Date : 14th May, 2025 | Call 1800 452 567 | [email protected]
ছোট মা থেকে বড় মা'য়ে উত্তরণ অঞ্জনার, 'কুসুম' ধারাবাহিকের ঝলকে 'বধূবরণ' ছায়াIPL 2025: ম্যাকগার্কের পরিবর্ত খুঁজে পেল ডিসি, দিল্লি এলেন মুস্তাফিজুর চাকরিহারা শিক্ষাকর্মীদের এপ্রিল থেকেই বিশেষ স্কিমে ভাতা দেবে সরকার, জানালেন মুখ্যমন্ত্রীদেশের সেনার জন্য একটাও শব্দ নেই আমিরের, ‘সিতারে জমিন পর’ বয়কটের ডাক নেটপাড়ায়'বন্দি বিনিময়ে' দেশে ফিরলেন পাক রেঞ্জার, আটারি-ওয়াঘায় হস্তান্তর হল বুধবারটেস্ট ক্রিকেটে বিশ্বরেকর্ড জাদেজার, এই কৃতিত্ব কপিল ক্যালিসদেরও নেই জামিন দিন! সুপ্রিম কোর্টের মামলার মধ্যেই ফের কলকাতা হাইকোর্টে পার্থস্ত্রীকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছিল, হাসপাতালের পুলিশ লকআপে মৃত্যু বৃদ্ধেরজাভেদ আখতারের শূলে 'হিন্দুবিরোধী' পাক সেনাপ্রধান, দেশের জওয়ানদের দেহ নেয়নি কারগিল যুদ্ধেJustice BR Gavai: বস্তি থেকে প্রধান বিচারপতির আসন! জাস্টিস গাভাইয়ের জীবন রূপকথা হলেও সত্যি
Lok Sabha Election 2024

প্রজ্ঞা, উমা, তোগাড়িয়াদের গুরুত্ব নেই, তাই কি বিদ্বেষ-বিভাজনে মুখ স্বয়ং মোদী

Advertisement

ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াতে কমিশনের বর্তমান কর্তাদের ভূমিকাও নজিরবিহীন।

প্রজ্ঞা, উমা, তোগাড়িয়াদের গুরুত্ব নেই, তাই কি বিদ্বেষ-বিভাজনে মুখ স্বয়ং মোদী

Advertisement

শেষ আপডেট: 15 May 2024 19:37

অমল সরকার

ভোটের ময়দানে বিদ্বেষ, বিভাজনের বিষ ছড়ানো ভারতে নতুন নয়। বিগত তিন-সাড়ে তিন দশক সম্পর্কে বলা যায় এই সময়কালের মধ্যে লোকসভা ও বিধানসভার কোনও নির্বাচনই এই অসুখ থেকে মুক্ত থাকেনি। এ বছর ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণার দিন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার তাই করজোড়ে নেতাদের অনুরোধ করেছিলেন দয়া করে ঘৃণা, বিদ্বেষ সৃষ্টিকারী ভাষণ থেকে মুক্ত থাকবেন। 

চার দফা ভোট শেষে বলা যায় তাঁর কথা কেউ কানে তোলেনি। আবার ঘৃণা বিদ্বেষ ছড়ানোর ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াতে কমিশনের বর্তমান কর্তাদের ভূমিকাও নজিরবিহীন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের জবাব তাঁর কাছে না চেয়ে কমিশন বিজেপি সভাপতিকে নোটিস ধরিয়েছে, যার নজির ইতিপূর্বে নেই। কারও কারও মতে, নির্বাচন কমিশন কার্যত বার্তা দিয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ না করাই ভাল, তারা কোনও পদক্ষেপ করবে না।

এবার আরও আশ্চর্যের হল, এই প্রথম দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সংখ্যাও বেশি, সাম্প্রতিক অতীতে যার নজির নেই। এমনকী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধেও এমন নজির ছিল না। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিরুদ্ধে সরাসরি মুসলিমদের নিশানা করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। মুসলিমদের সম্পর্কে বহিরাগত, বেশি সন্তান উৎপাদক ইত্যাদি মন্তব্য করে গোটা সম্প্রদায়কে এক পাশে ঠেলে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ক্রিকেটে প্রয়োজনে মারকুটে পঞ্চম ব্যাটসম্যানকে দিয়ে ইনিংস ওপেন করানো কিংবা ফুটবল ম্যাচে ডিফেন্সের প্লেয়ারকে ফরোয়ার্ডে খেলতে নামানোর মতো সরাসরি মোদীই বিতর্কিত মন্তব্যরে সূচনা করছেন। তাঁকে অনুসরণ করছেন অমিত শাহ, যোগী আদিত্যনাথেরা। 

