শেষ আপডেট: 3rd October 2023 16:16
গত সপ্তাহে সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই বীভৎস এক ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, কিশোরীটি ধর্ষিত হয়েছিল। অর্ধনগ্ন, রক্তাক্ত অবস্থায় সে হেঁটে এসেছিল আট কিলোমিটার। কেউ তাকে সাহায্য করেনি। শেষে সে একটি আশ্রমের সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। আশ্রমের পুরোহিত পুলিশকে খবর দেন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপ নিয়ে দেশ জুড়ে হইচই শুরু হয়। বিরোধীরা একযোগে মধ্যপ্রদেশ সরকারকে আক্রমণ করেন। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ বলেন, ওই ঘটনায় মধ্যপ্রদেশের সম্মান নষ্ট হয়েছে।
ওই ঘটনায় শুধু একটি প্রদেশের নয়, সারা দেশেরই সম্মান নষ্ট হয়েছে। পুলিশ অবশ্য অপরাধীকে ধরতে যথেষ্ট তৎপর হয়েছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর মেয়েটি ধর্ষিত হয়। যে আশ্রমের সামনে সে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গিয়েছিল, সেখানকার পুরোহিত পুলিশে খবর দেন। পুলিশ দ্রুত মেয়েটিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে একটি বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের পরে তার অবস্থা স্থিতিশীল হয়েছে।
২৮ সেপ্টেম্বর পুলিশ জানায়, ধর্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নাম ভরত সোনি। সে পেশায় অটোরিকশ চালক। ৭০০ সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখে, এক ডজন মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ ভরতের খোঁজ পায়। একইসঙ্গে রাকেশ মালব্য নামে অপর এক অটো চালকের বিরুদ্ধেও পুলিশ মামলা করেছে। নির্যাতিত বালিকাটি তাঁর অটোয় উঠেছিল। তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখেও রাকেশ পুলিশকে জানাননি।
ভরতের বাবা রাজু সোনি বলেছেন, তাঁর ছেলেকে যেন ফাঁসি দেওয়া হয়। এক সংবাদ মাধ্যমে তিনি জানান, অতবড় অপরাধ করার পরেও তাঁর ছেলের কোনও হেলদোল ছিল না। ধর্ষিতাকে নিয়ে যখন চারদিকে হইচই শুরু হয়েছে, তখন সে স্বাভাবিকভাবেই দৈনন্দিন কাজকর্ম করছিল।
দ্য ওয়াল এখন হোয়াটসঅ্যাপেও। ফলো করতে ক্লিক করুন।
ভরতের নিশ্চয় শাস্তি হবে, কিন্তু যাঁরা সেদিন ওই রক্তাক্ত বালিকার মুখের ওপরে দরজা বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তাঁদের কী হবে। তাঁরাও কি অপরাধী নন? আমাদের দেশে প্রাচীনকাল থেকে বহু মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করেছেন। তাঁরা প্রচার করেছেন দয়া, ত্যাগ ও তিতিক্ষার বাণী। সেই দেশের মানুষ কীভাবে এত হৃদয়হীন হতে পারে?
ধর্ষণের মতো অপরাধ সম্ভবত আমাদের গা সওয়া হয়ে গিয়েছে। কাগজ খুললেই ধর্ষণের খবর পাওয়া যায়। সেই নিয়ে কেউ মাথা ঘামায় না। অনেকে ওই অপরাধের জন্য মেয়েদেরই দোষী বলে মনে করে। অবশ্য মাঝে মাঝে বীভৎস কিছু ঘটলে সবাই বিবেক দংশন অনুভব করে। তখন মিটিং-মিছিল হয়। কিছুদিনের মধ্যে সবাই সেকথা ভুলে যায়।
সাধারণ মানুষ এমন নিষ্ক্রিয় বলেই দেশে নারী নির্যাতন বেড়ে চলেছে। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী ২০২১ সালে ৩১ হাজার ৬৭৭টি ধর্ষণের অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছিল। অর্থাৎ দৈনিক ৮৬ জন মহিলা ধর্ষিত হয়েছিলেন। বাস্তবে সংখ্যাটা এর চেয়ে অনেক বেশি। কারণ বহুক্ষেত্রে ধর্ষিতা অভিযোগ জানাতে সাহস পান না। অনেক সময় ধর্ষিতার বাড়ির লোকও বদনামের ভয়ে পুলিশকে কিছু জানান না। ধর্ষণকারীরা এই সুযোগটাই নেয়।
ধর্ষণের বিরুদ্ধে এখন কড়া আইন হয়েছে। তবু এই অপরাধে লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না। এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে ওঠা দরকার। নারী নির্যাতনের ঘটনার ভিডিও ক্লিপ অনেকে শেয়ার করেন। কিন্তু বাস্তবে তাঁরা ধর্ষিতার পাশে দাঁড়ান না। এই মানসিকতা বদলাতে হবে। না হলে আমাদের দেশের মেয়েরা নিরাপদ হবে না।