
আমার সেজকাকু (অষ্টাদশ পর্ব)
সুদেব দে
প্রচুর মানুষ আমার কাছে জানতে চান আমার সেজকাকু মান্না দে’র রোজকার জীবন নিয়ে। জানতে চান, অনুষ্ঠানের দিন উনি কীভাবে দিন কাটাতেন? কীভাবে প্রস্তুতি নিতেন? সেসব কথা কিছু কিছু করে গতপর্বে বলেছি। আজ কথা বলব সেজকাকুর হিউমারসেন্স নিয়ে। কাকু সবসময় বলতেন একজন আর্টিস্ট কখনও সম্পূর্ণ হয়না, যদি তাঁর রসবোধ না থাকে।” এপ্রসঙ্গে একটা ঘটনা বলি। আমি তখন বেশ ছোটো। একটা অনুষ্ঠান হচ্ছিল উত্তর কলকাতার টালা পার্কে। কী অপূর্ব যে স্টেজ সাজিয়েছিল ওখানকার উদ্যোক্তারা! সেজকাকু তখন গান গাইতে মঞ্চে উঠেছেন। আর কানায় কানায় মাঠ পূর্ণ। সে কত হাজার মানুষ যে হবে! মাঠজুড়ে শুধু কালো কালো মাথা দেখা যাচ্ছে। সেজকাকু মঞ্চে উঠেই বললেন, “আমি তো আজ গান গাইব না। এত সুন্দর স্টেজ দেখেই আমি অভিভূত হয়ে গেছি। এই মনের পরিপূর্ণতা নিয়েই আজ বাড়ি ফিরে যাব।” সেকথা শুনে দর্শকদের মধ্যে হো হো করে কী আলোড়ন! সবাই চেঁচাচ্ছে ‘গুরু তোমাকে পেয়েছি। তোমাকে গান না শুনে ছাড়ব কী করে!’ তারপর সেই যে শুরু হল, গান শেষ হল প্রায় তিন ঘণ্টা পর৷ একজন মানুষ টানা তিনঘণ্টা ধরে মঞ্চে বসে গান করে গেলেন, টালা পার্কের সেই ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠানে। কাকার সঙ্গে সেদিন সঙ্গতে ছিলেন বিখ্যাত তবলাবাদক, আমাদের তবলার ঈশ্বর যাঁকে বলা যায়, সেই রাধাকান্ত নন্দী। এছাড়া অ্যাকোডিয়ানে ওয়াই এস মুলকি, স্প্যানিশ গিটারে খোকন মুখার্জি, বঙ্গো আর সাইড রিদমে ভ্যাকাদা আর এফেক্টসে টোপাদা।
সেজকাকু মঞ্চে গান গাইতে গাইতে একটু গরম হরলিক্স খেতেন। বাড়ি থেকে ফ্লাস্কে করে সেই গরম হরলিক্স নিয়ে যাওয়া হত। গান গাইতে গাইতে উনি যখন চাইতেন আমি পাশে বসে একটু করে হরলিক্স ঢেলে দিতাম। সেদিনও পাশে বসে আছি। খুব জমে উঠেছে গান। হঠাৎ দেখি গানটা থামিয়ে দিলেন সেজকাকু। মাঝপথে গান থামিয়ে হঠাৎ করে বলে উঠলেন, “রাতে মশা দিনে মাছি/ এই নিয়েই কলকাতায় আছি”। আসলে হয়েছে কি, একটা মাছি বারবার বিরক্ত করছিল। হাঁ করে তো আমাদের গান গাইতে হয়। তো গান গাইতে গাইতে সে মাছি প্রায় মুখে ঢুকে যাবার জোগাড়… কী রসবোধ ছিল সেজকাকুর! অনুষ্ঠানে তখন গান শুনছেন হাজার ত্রিশেক লোক। মাঝপথে গান থামিয়ে সেজকাকুর সেই মন্তব্য শুনে সে কী হাসির রোল দর্শকদের!
