শেষ আপডেট: 11th August 2023 05:37
স্বাধীনতা ৭৭: সাংবাদিকদের এখন আর স্বাধীনতা, অধিকারের প্রয়োজন পড়ে না
অমল সরকার
আজ স্বাধীনতার (Independence) ৭৬তম বর্ষপূর্তি, ৭৭তম জন্মদিন। আমরা যাঁরা স্বাধীনতার পর জন্মেছি, তাঁরা ২৫, ৫০ এবং ৭৫, এই তিনটি বিশেষ বর্ষ উদযাপন এবং দেশের অবস্থা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার সুযোগ পেয়ে ধন্য। রজত জয়ন্তী পালনের সময় দেশ-কাল-সমাজ বোঝার বয়স হয়নি। হীরক জয়ন্তীর মতো সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপনের নানা অনুষ্ঠান সাংবাদিক হিসাবে কভার করার সৌভাগ্য হল। সাংবাদিকের (Journalist) চোখ-কান দিয়েই দেখলাম বিগত পঁচিশ বছরকে। আর এই পঁচিশ বছরে সংবাদমাধ্যম (Media) নিয়ে দু’জন অসাংবাদিকের ধারাবিবরণী শোনার দুর্লভ সৌভাগ্য আমার ঝুলিতে—যে বিবরণীর প্রতিবাদ্য হল, সাংবাদিকতা—তুমি আর নেই সে তুমি।

দু’জনই আমার প্রতিবেশী। একজন পূর্ণেন্দু গঙ্গোপাধ্যায়। রাজ্য সরকারের বাণিজ্য-কর দফতরের পদস্থ আধিকারিক ছিলেন। বছর কয়েক আগে মারা গিয়েছেন। অবসর জীবনের অন্যতম সঙ্গী ছিল খবরের কাগজ। দ্বিতীয় জন দিলীপ সমাজদার, কলকাতা পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। পূর্ণেন্দুকাকুর মতো দিলীপদাও স্বাধীনতাকে সংবাদপত্রের পাতায়, টেলিভিশনের পর্দায় হাতড়ে বেড়ান।
পূর্ণেন্দুকাকু দেখা হলে কথায় কথায় বলতেন, ‘আচ্ছা, বলতে পারো, খবরের কাগজ কেন ক্রেতা সুরক্ষা আইনের আওতায় পড়বে না। আমরা পয়সা দিয়ে কাগজ কিনি কি বিজ্ঞাপন পড়ব বলে? কাগজে খবর কই?’ কখনও বলেছেন, ‘কাগজের পাতা জুড়ে শুধু সরকারি বুলি। এসব বন্ধ করার কোনও আইন নেই?’
দিলীপদা অবসর সময়ে খবরের কাগজ পড়েন, টিভির খবর দেখেন। একটা সময় দিল্লি, মুম্বইয়ের ইংরেজি দৈনিক, নামজাদা ম্যাগাজিন ইত্যাদি পড়তেন। সাংবাদিকদের মেরুদণ্ডের অস্তিত্ব নিয়ে বরাবর ঘোরতর সংশয়ী। আজ স্বাধীনতা দিবসের দিনে বলি, আমাদের অনেকেরই ওটা নেই।
দিলীপদার সঙ্গে দিন কয়েক আগে দেখা হতে বললেন, ‘টিভিতে সেদিন ওঁর প্রেস কনফারেন্স দেখছিলাম। সাংবাদিকেরা কেউ তো কোনও প্রশ্ন করে না। উনি নিজেই যা বলার বলে উঠে গেলেন। কেউ তো কিছু জানতে চাইল না…।’ আরও বললেন, ‘আর মোদী সাহেব তো শুনেছি, প্রেসই (প্রেস কনফারেন্স) করেন না।’ বহু বছর আগে দিলীপদার মুখেই প্রথম ন্যাশনাল হেরাল্ড কাগজের কথা শুনি।
সেই ন্যাশনাল হেরাল্ডের সম্পত্তির হাত বদলে অনিয়মের অভিযোগের তদন্তে সনিয়া ও রাহুল গান্ধীকে জেরা করেছে ইডি। পরাধীন ভারতে পত্রিকাটির প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক ছিলেন স্বাধীন দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরু। যাঁর সম্পর্কে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী একপ্রকার ‘কেষ্টা বেটাই চোর’ অবস্থান নিয়েছেন। সু়যোগ পেলেই দেশের নানা সমস্যার দায় চাপিয়ে দেন প্রথম প্রধানমন্ত্রী উপর।
