শেষ আপডেট: 4th July 2023 14:49
বাংলা মিডিয়াম না ইংলিশ মিডিয়াম? কোন মাধ্যমে পড়লে সন্তানের ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল? এই নিয়ে একসময় অনেক বিতর্ক হয়েছে।
সম্প্রতি লোরেটো কলেজের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি নতুন করে উস্কে দিয়েছে এই বিতর্ক। ওই কলেজ বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে, যে ছাত্রীরা দ্বাদশ শ্রেণিতে আঞ্চলিক ভাষায় পড়াশোনা করেছে, তারা ভর্তির উপযুক্ত বলে বিবেচিত হবে না। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গে যে ছাত্রীরা বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছে, তাদের লোরেটোয় স্থান নেই। কলেজের অধ্যক্ষা ক্রিস্টিন কুটিনহো জানিয়েছেন, তিন বছর ধরেই এই নিয়মে তাঁদের কলেজে ছাত্রী ভর্তি করা হয়।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবাশিস দাস বিষয়টি নিয়ে লোরেটোর অধ্যক্ষার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। দেবাশিসবাবু জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় ওই বিজ্ঞপ্তি সমর্থন করে না। ইতিমধ্যে একটি ছাত্র সংগঠন দাবি জানিয়েছে, লোরেটো কলেজকে এই নিয়ম বাতিল করতে হবে। শিক্ষাবিদরাও কেউ কেউ বলেছেন, লোরেটোর এই নিয়ম ঠিক নয়।
বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে লোরেটোর তরফে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়েছে, অনিচ্ছাকৃতভাবে ছাত্রীদের ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার জন্য আমরা দুঃখিত। কোনও মাধ্যমের ছাত্রীদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের শিক্ষকরা লক্ষ করেছেন, ইংরেজি বাদে অন্য মাধ্যমের ছাত্রীরা ক্লাসের লেকচার বুঝতে পারেন না। তাই এই সিদ্ধান্ত।
লোরেটো কলেজের যুক্তিতে ফাঁক আছে। প্রথমত বাংলা মিডিয়ামের ভাল ছাত্রীরা ইংরেজি লেকচার বুঝতে পারে না একথা সর্বাংশে সত্যি নয়। দীর্ঘকাল ধরে বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় স্তরে ইংরেজিতে লেকচার ফলো করে আসছে। ক্রমশ তাদের অনেকেই ইংরেজি লেখা ও বলায় চোস্ত হয়ে উঠেছে। এমন উদাহরণ চারপাশে অনেক পাওয়া যাবে।
আজ থেকে ৪০-৫০ বছর আগে বাংলা মিডিয়ামকেই পছন্দ করতেন বেশিরভাগ অভিভাবক। ধরে নেওয়া হত, সেখানে পড়াশোনার মান উন্নত। কিন্তু বিশ্বায়নের পরে ছবিটা বদলেছে। এখন বেসরকারিকরণের যুগ। সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ দিন দিন কমছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, বেসরকারি অফিসে চাকরি পেতে হলে ইংলিশ মিডিয়ামের ছাত্রছাত্রীরা বাড়তি সুবিধা পায়। তাই এখন ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের দরজায় দীর্ঘ লাইন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে, বাংলা মাধ্যমের ছেলেমেয়েরা ইংরেজি জানে না। অথবা ইংরেজিতে কথা বললে বুঝতে পারে না।
কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীর মেধাই একমাত্র বিবেচ্য হওয়া উচিত। সে কোন ভাষায় পড়াশোনা করেছে, তা ভর্তির মানদণ্ড হতে পারে না। ইচ্ছা করলে কোনও কলেজ ভর্তির পরীক্ষা নিতে পারে। প্রয়োজনে দেখে নেওয়া যেতে পারে, কোনও ছাত্রী ইংরেজি লেকচার বুঝতে পারছে কিনা। কিন্তু লোরেটো কর্তৃপক্ষ তা করছে না। তারা আগেই ধরে নিচ্ছে, ইংরেজি বাদে অন্য মাধ্যমে পড়াশোনা করা ছাত্রীরা ক্লাস ফলো করতে পারবে না। এটা নিতান্তই একপেশে ভাবনা।
লোরেটো সংখ্যালঘু কলেজ। সংবিধানের ৩০ (১) নম্বর ধারায় বলা হয়েছে, ভাষাগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা নিজেদের ইচ্ছামতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গঠন করতে পারবেন। এই অধিকার থেকে কোনওভাবেই তাঁদের বঞ্চিত করা যাবে না। সংখ্যালঘু হিসাবে কেউ যাতে বঞ্চিত না হন, সেজন্যই সংবিধানে তাঁদের ওই অধিকার দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অধিকারের সঙ্গে আসে দায়িত্ব। অধিকারের অপব্যবহার কখনই কাম্য নয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সব ছাত্রছাত্রীকে সমানভাবে দেখা। এক্ষেত্রে কাউকে বৈষম্য করার অধিকার দেওয়া যায় না।