শেষ আপডেট: 11th October 2023 17:09
ইউক্রেনে যুদ্ধ চলছে এক বছরের বেশি সময় ধরে। কবে থামবে কেউ জানে না। এরই মধ্যে আরও একটা যুদ্ধ শুরু হয়ে গেল।
গত শনিবার ভোরে জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস ইজরায়েলে তিন হাজার ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। সেই সঙ্গে এক হাজার হামাস যোদ্ধাও ঢুকে পড়ে ইহুদিভূমিতে। বেলা সাড়ে ১১ টা নাগাদ ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন, 'যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই যুদ্ধ দীর্ঘদিন যাবৎ চলতে পারে।
আমাদের হয়তো অনেক কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে'।
হামাসের বিরুদ্ধে ইজরায়েল অভুতপূর্ব যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করেছে। সোমবার রাত থেকে গাজার অন্তত হাজারটি জায়গায় বোমাবর্ষণ করেছে ইজরায়েলি বিমান। নেতানিয়াহু হুংকার দিয়েছেন, আমরা পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র পালটে দেব। অন্যদিকে হামাসও হুমকি দিয়েছে, নিরীহ মানুষের ওপরে আক্রমণ হলে ইজরায়েলি পণবন্দিদের এক এক করে হত্যা করা হবে। হামাস জঙ্গিরা শুধু ইজরায়েলের নাগরিকদের অপহরণ করেনি, আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্স, মেক্সিকো ও আরও কয়েকটি দেশের নাগরিকদের ধরে নিয়ে গিয়েছে। এই সব দেশের সরকার নিশ্চয় চাইবে তাদের লোকেরা নিরাপদে ফিরে আসুক। তাই তারা সম্ভবত ইজরায়েলকে সংযত হতে বলবে। সুতরাং নেতানিয়াহু যেভাবে পশ্চিম এশিয়ার মানচিত্র বদলে দেবেন বলে দাবি করছেন, বাস্তবে এখনই তা সম্ভব নাও হতে পারে।
এর মধ্যে বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ভারত সহ নানা দেশ ইজরায়েলে হানাদারীর নিন্দা করেছে দ্ব্যর্থহীন ভাষায়। অনদিকে হামাসের পাশে দাঁড়িয়েছে ইরান। রাজধানী তেহরানের নানা জায়গায় হামাসের প্রশংসা করে লাগানো হয়েছে বোর্ড। অনেকের ধারণা ইরানের সেনাবাহিনীর অফিসাররা জঙ্গিদের সাহায্য করেছিলেন। তেহরান থেকে সেই অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।
যুদ্ধের সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে। কোভিড অতিমহামারীর ধাক্কা সামলে বিশ্ব অর্থনীতি যখন সবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে, তখন নতুন করে ধাক্কা দিয়েছে ইউক্রেন ও ইজরায়েলের যুদ্ধ। পশ্চিম এশিয়ায় গোলযোগ দেখা দিলে অনেক সময় তেল সরবরাহে বিঘ্ন ঘটে। তার অবশ্যম্ভাবী ফল তেলের মূল্যবৃদ্ধি। তেলের দাম বাড়লে সব জিনিসেরই দাম বেড়ে যায়। ইজরায়েলে যুদ্ধের ফলেও তেলের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা।
সব কিছু ছাড়িয়ে যে প্রশ্নটা সকলকে ভাবিয়ে তুলেছে, তা হল, ইজরায়েলের গোয়েন্দাদের চোখ এড়িয়ে হামাস এতবড় হামলা চালাল কীভাবে?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পর্যন্ত নানা দেশে ইহুদিরা অকথ্য দমনপীড়নের শিকার হয়েছে। তাই তারা চেয়েছিল এমন একটা ভূখণ্ড যেখানে সব ইহুদি নিরাপদে থাকবে। ইজরায়েল হল তাদের সেই স্বপ্নের দেশ। ইহুদিভূমিতে যাতে কেউ আক্রমণ করতে না পারে, সেজন্য তারা গড়ে তুলেছে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা বাহিনী। তার নাম মোসাদ। মোসাদের কম্যান্ডোরা ইজরায়েলের শত্রুদের নির্দ্বিধায় হত্যা করে। পণবন্দিদের উদ্ধার করার জন্য দুঃসাহসিক অভিযান চালায়। নানা দেশের গোয়েন্দারা ইজরায়েলে গিয়ে মোসাদের কাছে ট্রেনিং নিয়ে আসে। সেই মোসাদ এভাবে বোকা বলে গেল কীভাবে?
অনেকে এর জন্য নেতানিয়াহুকে দায়ী করছেন। তিনি নাকি গত কয়েক বছরে সেনাবাহিনীকে চটিয়ে দিয়েছেন। রাজনৈতিক স্বার্থে এমন কয়েকটি কাজ করেছেন, যাতে গোয়েন্দাদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে। সেই সুযোগে হানা দিয়েছে শত্রু।
হামাস কীভাবে এতবড় আক্রমণ চালাতে পারল তা নিয়ে আগামী দিনে আরও বিতর্ক হবে। কিন্তু ইজরায়েলের ঘটনা থেকে সব দেশেরই একটা শিক্ষা নেওয়ার আছে। তা হল, কোনও পরিস্থিতিতেই আত্মসন্তুষ্ট হওয়া উচিত নয়। শত্রুকে কখনও ছোট করে দেখতে নেই। কারণ পরাজিত হয়েও সে ফিরে আসে। পরাজয়ের প্রতিশোধ নিতে চায়।
আরও একটা কথা, ইজরায়েলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে দেশে মেরুকরণের রাজনীতি শুরু হয়েছে। পাঁচ রাজ্যে ভোটের মুখে সেই মেরুকরণ আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা হয়। এই প্রবণতা বন্ধ করার জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কারণ মেরুকরণের ফলে নাগরিকদের মধ্যে ঐক্য নষ্ট হয়। তাতেও দেশ দুর্বল হয়ে পড়ে।