
তামিলনাড়ু থেকে প্লেনে শ্রীলঙ্কা (Sri Lanka) যেতে সময় লাগে এক ঘণ্টার সামান্য বেশি। অতি প্রাচীনকাল থেকে সমুদ্রপথে ভারতের সঙ্গে ওই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সেখানকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে ভারতের মিল যথেষ্ট। তাই শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) বর্তমান অবস্থায় ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে।
দ্বীপরাষ্ট্রে এখন যা চলছে, তাকে নৈরাজ্য ছাড়া কিছু বলা যায় না। জনতা প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি পুড়িয়ে দিচ্ছে। এক সাংসদকে খুন করেছে। শাসকদলের অন্যান্য নেতাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে।
শ্রীলঙ্কার (Sri Lanka) প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে সোমবার ভুল স্বীকার করেছেন। নবগঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে তিনি বলেছেন, আগেভাগেই তাঁর আইএমএফের সাহায্য নেওয়া উচিত ছিল। তাছাড়া জৈব চাষ চালু করার উৎসাহে বিদেশ থেকে রাসায়নিক সার আমদানি বন্ধ করে দিয়েও তিনি ভাল কাজ করেননি।
অশান্তির জন্য শ্রীলঙ্কা সরকার ‘বিরোধীদের উস্কানি’-কে দায়ী করছে। সব সরকারই নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে অমন বিরোধীদের দোষ দেয়। তাতে গণবিক্ষোভ শান্ত হয় না।
যে কথাটি প্রেসিডেন্ট বলেননি, তা হল, তাঁদের পরিবারের দুর্নীতিও দেশের এই দুরবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী। তাঁর দাদা মাহিন্দা রাজাপক্ষের আমলে শ্রীলঙ্কায় এলটিটিই জঙ্গিরা ধ্বংস হয়। শোনা যায়, তখন ৪০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছিলেন। তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা হয়েছিল বিস্তর। কিন্তু মাহিন্দা কিছুই গায়ে মাখেননি। একবার মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে আন্তর্জাতিক তদন্তেরও প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু মাহিন্দা তা এককথায় উড়িয়ে দিয়েছিলেন। ‘স্ট্রংম্যান’ হিসাবে তখন দেশের মানুষের কাছে তাঁর ভাবমূর্তি ছিল উজ্জ্বল। তাই তিনি আন্তর্জাতিক চাপ উপেক্ষা করতে সাহস পেয়েছিলেন।
মাহিন্দার ভাই গোতাবায়াও স্ট্রংম্যান। শোনা যায়, তিনি নাকি সারা দেশে ছড়িয়ে রেখেছেন ডেথ স্কোয়াড। অর্থাৎ খুনি বাহিনী। তারা রাতের অন্ধকারে বিরোধীদের গুম-খুন করে।
কিন্তু শুধু দমন-পীড়ন করে সরকার চালানো যায় না। তার জন্য চাই সুষ্ঠু দূরদৃষ্টি ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি। রাজাপক্ষে পরিবারের কারও ওই দু’টি গুণ নেই।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীও স্ট্রংম্যান বলে পরিচিত। তাঁর দলের স্লোগান, ‘মোদী হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়’। অর্থাৎ মোদী থাকলে সবই সম্ভব। কিন্তু বাস্তবে মানুষের দুর্দশা দূর করা যে মোদীর পক্ষে সম্ভব নয়, তা তো দেখাই যাচ্ছে। শ্রীলঙ্কার মতো জ্বালানি সংকট রয়েছে এই দেশেও।
সম্প্রতি রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডারের দাম ছুঁয়েছে হাজার টাকা। আলুর দাম প্রতি কেজি ২৫-৩০ টাকা। অন্যান্য জিনিসপত্রের দামও আগুন। এতদিন জীবনদায়ী ওষুধের দাম নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে বেঁধে রাখা হত। এখন সেই ওষুধের ওপরেও নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া হয়েছে। বাজার অর্থনীতির কল্যাণে এখন ক্যানসার কিংবা অন্যান্য দুরারোগ্য রোগে সস্তায় ওষুধ পাওয়ার উপায় নেই। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার আগে মোদী নানা বিষয়ে ভরতুকি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন সে সবই ভুলে গিয়েছেন।
মোদী জিনিসপত্রের দাম কমাতে পারেন না, বেকারত্ব দূর করতে পারেন না, কিন্তু ভোটে জেতাতে পারেন। তাঁর ইমেজের জোরে বিজেপি কেন্দ্রে ও বিভিন্ন রাজ্যে ভোটে জয়লাভ করেছে।
কিন্তু জনমত কারও পক্ষে চিরকাল থাকে না। মানুষের অভাব যদি বাড়তেই থাকে, এখানেও শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থা হওয়া অসম্ভব নয়। তাই আগে থাকতে সাবধান হওয়া উচিত। একবার অশান্তি শুরু হয়ে গেলে আর ভুল স্বীকার করে লাভ হবে না।
আরও পড়ুন : পর্যালোচনা চলাকালে ‘রাষ্ট্রদ্রোহ’ ধারা কার্যকর বন্ধ থাক, কেন্দ্রকে বলল সুপ্রিম কোর্ট