শেষ আপডেট: 14th June 2022 15:58
ইসলামের নবী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন কিছু মানুষ। আইন–আদালতে তাঁদের নিশ্চয়ই বিচার হবে।
অবমাননার প্রতিবাদে অনেক মানুষ প্রতিবাদ করেছেন, করছেন। প্রতিবাদ করতে গিয়ে কিছু মানুষ হিংসার পথ নিয়েছেন। যাঁরা হিংসার পথ বেছে নিয়েছেন নিশ্চয়ই তাঁদেরও বিচার হবে। শাস্তি তাঁদেরও প্রাপ্য।
কিন্তু কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যে বিচিত্র ঘটনা ঘটছে। কোনও সভ্য দেশে যা মেনে নেওয়া যায় না। ইসলামের নবীর অবমাননায় যারা হিংসাশ্রয়ী আচরণ করেছেন, পুলিশ তাঁদের গ্রেফতার করতে পারে। জেলে আটকে রাখতে পারে। আরও কী কী করতে পারে সবই আইনে বলা আছে।
কিন্তু বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি, বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে (Uttar Pradesh) যা ঘটছে, তা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। যারা হিংসাত্মক কাজে যুক্ত ছিল, বুলডোজার দিয়ে (Bulldozer Mission) তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে দিচ্ছে পুলিশ। ফলে অভিযুক্তদের গোটা পরিবার বিপন্ন হয়ে পড়ছেন। গৃহহারা হচ্ছেন।
আচ্ছা বলুন তো, একটা বাড়িতে শুধু কি একজন অপরাধী বাস করে? ঘরবাড়ি যাদের ভেঙে দেওয়া হচ্ছে তাদের পরিবার তো প্রতিবাদের নামে হিংসা করেনি। তাহলে তাদের আশ্রয়হীন করে দিয়ে বিপদে ফেলা হচ্ছে কেন?
তাছাড়া কেউ অপরাধ করলেই কি তার ঘরবাড়ি ভেঙে দিতে হবে? প্রতিবাদীদের কি এভাবে সাজা দেওয়া যায়?
শুধু তাই কেন, কোনও অবৈধ নির্মাণও রাতারাতি ভেঙে দেওয়া যায় কি? এ কোন দেশি আইন!
সংবাদমাধ্যম থেকে যা জানতে পারছি, মুসলিমদের ওপরেই এ ধরনের আক্রমণ বেশি হচ্ছে। এ নিয়ে চুপ করে থাকা অন্যায় হবে।
আমি অবাক হচ্ছি কেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এখনও হস্তক্ষেপ করছে না। আদালতের উচিত ছিল স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করার।
আদালত কিছু করল না বলেই আজ আমরা ক’য়েকজন মিলে প্রধান বিচারপতি এনভি রমানাকে চিঠি লিখেছি। আমরা বলেছি, সুপ্রিম কোর্টের উচিত এ ধরনের অসাংবিধানিক, অমানবিক, বেআইনি অভিযানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা।
আমরা কি মধ্যযুগে বাস করছি নাকি? এতো মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও ছাপিয়ে যাচ্ছে। প্রতিবাদ করতে গিয়ে কেউ হয়তো হিংসায় জড়িয়ে পড়েছে। তার জন্য কি কাউকে সপরিবারে সাজা দেওয়া যায়? অভিযুক্তের পরিবারের লোকেরা কী দোষ করেছে? তাঁরা কেন গৃহহীন হবেন?
আমরা মনে করি অবিলম্বে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের উচিত যে সরকারগুলি এভাবে মানুষকে সাজা দেওয়ার নামে বেআইনি অভিযান চালাচ্ছে, তাদের এটা বলা—এই অভিযান বেআইনি এবং অসাংবিধানিক। অবিলম্বে এই বুলডোজার অভিযান বন্ধ হওয়া দরকার।
লেখক ভারতের সুপ্রিমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের প্রাক্তন চেয়ারম্যান।
সুপ্রিমকোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রমানাকে মঙ্গলবার লেখা চিঠিতে তিনি ছাড়াও স্বাক্ষর করেছেন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি সুদর্শন রেড্ডি, ভি গোপালা গৌড়া, বিশিষ্ট আইনজীবী শান্তিভূষণ, ইন্দিরা জয়সিং, প্রশান্ত ভূষণ প্রমুখ।