আরও পড়ুন: রেডরোডে পতাকা উত্তোলন করবেন মুখ্যমন্ত্রী, টুইটারে দিলেন দেশাত্মবোধের ডাক
স্বাধীনতা প্রাপ্তির বছর কয়েক আগে ন্যাশনাল হেরাল্ডের সম্পাদকের দায়িত্ব নেহরু সঁপেছিলেন যুগ্ম সম্পাদক তথা প্রবাদপ্রতিম সাংবাদিক এম চলপতি রাউয়ের হাতে। কিছুদিন পর একটি খবর নিয়ে ব্রিটিশ সরকার কড়া মামলা ঠুকল পত্রিকার বিরুদ্ধে। সম্পাদকের জেলযাত্রা নিশ্চিত। নেহরু তখন জেলে। পত্রিকার লোকজন পরামর্শ চাইলেন, কী করণীয়। ক্ষমা চেয়ে মিটিয়ে নেওয়া হবে কি? নেহরু পরামর্শ দিলেন, কখনই না। সাংবাদিকতার অধিকার, সম্মান নিয়ে আপোস করা চলে না। সম্পাদককে জেল যেতে হলে সেটাই হবে বরং গর্বের।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর নেহেরু তাঁর কথা অনেকটাই রেখেছিলেন। নানা সময়ে মতবিরোধ, বাদ-প্রতিবাদ হলেও সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের স্বাধীনতা হরণের কোনও প্রাতিষ্ঠানিক চেষ্টা করেননি। বরং বহু ক্ষেত্রে ধরে আনতে বললে বেঁধে আনা আমলাদের থামিয়েছেন।
নোংরা রাজনীতি করতে গিয়ে ৫৮ বছর আগে প্রয়াত যে মানুষটিকে নরেন্দ্র মোদী জীবিত করে তুলেছেন, স্বাধীনতার ৭৬তম বর্ষপূর্তিতে দেশের সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদেরও তাঁরই স্মরণ নেওয়া প্রয়োজন হয়ে পড়েছে ভিন্ন এক কারণে। তিনি প্রথম, তিনিই শেষ প্রধানমন্ত্রী যিনি সাংবাদিকের উপেক্ষা করা দূরে থাক, সাংবাদিক বৈঠকে এবং ঘরোয়া আড্ডায় যাঁর সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক, এমনকি ঝগড়াঝাটি করা যেত। তিনি প্রথম, তিনিই শেষ প্রধানমন্ত্রী, যিনি প্রতিমাসে নিয়ম করে সাংবাদিক বৈঠক করতেন। অর্থাৎ দেশবাসীর কাছে জবাবদিহি করতেন।
দ্য স্টেটসম্যান ও দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’র সাংবাদিক প্রয়াত ইন্দার মালহোত্রা তাঁর একটি লেখায় বর্ণনা করে গিয়েছেন, তিব্বতে চিনের সেনা সমাবেশকে সমর্থন এবং ভারতের বিরোধিতার নিন্দা করে সাংবাদিক জি কে রেড্ডির নিবন্ধ প্রকাশিত হলে সরকারি অফিসারেরা তাঁকে সরকারের দেওয়া বাংলো ছাড়া করতে উঠে পড়ে লাগেন। জানতে পেরে নেহরু তা আটকে দেন। সমালোচনাকে শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো বেঁচে থাকার অনুষঙ্গ মনে করতেন বলেই, প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট কেশব শঙ্কর পিল্লাইকে নেহরু বলতে পেরেছিলেন, ‘শঙ্কর, আমাকেও কখনও রেহাই দিও না।’
সাংবাদিক মালহোত্রা দেখিয়েছেন, সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় নেহরুর তৈরি ধারা কীভাবে পরের প্রধানমন্ত্রীদের হাতে ক্ষতবিক্ষত হয়েছে। নিয়ম করে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হওয়ার সাহস, ধৈর্য দেখাননি কোনও প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নরেন্দ্র মোদীর মতো কেউ সে ধারাকে হত্যা করেননি। যে মনমোহন সিংকে মোদী ‘মৌনী মোহন’ বলে বিদ্রূপ করতেন, তিনিও সাংবাদিকদের সঙ্গে মিলিত হতেন বছরে অন্তত দু’বার। সাড়ে আট বছরের প্রধানমন্ত্রিত্বে মোদী একদিনের জন্যও সাংবাদিকদের মুখোমুখি হননি। কখনও সখনও কোনও সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন, যেগুলি বলতে গেলে আগের রাতে প্রশ্নপত্র হাতে পেয়ে পরীক্ষায় বসার মতো। বাকিদের প্রধানমন্ত্রীর কথা জানার উপায় দিনভর টুইট আর মাস শেষে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান।
সাংবাদিক বৈঠকে যেমন, প্রধানমন্ত্রী কী খেতে ভালবাসেন, কোন ধরনের পোশাক পছন্দ, এসব জিজ্ঞাসা করার সাংবাদিকেরা থাকেন, তেমনই থাকেন, যাঁরা জানতে চাইবেন-
- কত দেশবাসী একবেলা না খেয়ে থাকেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের খোঁজখবর রাখেন কিনা।
- পেট্রল-ডিজেলের দামবৃদ্ধি, জিনিসপত্রের অগ্নিমূল্যের কোনও প্রভাব প্রধানমন্ত্রী নিজের পকেটে টের পেয়েছেন কি?
- দেশ জুড়ে ঘৃণা ভাষণে তিনি কি অনুতপ্ত?
- সরকারি কল্যাণ প্রকল্পে ভর্তুকি নাকি শিল্পমহলকে আর্থিক সুবিধা, কোন খাতে সরকারের কোষাগারের খরচ বেশি, ইত্যাদি। এমন প্রশ্ন ধেয়ে আসাও অসম্ভব নয়, প্রধানমন্ত্রী যে বিয়ে করেও স্ত্রী’র সঙ্গে সম্পর্ক রাখেন না, তা কোন সনাতন সংস্কৃতির শিক্ষা?
কিন্তু স্বাধীনতার ৭৫ বছরে ভারতের সাংবাদিকদের প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করার অধিকার নেই। তাতে গোটা সাংবাদিককূল মুষড়ে পড়েছে, তা নয়। টিভির পর্দায় দেখা গিয়েছে, দীপাবলিতে প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের একাংশের তাঁর সঙ্গে সেলফি তোলার হুড়োহুড়ির দৃশ্য।
নেহরুর কথায় ফিরি। পরাধীন দেশে তিনি বলেছিলেন, প্রয়োজনে সম্পাদক জেলে যাবেন, তবু সাংবাদিকতার অধিকারের ধ্বজা নতজানু করা যাবে না। নেহরু, গান্ধী, বাল গঙ্গাধর তিলকের মতো একাধারে স্বাধীনতা সংগ্রামী ও সাংবাদিককে ব্রিটিশ সরকার দেশদ্রোহের যে ধারায় জেলে পুরেছিল, সেই একই আইনে স্বাধীন দেশে বহু সাংবাদিক আজ জেল বন্দি। ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ইমার্জেন্সির সময় সম্পাদক-সহ হাজার দুই সাংবাদিককে জেলে ভরে পুলিশ। সরকার বিরোধী লেখালেখির জন্য প্রায় সাত হাজার লেখককেও জেলের ভাত খেতে হয়।
জরুরি অবস্থা ছিল স্বাধীন ভারতে কলঙ্কময় এক অধ্যায়। যদিও বিশেষ রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় সাংবিধানিক ও আইনি পথে সেই অন্ধকারের দিকে দেশকে ঠেলে দিয়েছিলেন ইন্দিরা। আজ অঘোষিত জরুরি অবস্থার স্বরূপটি ভিন্ন। স্বাধীনতার ৭৭তম জন্মলগ্নে দেশ প্রত্যক্ষ করছে, সংবাদমাধ্যমের অধিকার হরণের দীর্ঘমেয়াদি, সুপরিকল্পিত ব্যবস্থা কী নিপুণ কৌশলে বাস্তবায়িত হচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সংস্থা রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস-এর সর্বশেষ প্রেস ফ্রিডম ইনডেক্সে ১৮০টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান দেড়শ নম্বরে। তালিকায় আমাদের কাছাকাছি যে দেশগুলি আছে, সেই মায়ানমার, উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে গোটা বিশ্ব জানে সেখানে মানবাধিকার, আইনের শাসন, স্বাধীন সংবাদমাধ্যমের কোনও বালাই নেই। সংবাদপত্র মানে সরকারের কথা ছাপার কাগজ।