সেজকাকুর রসবোধ নিয়ে টুকরো টুকরো এমন অনেক ঘটনা রয়েছে। তার মধ্যে যেটা এক্ষুনি মনে পড়ছে সেটা বলি- সেটা ছিল প্রচন্ড শীতকাল। দক্ষিণ কোলকাতার বেহালা অঞ্চলে কোনও একটা অনুষ্ঠান হচ্ছে। সেখানে দেখি, যে বাঁশ থেকে লোক ঝুলছে। এত ভিড় হয়েছে প্যান্ডেলের ভিতরে তো তিলধারণের জায়গাও নেই৷ শুধু সেজকাকুকে একঝলক দেখবে বলে, তাঁর গান শুনবে বলে প্যান্ডেলের সাইডের বাঁশ ধরে ঝুলে আছে দর্শকেরা। প্রচণ্ড শীত সেদিন। ফুল ওভারকোট পরে গানবাজনা চলছে। এদিকে হাড়কাঁপানো ঠাণ্ডা। মঞ্চে গান গাইছেন সেজকাকু, হঠাৎ করে দর্শকদের ভিতর থেকে কে একজন কাকাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠেছে, ‘আহ গুরু! কী গাইছে দেখছ! আর মাঝেমধ্যে কেমন একটু করে মাল খাচ্ছে।’ কথাটা সেজকাকুর কানেও গেছে। গান শেষ হওয়ার পর তিনি হঠাৎ করে বলে উঠলেন, “আমি তো জানি বাঙালি আমাদের জাত। রবীন্দ্রনাথ, স্বামীজী, বিদ্যাসাগরের জাত। তাই জেনারেলি আমাদের বুদ্ধি একটু বেশিই হয়। কিন্তু ভাই তখন কে বললেন, আমি মুখটা একটু দেখতে চাই। ওই যে বললেন মাল খাচ্ছি, তা মাল দিয়ে ধোঁয়া ওঠে কী করে সেটা একটু বুঝিয়ে দিন তো। যুক্তিটা একটু বুঝতে চাই।” সে কথা শুনে হৈ হৈ করে উঠেছে প্যান্ডেলের শ্রোতারা৷ যে বলেছেন, তিনি তো বেকায়দায় পড়ে গেছেনই। আসলে অনেক শ্রোতারই একটা ভুল ধারণা থাকে, যে বড় শিল্পীমাত্রই মদ্যপান করেন। মঞ্চে বসে সেজকাকু খাচ্ছেন গরম হরলিক্স৷ ধবধবে ধোঁয়া বেরোচ্ছে৷ তাকেও মদ ভেবে নিয়েছে কিছু মানুষ। কিন্তু গান শেষে সেজকাকু যখন ঠাট্টার ছলে ওটাকেই ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন দর্শকদের মধ্যে রীতিমতো হৈ হৈ পড়ে গেল। আর যিনি ওই উক্তি করেছিলেন, তিনি যে সেদিন কোথায় মুখ লুকিয়েছিলেন, বলা মুশকিল।
রসবোধের কত কথা বলব! একবার শিলিগুড়িতে একটা অনুষ্ঠান হয়েছিল। সে অনুষ্ঠানে যদিও আমি ছিলাম না। পরে সেজকাকু বাড়ি ফিরে সব্বাইকে গল্পটা বলেছিলেন, তখনই আমি ঘটনাটা শুনি। তো সেই অনুষ্ঠানে বিখ্যাত কৌতুক শিল্পী জহর রায়ও উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানের দিন দুপুরবেলা হঠাৎ করে জহরবাবু সেজকাকুর ঘরে এলেন, এসে বললেন ‘মান্নাদা আজকে আমাকে আপনার সঙ্গে স্টেজে একটু সুযোগ দেবেন।’ সে কথা শুনে সেজকাকু বললেন ‘ওরে বাবা! আপনি স্টেজে থাকলে আমি গান গাইতে পারব না। আমার হাসির চোটে গান বন্ধ হয়ে যাবে।’ জহরবাবু বললেন, ‘আরেহ না না, আপনাকে একেবারেই বিরক্ত করব না। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে একটা ইনস্ট্যান্ট ভাবনা মাথায় এসেছে, আজ সেই কমিকটা আমি করব।’ সেজকাকু রাজি হলেন। জহর বাবু আরও বলে গেলেন ‘স্টেজে সারাক্ষণ আমায় ডাকতে হবে না। আপনি যখন আপনার সেই বিখ্যাত গান ‘না না না আজ রাতে আর যাত্রা শুনতে যাব না’ গাইবেন, শুধু তার আগে আমায় একটু ডেকে নেবেন স্টেজে। আর ওই গানটা আজ আপনাকে গাইতেই হবে। আপনার তো হাজার হাজার গান।’ জহর রায় যখন বলছেন সে কথা তো ফেলা যায় না। সেজকাকু প্রস্তাবে হাসিমুখে রাজি হলেন। বললেন ‘তথাস্তু। তাই হবে। কিন্তু আপনাকেও একটা কথা দিতে হবে৷ আপনি স্টেজে এমন কিছু করবেন না যাতে আমার খুব হাসি পায়। একবার যদি হাসি ধরে যায়, যেটা কিশোরের সঙ্গে রেকর্ডিং-এ হত, সেরকম হলে কিন্তু আমার হেসে হেসে পেটে ব্যথা হয়ে যাবে, গলা দিয়ে আর সুর বেরোবে না।’ জহর বাবু আবার সাততাড়াতাড়ি বলে উঠলেন ‘না না মান্নাদা, আপনাকে একটুও বিরক্ত করব না। আজ অনুষ্ঠানে এত লোক হয়েছে, অন্তত ৪০-৫০ হাজার লোক হবে, দেখবেন না তারা কেমন এনজয় করে।’
সেজকাকু যথারীতি মনে করে কয়েকটা অন্য গান গেয়ে তারপর রাধুবাবুকে, মানে বিখ্যাত তবলাবাদক রাধাকান্ত নন্দীকে ইশারা করেছিলেন এবার জহর রায়কে ডাকুন। আর একটা চেয়ার আগে থেকেই রেডি ছিল। ওই গানের মাঝখানে ‘বুঝলে নটবর’ বলে একটা কথা আছে। জহরবাবু মঞ্চে উঠেই সেজকাকুর কানে কানে বলে দিলেন গানের ওই বিশেষ জায়গায় ‘বুঝলে নটবর’ বলে আপনি একটু পজ নিয়ে নেবেন। তার ফাঁকে আমায় অল্প জায়গা দেবেন। কথামতো গান শুরু হল। গানের মাঝখানে কাকা ‘বুঝলে নটবর’ বলে যেই জহরবাবুর দিকে তাকিয়েছেন সঙ্গে সঙ্গে চেয়ারে বসা জহরবাবু বলে বসলেন, ‘হ্যাঁ বুঝলাম সেপ্টেম্বর’। সে কথা শুনে দর্শকদের মধ্যে সে কী হাসির রোল! সেই হাসি প্রায় পাঁচ মিনিট চলে। তারপর আবার গান শুরু হয়। আবার যখন অন্তরা ঘুরে ‘বুঝলে নটবর’ অংশটা আসে, সেবার আবার জহরবাবু বলে ওঠেন ‘বুঝলাম অক্টোবর।’ একবার সেপ্টেম্বর, একবার অক্টোবর। বুঝতে পারছেন কী সূক্ষ্ম রসবোধ! এই হলেন জহর রায় আর তাঁর হিউমার। তখনকার দিনের শিল্পীদের মধ্যে এই সুন্দর বোঝাপড়াগুলো ছিল।
আরেকটা অনুষ্ঠানের কথা মনে আছে। সেটা সম্ভবত হাওড়া শালকিয়ার দিকে কোথাও। স্পষ্ট মনে নেই। অনেক দিন আগের কথা৷ সেও দেখি কাতারে কাতারে লোকের মাথা। ক’হাজার যে হবে বলা মুশকিল! সেখানে স্টেজের ধারে একজন লোক দাঁড়িয়ে ছিলেন। উনি বোধহয় কমিটির খুব পরিচিত, তাই কেউ ওঁকে সরে যেতে বলছিল না। পরে আলটিমেটলি সরিয়ে দেওয়া হল৷ তো এই ভদ্রলোক গান শোনার আনন্দে খানিক মদ্যপান করেছিলেন। সেদিন আমিও স্টেজে ছিলাম। সেজকাকুর পিছনে বসে আমার যা কাজ সময়ে সময়ে গরম হরলিক্স ঢেলে দেওয়া আর গান শোনা, তার মধ্যে থেকে কিছু শেখার চেষ্টা। সঙ্গে ওইরকম সুন্দর একোডিয়ান, অমন সুন্দর তবলা- সঙ্গত যাঁরা করতেন