শেষ আপডেট: 27th December 2023 16:17
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনাকে কেন্দ্র করে রাজ্য সরকার এবং রাজভবনের ক্ষমতার দড়ি টানাটানি অতীতের সব নজির ছাপিয়ে গিয়েছে। রাজ্যপালদের আচার্য হিসাবে দায়িত্ব পালন ঘিরে রাজ্য-রাজভবন বিরোধে ব্যতিব্যস্ত অবিজেপি দল শাসিত আরও সাত-আটটি রাজ্য। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মতো অবস্থা কোথাও দেখা দেয়নি। সব মিলিয়ে এক গভীর সংকটের মুখোমুখি রাজ্যের উচ্চশিক্ষার অঙ্গন।
সংকটের প্রধান কারণ এ রাজ্যে উচ্চশিক্ষায় আপাতত দুটি পদই মাত্র স্থায়ী, আচার্য এবং উচ্চশিক্ষামন্ত্রী। পদমযার্দায় তৃতীয় স্থানে থাকলেও উচ্চশিক্ষায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। দুর্ভাগ্যের হল সেই গুরুত্বপূর্ণ পদটির সঙ্গে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মিউজিক্যাল চেয়ারের এখন কোনও ফারাক নেই। উপাচার্যদের গদি এই আছে তো এই নেই। এমনকী গভীর রাত পর্যন্ত জেগে দায়িত্ব পালন করা উপাচার্য পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারছেন তিনি অপসারিত।
এমনীতেই রাজ্য-রাজভবন সংঘাতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার পরিচালিত একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও স্থায়ী উপাচার্য নেই। শুধু উপাচার্যরাই নন, কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী পদই নয়া প্রবণতা। অস্থায়ীদের দিয়ে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা স্থায়ী রূপ নিয়েছে।
এর ফলে পড়ুয়া এবং শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মীবৃন্দ চরম সমস্যার মুখে পড়েছেন। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউকে আচার্য-রাজ্যপাল আনন্দ বোস আগের রাতে সরিয়ে দেন। পরদিন সকালে রাজ্য সরকার তাঁকে পুনর্বহাল করে। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আচার্য, উচ্চশিক্ষামন্ত্রী, কেউই যাননি। এমনকী শহরে এসেও অনুপস্থিত থাকেন দীক্ষান্ত ভাষণ দিতে আসা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান। আইনি জটিলতা এড়াতে ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে ডিগ্রি প্রদান করেননি উপাচার্য। সেই দায়িত্ব পালন করতে হয় সহ-উপাচার্যকে।
রাজ্য সরকারের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই বুদ্ধদেব সাউকে যাদবপুরের উপাচার্য নিয়োগ করেছিলেন রাজ্যপাল। কিন্তু সমাবর্তনের জন্য আচার্য-রাজ্যপালের পরিবর্তে রাজ্য প্রশাসনের কথায় সিদ্ধান্ত নেওয়ায় আনন্দ বোস তাঁকে সমাবর্তনে আগের রাতে সরিয়ে দেন। এখন নানা মহলে সংশয় তৈরি হয়েছে, যাদবপুরের উপাচার্যই কি ব্যতিক্রম, নাকি আচার্যের হুকুমদারী অস্বীকার করবেন তাঁর নিয়োগ করা আরও অনেককেই
রাজ্যপাল কথায় কথায় আচার্য হিসাবে তাঁর ছাত্র দরদী মনোভাবের কথা ব্যক্ত করে থাকেন। সমাবর্তনের আগের রাতে উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর ওই কথার সঙ্গে মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এখন শোনা যাচ্ছে, যাদবপুরের পড়ুয়ারা যে ডিগ্রি পেয়েছে তা আইনসিদ্ধ নয় এবং রাজভবন এই বিষয়ে আদালতের দ্বারস্থ হতে পারে। ডিগ্রি নিয়ে পড়ুয়াদের সমস্যা কাম্য নয়। যেমন কাম্য নয়, রাজভবনের আদালতের দ্বারস্থ হওয়া।
এটা স্পষ্ট, রাজ্যপাল তাঁর রাজনৈতিক দায় থেকে রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত মামলা গড়িয়েছে। আশা করা যায়, সর্বোচ্চ আদালতের হস্তক্ষেপে উপাচার্য নিয়োগে জটিলতা কাটবে। আইনি লড়াইয়ে সেখানেই ইতি টানা জরুরি। আচার্যের বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে আইনি বিবাদে জড়ানো মোটেই কাম্য নয়।