
কালীপুজোর আগের রাতে নরেন্দ্র মোদীর সরকার পেট্রল ও ডিজেলের (petrol diesel) উপর উৎপাদন শুল্ক সামান্য কমিয়েছে। তারপরই বিজেপি-সহ গেরুয়া শিবির প্রচার শুরু করে, এই সিদ্ধান্ত দেশবাসীকে সরকারের তরফে দীপাবলির উপহার।
কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণার পর পরই বিজেপি শাসিত বেশ কয়েকটি রাজ্য সরকারও ওই দুই জ্বালানির উপর থেকে ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেয়। চাপের মুখে একই পথে হেঁটেছে অবিজেপি দল শাসিত কিছু রাজ্য সরকারও।
পশ্চিমবঙ্গ, মহারাষ্ট্রের মতো কয়েকটি বড় রাজ্য সোমবার পর্যন্ত এই ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করেনি। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সোমবার এক অনুষ্ঠানে জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্য নিয়ে অনেক কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় সরকারে কিছু ন্যায্য সমালোচনাও করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়েছে, নবান্নের কর্তারা আপাতত দাম কমাতে অপারগ।
পেট্রল-ডিজেলের দাম খানিক কমলেও রান্নার গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে মধ্যবিত্তের প্রাণ ওষ্ঠাগত। তাছাড়া, পেট্রল-ডিজেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্তটি অনেকটাই জুতো মেরে গরু দানের মতো। বিগত কয়েক মাস ধরে লাগাতার দাম বাড়িয়ে নিয়ে খানিক কমানোর ভালোমানুষি করা হল। সেই ভাবনাও মোদী সরকারের মাথায় আসত না, যদিনা সদ্য অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিজেপির ফল খারাপ হত।
তার পরও দাম কমানোর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাতে হয়। কিন্তু কিছু প্রশ্ন উত্থাপন না করলেই নয়। বিজেপি এবং সঙ্ঘ পরিবার নানা ক্ষেত্রেই এক দেশ নীতি নিয়ে চলতে চাইছে। যেমন, কেন্দ্রীয় সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হল, এক দেশ-এক রেশন কার্ড। প্রশ্ন হল, যদি রেশন কার্ডটি অভিন্ন হতে পারে, নিত্য ব্যবহার্য অত্যাবশ্যকীয় পন্যগুলি সারা দেশে এক দামে দেওয়ার ব্যবস্থা তাহলে করা হচ্ছে না কেন?
বামপন্থীরা একটা সময় পর্যন্ত ১৪টি নিত্যপণ্য গোটা দেশে এক দামে বিক্রির দাবিতে সরব থাকত। সেই তালিকায় যদিও পেট্রপণ্য ছিল না। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে এই প্রস্তাবটি বিবেচনায় আসা জরুরি যে গোটা দেশে পেট্রল-ডিজেল সমগ্র ভারতবাসী এক দামে কিনতে পারবে। কারণ এই দুই জ্বালানি তেলের থেকে আর কোনও জিনিজ নিত্যপ্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় পন্য হিসাবে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হতে পারে না। ভাত-ডালের দামও নির্ধারিত হয় ওই দুই জ্বালানির মূল্যের উপর।
পদ্মশ্রী পেলেন কমলালেবু বিক্রেতা, ছোটদের স্কুল গড়েছেন তিনি, তাঁর পড়াশোনার দৌড় জানেন
ধরে নেওয়া যায়, এই প্রস্তাবে রাজ্যগুলির সহমত হবে না। যে কারণে পেট্রোপণ্যগুলিকে এখনও জিএসটি-র আওতায় আনা হয়নি। কারণ, কেন্দ্রীয় সরকারের মতো রাজ্যগুলিও পেট্রোপণ্যে করের বোঝা চাপানোকেই কোষাগার ভরার সস্তা রাস্তা হিসাবে বেছে নিয়েছে। বিপুল করের বোঝা না থাকলে পেট্রল ও ডিজেলের দাম এখন হত যথাক্রমে ৬৬ টাকা ও ৫৫ টাকা লিটার। এই তথ্য থেকে স্পষ্ট যে সব সরকারই পেট্রল – ডিজেলের দামের উপর কর-সন্ত্রাস চালাচ্ছে।
অথচ, পেট্রোপণ্য থেকে কর বাবদ সংগৃহীত অর্থ রোজগারের ভিন্ন পথ আছে। যেমন, বাংলায় জলকরের কথা ধরা যাক। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় এসেই পানীয় জলের উপর কর আদায় বন্ধ করে দিয়েছে। সদ্য প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায় কলকাতা পুরসভার মেয়র থাকাকালীন দলনেত্রীর সঙ্গে তাঁর যে বিষয়টি মতপার্থক্য প্রথমে প্রকাশ্যে আসে, পরে যা সম্পর্ক বিচ্ছেদের কারণ হয় তা ছিল মহানগরীতে জলকর আদায়ের সিদ্ধান্ত।
সরকার জলকর নেওয়া নিষিদ্ধ করেছে, অথচ, রাজ্যের শহরগুলিতে এখন বলতে গেলে কতিপয় মানুষ পুরসভার জল পান করেন। বহু পরিবারই পুরসভার জল ঘুর পথে কিনে খাচ্ছে। তাই আর্থিকভাবে অসচ্ছ্বল পরিবারগুলিকে বাদ দিয়ে বাকিদের থেকে জলকর নেওয়াই যায়। এরকম আর অনেক উপায় আছে যেখানে আয় বৃদ্ধির ন্যায্য পথ বেছে নিলে পেট্রল-ডিজেলের উপর থেকে করের বোঝা অনেকটাই কমিয়ে ফেলা সম্ভব। তাতে দু-বেলা ডাল-ভাত অন্তত নিশ্চিত করা সহজ। দরিদ্র নাগরিকের সেটাই মৌলিক প্রত্যাশা।