কুলদা রায়
আজ সকালে লাল ফোঁটা দেশি পুঁটি কিনতে হল। দুটো দেশি পুঁটি আর একটি তিত পুঁটির ফ্রোজেন ব্লক।
সরপুঁটি ছিল না। কাল আসবে। রাজপুঁটি নেই। থাইপুঁটি আছে। থাইপুঁটির স্বাদ কম।
বাড়ি গেলে বটতলার ভোরের বাজার থেকে দেশি পুঁটি কিনে আনতাম। দেখি মা
আজ সকালে লাল ফোঁটা দেশি পুঁটি কিনতে হল। দুটো দেশি পুঁটি আর একটি তিত পুঁটির ফ্রোজেন ব্লক।
সরপুঁটি ছিল না। কাল আসবে। রাজপুঁটি নেই। থাইপুঁটি আছে। থাইপুঁটির স্বাদ কম।
বাড়ি গেলে বটতলার ভোরের বাজার থেকে দেশি পুঁটি কিনে আনতাম। দেখি মা বঁটি ধুয়ে বাসে আছে। ভেজে দেবে। গরম গরম খাব।
আর বউদি রান্না করবে সরিষা পুঁটি।
আমার ছোটো মেয়ে এতসব পুরোনো কথা জানে না। তবে পুঁটি ভালবাসে।এই হল আমার মায়ের আসল কথা। তাঁর ধারণা ভাত না খেলে ভাতরাঙা হবে। শরীর ঠিক থাকবে না।
তারপর শুধাবে আমার মেয়ে দুটি কেমন আছে! আর কেমন আছে তাদের মা!
আমার মেয়েদের আমি মা বলে ডাকি। দুষ্টু মা। মিষ্টি মা। বড়ো মা। ছোটো মা। বড়ো মা আমার সবজি বাগান দখল করেছে। আর ছোটো মা হরণ করেছে স্বাধীনতা। সব কিছুতেই তার অনুমতি নিতে হয়।
খিদে পেলে বলতে হয়, খেতে যাই মা!
ও বলে, খেতে যাও।
আমি ঠিক তখনই খেতে যেতে পারি।
ঘুমোতে যাওয়ার আগেও এভাবে পারমিশন নিতে হয়।
আর তাদের মা হল এক কাঠি সরেস। তারা তিনজনে বন্ধু। হা হা হি হি। মেয়ে দুটো বলে, বাবা এতো সরল কেন?
তাদের মা-বন্ধু জবাব দেয়, সরল কই! বোকাসোকা।
এই তিন জনের সঙ্গে আরও উঁকি দেয়, আমার চার চারটি ভাগ্নি। অন্তু ডাক্তার। ফোন করে বলে, মামা ঠিক আছ তো! যেন ওষুধ লেখার জন্য রেডি। সঞ্চারি শোনায় মজার মজার খবর। শুধায়, মামা, রোদ্দুর রায় কি সত্যি তোমার পিসতুতো ভাই?
আমি হেসে বলি, কেন নয়!
তুতুন শোনায় গান। আর ছাদবাগানের ফুলেদের রূপকথা। ওর ধারণা এগুলো আমি কিচ্ছু জানি না।
উত্তর দিই, কিচ্ছু তো জানিই না।
ও গুরুগম্ভীর হয়ে বলে, সত্যি তুমি কিছুই জানো না মেজো মামা?
কী জানি-- কী জানি? তাই তো... কীইবা জানি আমি! 'নদীয়া কিনারে মেরা গাঁও'। আর কিছু জানি না।
খুলনায় পিংপিং কেক বানাতে বানাতে দূর থেকে আওয়াজ দেয়, কেক বানাচ্ছি মামা। এসে পড়। দেরি হলে পাবা না।
নো লেট।
আমার মেজো ভাইয়ের দুই মেয়ে। বড়োটা শুভ। খুব চুপচাপ। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে। ভ্রু দুটো সামান্য নড়ে। আর ছোটোটা পিউ। পিউ পিউ করে কথা বলে। বলে, ও জ্যাঠা কী কর?
আমি বলি, মা মা করি।
মা মা করা ছাড়া এ জগতে মধুরতম আর কিছু নেই।
...
এখন কুঁড়ি ফুটছে। হাওয়ায় পাতা দুলছে। একটা বালক রেণু রেণু বলতে বলতে ছুটে যাচ্ছে। তার মা পেছনে পেছনে মুখোশ হাতে হাঁপাচ্ছে।
আমি ঝিমুচ্ছি। আর ঠাকুরদা, বা তাঁর ঠাকুরদা, বা তাঁরও ঠাকুরদা এই সময় মাঠে মাঠে হালগরু আর দুএকটা শালিক পাখি-- কোন বাড়ি যাবা? কোন বাড়ি যাবা?
আমি কোন বাড়ি যেতে পারি হে শালিক, হে জালিক, হে মালিক...(লেখক নিউইয়র্ক নিবাসী গল্পকার)(স্কেচটি করেছেন তাজুল ইমাম)পরের পর্ব আগামী মাসের দ্বিতীয় রবিবার...
https://thewall.in/opinion/opinion-blog-joler-okkhor-part-sixteen-by-kuloda-roy/