এক প্রবীণ বিজেপি নেতার কথায় মোদী নির্ভরতা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে না বলাতে পারলে কোনও কথাই মানুষের মনে দাগ কাটছে না। তাই যা জেলা কিংবা রাজ্যের নেতারও বলার কথা নয়, সেটা প্রধানমন্ত্রীর মতো দলের মুখকে দিয়ে বলাতে হচ্ছে। মোদীর পূর্বসূরি অটল বিহারী বাজপেয়ী এই ধরনের কথা মুখে আনতেন না। বরং কোনও নেতা বলে ফেললে প্রকাশ্যে নিজের আপত্তির কথা জানিয়ে দিতেন।  

অথচ, এবার প্রধানমন্ত্রী বিরুদ্ধে এমনকী কংগ্রেসের ইস্তাহার নিয়ে মিথ্যাচারের যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে দলেরই বহু নেতা-কর্মী অসন্তুষ্ট। তিনি বলেছেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় এলে দেশের সম্পদ মুসলিমদের মধ্যে বিলিয়ে দেবে, সেটা তাদের ইস্তাহার পড়লেই বোঝা যায়। যদিও ইস্তাহারে এমন কোনও কথা নেই।

প্রধানমন্ত্রীর এই সব মন্তব্য নিয়ে দেশের প্রথম সারির সংবাদমাধ্যম তেমন কঠোর অবস্থান না নিলেও বহির্বিশ্বের মিডিয়ায় নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমেরিকার নিউ ইয়র্ক টাইমস, ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান, কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেল, অস্ট্রেলিয়ার এবিসি ভারতের নির্বাচন নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর বিতর্কিত মন্তব্যের উল্লেখ করেছে। বাদ নেই প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, বাংলাদেশও। 

বিজেপির অন্দরেও অনেকেই মনে করছেন, গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সরাসরি মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার অভিযোগ উঠলেও প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি তাতে রাশ টেনে দিয়েছিলেন। তিনি গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে বিজেপি এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদে সক্রিয় ছিলেন প্রবীণ তোগাড়িয়া, উমা ভারতী, গিরিরাজ সিংয়ের মতো নেতা-নেত্রী, যাদের বিরুদ্ধে বারে বারেই সাম্প্রদায়িক উস্কানিমূলক মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছিল। উমার রাজ্য মধ্যপ্রদেশের ভুপালের নেত্রী তথা সাংসদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রজ্ঞা সিং ঠাকুরকেও একই বন্ধনীতে রাখা হয়। তবে গিরিরাজ, প্রজ্ঞারা আজও সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মুখর থাকলেও তোগাড়িয়া, উমারা এখন আর সামনের সারিতে নেই। 

জাগ্রত হিন্দুত্বের মুখ বিএইচপির আন্তর্জাতিক শাখার একদা প্রধান প্রবীণ তোগাড়িয়ার বিরুদ্ধে এমনকী মুসলিমদের হিন্দু মহল্লায় ঘরবাড়ি কিনতে দিতে বাধাদানের ডাক দেওয়ার অভিযোগ আছে। অন্যদিকে, বাবরি মসজিদ ধ্বংসের দিন শুধু ঘটনাস্থলে থাকাই নয়, একের পর এক গম্বুজ ভেঙে পড়ার সময় নাচতে দেখা যায় মধ্যপ্রদেশের একদা মুখ্যমন্ত্রী উমাকে। একটা সময় প্রবীণ বিজেপি নেতা মুরলি মনোহর যোশীর কাঁধে উঠে পড়েন তিনি। সেই উমা কথায় কথায় মুসলিমদের সম্পর্কে আপত্তিজনক কথা বলতেন। 

বিহারের বেগুসরাইয়ের সাসংদ কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিং মুসলমানদের উদ্দেশে একবার হুঙ্কার ছাড়েন হয় মোদীকে সমর্থন করো, নয়তো পাকিস্তান চলে যাও। বিদ্বেষ, বিভাজন মূলক মন্তব্যের জেরে এখনও খবর হন গিরিরাজ। 