তাঁরাও যে কত বড়মাপের শিল্পী ছিলেন তা বলে বোঝানো যায় না৷ যে লোকটি মদ্যপান করেছিলেন, তার কথা জড়িয়ে এসেছিল। জড়ানো গলায় স্টেজের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি যে ঘ্যানঘ্যান করে কী বলছিলেন, কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। ব্যাপারটা সেজকাকু অনেকক্ষণ ধরে লক্ষ করেছেন। তারপরে হঠাৎ একটা গান শেষ হতেই ঠিক ওই লোকটার মতো জড়ানো গলায় বলে উঠলেন ‘আরেহ বল তুমি কী গান শুনতে চাইছ বল! কী গান শুনতে চাও’। একদম মাতালের মতো ভঙ্গিতে সেই একই টোনে ওই লোকটাকে কপি করে কথাটা বলে উঠলেন সেজকাকু। সেজকাকুর গলায় অমন মাতালের মতো কথা শুনে ততক্ষণে হাসিতে ফেটে পড়েছে শ্রোতারা। লোকটাও অপ্রস্তুত। সেই অবস্থায় ভলিন্টিয়াররা এসে লোকটাকে তাড়াতাড়ি দূরে সরিয়ে নিতে গেল। এরপর সেজকাকু দেখি খাতা উল্টেপাল্টে বেশ কিছুটা সময় নিয়ে খুঁজে বের করলেন ‘অদ্বিতীয়া’ ছবিতে গাওয়া তাঁর সেই বিখ্যাত গান- ‘এই মাল নিয়ে চিরকাল যত গোলমাল’… একেই বলে প্রেজেন্স অফ মাইন্ড।
এই প্রেসেন্স অফ মাইন্ড, স্টেজে দাঁড়িয়ে দর্শকের সঙ্গে রিলেট করার যে দক্ষতা আমি সেজকাকুর মধ্যে দেখেছি তা নিয়ে মন্তব্য করাও মুশকিল। অন্য শিল্পীদের কথা বলব না আমি। অন্য সব শিল্পীকেই স্টেজ পারফর্ম করতে দেখেছি আমি। তাঁরা সকলেই স্টেজে উঠতেন, গান গাইতেন, চলে যেতেন, এক কিশোরকুমার ছাড়া। যদিও কিশোরকুমার বডিমুভমেন্ট নিয়ে নেচে নেচে গান গাইতেন। সেটা আবার কাকা করতেন না। সেজকাকু যখন মঞ্চে দাঁড়িয়ে গাইতেন, এমনি হারমোনিয়াম নিয়েই গাইতেন। কিন্তু তাঁর গলার যা কন্ট্রোল আর যা কৌতুকবোধ, তাতেই অনুষ্ঠান আরও জমে যেত, উপভোগ্য হয়ে যেত।
রসবোধ প্রসঙ্গে সেজকাকুর আরেকটা গল্প না বলে পারছি না৷ তখন বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলন বিরাট করে আয়োজিত হত। সেবারও ময়দানে আসর বসেছে বঙ্গসংস্কৃতি সম্মেলনের। ওই একমাত্র অনুষ্ঠান, যেখানে সেজকাকু আয়োজকদের অনুরোধে ধুতি পাঞ্জাবি পরে গাইতে যেতেন। আমারও মনে আছে, ওই ছোট বয়সে আমাকেও মা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিয়ে পাঠিয়েছিল সেজকাকুর সঙ্গে। সেই পরেই গেছিলাম। মঞ্চে গান গাইছেন কাকা। একটা গান চলতে চলতে গানের মাঝপথেই আচমকা সেজকাকু গেয়ে উঠলেন, ‘আগুন লেগেছে লেগেছে লেগেছে আগুন।’ আমি তো অবাক। আগের গান শেষ না করে অমন মাঝপথে উনি আরেকটা নতুন গান ধরে নিলেন কেন, কিছুই বুঝতে পারছি না। তারপর সামনে তাকিয়ে দেখি বেশ অনেকটা দূরে দাউদাউ দাউদাউ করে আগুন জ্বলছে। দর্শকাসনের অত লোক। তারা যাতে আগুন দেখে ভয় পেয়ে নিজেদের মধ্যে দৌড়োদৌড়ি না করে, যাতে কোনও দুর্ঘটনা না ঘটে তাই ওভাবে ওই গানটা শুরু করেছিলেন সেজকাকু। অত মানুষ, ছুটে পালাতে গিয়ে পদপৃষ্ট হয়ে বড়সড় বিপদ ঘটতে পারত। একজন মানুষের কতখানি উপস্থিত বুদ্ধি, তাই ভাবি! তাঁর গান শুনতে হাজার হাজার মানুষ এসেছে। তারা যাতে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য হুড়োহুড়ি করতে গিয়ে বিপদ ডেকে না আনে, তাই লোকেদের মনটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে রাখতেই সেজকাকু সেদিন আচমকা গেয়ে উঠেছিলেন ‘বসন্ত বিলাপ’ ছবির সেই বিখ্যাত গান৷ আগুনের দূরত্ব যদিও বেশ দূরে ছিল৷ কিন্তু প্যানিক ছড়িয়ে গান শুনতে আসা ওই হাজার ত্রিশেক লোকের যাতে কোনও অঘটন না ঘটে, তাই নিজের কণ্ঠের জাদুতে তাদের থামিয়ে রাখতে চাইলেন। আগুন দেখেই ধরে নিলেন ‘বসন্ত বিলাপ’ এর সেই বিখ্যাত আগুনের গান। কত যে মহত্ত্ব কী বলব!
এই বঙ্গ সংস্কৃতি সম্মেলনের আরেকটা বছর মনে আছে। সেটা ১৯৯০ সম্ভবত৷ সেদিনও অনুষ্ঠান ছিল ময়দানে। শিল্পী ছিলেন সেজকাকু আর মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়। সেদিন আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। আমরা যখন পৌঁছলাম তখন মঞ্চের চারপাশে প্রায় হাঁটুর কাছাকাছি জল। তার মধ্যেও দেখি বেশ ভিড়। বৃষ্টির দাপট দেখে অনুষ্ঠান উদ্যোক্তারা বলতেন, আজ প্রোগ্রাম আর হবেনা। ক্যানসেল করে দিতে হবে। সে কথা শুনে শ্রোতাদের মধ্যে থেকে কী প্রবল অবরোধ। তারা ছাতা মাথায় ওই এক হাঁটু জলে দাঁড়িয়েই বলছে, ‘ না, না, না, মান্নাবাবু যখন এসেই গেছেন, তখন আমাদের গান শোনাতেই হবে। ” বাঙালিদের সেই সঙ্গীতপ্রেম দেখে, সঙ্গীতশিক্ষার জন্য আমি আরও বেশি উদগ্রীব হয়েছিলাম। সেদিনটা আমার এখনও মনে পড়ে আর চোখে জল আসে। লোকের বসার জায়গা নেই। পায়ের নীচে ওই জল মাড়িয়ে মাথায় ছাতা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে বৃষ্টির মধ্যে গান শুনবে বলে। প্যান্ডেলের ভিতর জল পড়ছে৷ ওইভাবেই তারা মানবেন্দ্র বাবুর গান শুনলেন। তারপর ওই অবস্থাতেই প্রায় দেড়ঘণ্টা গান গাইলেন সেজকাকু। তিনি মঞ্চে উঠে বললেন, ‘আপনারা এত কষ্ট করে যখন গান শুনছেন, আমি তখন আপনাদের গান শোনাব না কেন! তবে আজকে দেড়ঘণ্টাতেই অনুষ্ঠান শেষ করুন। নাহলে এবার আপনাদের জ্বর-সর্দি-কাশি হয়ে যাবে…” আবার এটাও বলে দিলেন “বাড়িতে গিয়ে অবশ্যই গরম জলে চান টান করবেন, যাতে আপনাদের শরীর সুস্থ থাকে। কাকার মঞ্চজীবনের এইসব রিমার্কেবল ঘটনা আজও ইতিহাস হয়ে রয়েছে।
ক্রমশ…
মেল যোগাযোগ – [email protected]
https://three.pb.1wp.in/opinion/special-opinion-blog-about-manna-dey-by-his-nephew-sudeb-dey-part-seventeen/