের ভুল হয়ে যায়। ২০১৫ সালে গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী লক্ষীকান্ত পারসেকর আন্দোলনরত নার্সদের বলেছিলেন, 'তোমরা যদি রোদে বসে থেকে অনশন চালিয়ে যাও, তাহলে তোমাদের গায়ের রঙ কালো হয়ে যাবে। তখন কেউ তোমাদের বিয়ে করবে না।'
এরকম উদাহরণ আরও দেওয়া যায়। শুধু রাজনীতিকরা নন, সাধারণ মানুষের এক বড় অংশও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতায় ভোগেন। মেয়েরা কোথাও নিগৃহীত হলে মেয়েদেরই দোষী মনে করেন। এমনকী মহিলাদের একটি অংশও এর ব্যতিক্রম নন। তাঁরা বলেন, মেয়েদের এমন পোশাক পরা উচিত নয় যাতে ছেলেরা প্রলুব্ধ হয়। সন্ধ্যার পরে মেয়েদের একা বাইরে বেরোন উচিত নয়, ইত্যাদি। অনেক সময় পুলিশ-প্রশাসনও ঘোর নারীবিদ্বেষী আচরণ করে। উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাই তার প্রমাণ।
এই পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে মহিলারা আইনসভায় গিয়েও বেশি কিছু করতে পারবেন না। আধুনিক উন্নত শিক্ষাব্যবস্থাই লিঙ্গসাম্যের পাঠ দিতে পারে। ছোট থেকেই ছেলেমেয়েদের শেখাতে হবে, মেয়েরা নিম্নশ্রেণির জীব নয়। তাঁদের বাদ দিয়ে দেশ ও সমাজ এগোতে পারবে না।
আরও পড়ুন: মহিলা সংরক্ষণ বিল পেশ সংসদে, মোদী বললেন, ‘আজ ঐতিহাসিক দিন’