তবে তাঁর তুলনায় আর এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রজ্ঞা ঠাকুরের বিতর্কত মন্তব্যের তালিকা দীর্ঘ। মুন্বই হামলায় নিহত পুলিশ অফিসার হেমন্ত কারকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভুপালের সাংসদ প্রয়াতকে রাবণের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। হিন্দুদের সঙ্গে আগ্নেয়াস্ত্র রাখার পরামর্শ দেওয়া থেকে শুরু করে গরুর প্রস্রাব পান করলে করোনা সারে বলে মন্তব্য করে দলকে অস্বস্তিতে ফেলেছেন তিনি। বিতর্কিত নেত্রীকে এবার ভুপালে টিকিট দেয়নি দল। যদিও ২০১৯-এর ভোটে দিগ্বিজয় সিং প্রভাবশালী প্রবীণ কংগ্রেস নেতাকে হারিয়েছিলেন।

আসলে তোগাড়িয়া, উমা ভারতীর মতো নেতা-নেত্রীদের আড়ালে পাঠিয়ে দিয়ে বিজেপি-সহ হিন্দুত্ববাদী শিবির খানিক বিপাকে পড়েছে। দলের অন্দরের খবর, এই ব্যাপারে মোদীর বাসনাতেই এতদিন সায় দিয়েছে দল। বিজেপির অন্দর মহলের খবর, হিন্দুত্বের মুখ হিসাবে দ্বিতীয়, তৃতীয় কেউ তাঁকে ছাপিয়ে যাক, চাননি মোদী। তাই গুজরাতের বাসিন্দা হলেও তোগাড়িয়াকে কোনও দিনই পছন্দ নয় প্রধানমন্ত্রীর। অপছন্দ উমাকেও। কারণ, সোজাসাপটা কথা বলায় অভ্যস্থ উমা সাফ বলেছেন, বিকাশ পুরুষ নন, মোদী আসলে বিনাশ পুরুষ। দলে গুরুত্বহীন এই নেত্রীও। গত বছর মধ্যপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের আগে ভেসে ওঠার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। টিকিট দেওয়া দূরের কথা, দলের স্টার ক্যাম্পেনারের তালিকাতেও স্থান হয়নি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর। 

এই পরিস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদীর দশ বছরের কাজকে মানুষের কাছে তুলে ধরে তৃতীয়বারের ভোট বৈতরণী পেরনো সম্ভব বলে মনে করেছিল পদ্ম-শিবির। সেই মতো ‘মোদীর গ্যারান্টি’ কথাটিই হয়ে ওঠে দলের স্লোগান। মোদীর গ্যারান্টির কথাই বলা হয় বিজেপির নির্বাচনী ইস্তাহার তথা সংকল্পপত্রে। তাতে ২৫টি সংকল্পে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে মোদী সরকারের দশ বছরের কাজের কথা বলা হয়েছে। নতুন প্রতিশ্রুতি বিজেপি দেয়নি। 

কিন্তু প্রথম দুই দফা ভোট কম পড়ায় বিজেপি বুঝেছে মোদীর উন্নয়ন বটিকা মানুষ গিলছে না। অনেকেই মনে করছেন, তাই শুরু হয়েছে ধর্মের সুড়সুড়ি দেওয়া ভাষণ। তৃতীয় দফার ভোটের আগে থেকে তাই চড়া সুরে খুল্লামখুল্লা সাম্প্রদায়িক লাইনে হাঁটা শুরু করেছে দল। আর সেই কাজে নজিরবিহীনভাবে সামনের সারিতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কারণ, এছাড়া উপায়ও নেই। আর প্রধানমন্ত্রীর এই ভূমিকা ঘিরে দল গুরুতর প্রশ্নের মুখে পড়েছে। রাজনৈতিক মহলের একাংশ বলছে, ব্র্যান্ড মোদী সম্পদ, একই সঙ্গে বোঝাও। যদিও একথাও ঠিক, নির্বাচন কমিশন এখনও পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তারা যেমন ভাষণের নিন্দা করেনি, তেমনই ক্লিনচিটও দেয়নি। ফলে আইনের চোখে প্রধানমন্ত্রী দোষী সাব্যস্ত নন, অভিযুক্ত মাত্র। তবে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এমন গুরুতর অভিযোগ ওঠার নজির নেই।

Advertisement

Advertisement


ভিডিও স্টোরি