বলাই বাহুল্য, মোদী সরকার এই ইনডেক্স মানে না। যেমন তারা হাঙ্গার ইনডেক্স, অর্থাৎ ক্ষুধার্তের সংখ্যায় দেশগুলির মধ্যে ভারতের অবস্থান নিয়ে ঘোরতর সন্দিহান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তো বলেই দিয়েছেন, মানবাধিকারের একটি ভারতীয় মানদণ্ড তৈরি করা দরকার। অর্থাৎ মানবাধিকারের কোনও আন্তর্জাতিক মাপকাঠি হাজির করে চিৎকার করা চলবে না।
অমিত শাহের এই কথার পর নিশ্চিত করে বলা যায় বিষয়টি মানবাধিকারেই থেমে থাকবে না। কারণ কোনও অধিকারই স্বতন্ত্র নয়, বরং পরস্পর সম্পর্ক যুক্ত। নাগরিকের অধিকার ছাড়া স্বাধীন সংবাদমাধ্যম সোনার পাথরবাটি মাত্র। উল্টোও সমান সত্য। সরকারের সমালোচনাকে রাষ্ট্রদ্রোহ বলে দেগে দিয়ে জেলে পচিয়ে মারা হচ্ছে শত শত নিরীহ নাগরিককে।
ভুল, আপত্তিজনক খবরে প্রতিবাদপত্র পাঠানোর পরিবর্তে সরকারি বিজ্ঞাপন বন্ধ, এটাই এখন দস্তুর। অন্যদিকে, মিথ্যা মামলায় জেলে ঢোকানো হচ্ছে, নীতিনিষ্ঠ, সৎ, নির্ভীক সাংবাদিককে। দেশদ্রোহিতার মামলা দিয়ে আটকে রাখলে তো কথাই নেই। একজনকে শায়েস্তা করে হাজার জনকে নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া, ক্রমে একাংশকে তাঁবেদার বানিয়ে নেওয়ার কৌশল।
আশ্চর্যের হল, জেলবন্দি সাংবাদিকদের মুক্তি নিয়ে মালিকদের কোনও মাথাব্যথা নেই। নেই সাংবাদিকদের প্রতিবাদ। উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের ধর্ষণ-হত্যার ঘটনা কভার করতে যাওয়া কেরলের সাংবাদিক সিদ্দিক কাপ্পান মাসের পর মাস জেল বন্দি। দেশ প্রতিবাদহীন। ফ্যাক্ট চেকার সাংবাদিক মহম্মদ জুবেইরকে গ্রেফতার করা হয় ২০১৮-র সালে করা টুইট নিয়ে। তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে উত্তরপ্রদেশেও। আদালতে উত্তরপ্রদেশ সরকার বলে, টুইট করবেন না, একমাত্র এই শর্তে জামিন দেওয়া যেতে পারে। সেকথা শুনে বিচারপতি বলেন, সে কী, এ তো সাংবাদিকের কলম কেড়ে নেওয়ার শামিল। আদালত কী করে এমন শর্ত চাপাতে পারে?
এমার্জেন্সি জারি করে সাংবাদিকদের কলম কেড়ে নিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। সেই কলমের খোঁচাতেই ক্ষমতার আসন থেকে ছিটকে যেতে হয়েছে তাঁকে। ফলে বলাই যায়, ঘোষিত এমার্জেন্সির চেয়ে অঘোষিত জরুরি অবস্থা অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।
পবন জয়সওয়ালকে বাচ্চা বয়সে ক্যান্সার কেড়ে নিল কিছুদিন আগে। চিকিৎসা করানোর পয়সা ছিল না উত্তরপ্রদেশের একটি দৈনিকের এই জেলা সংবাদদাতার। ক্যান্সার কেড়ে না নিলে আরও নির্মম পরিণতিও হতে পারত তাঁর। স্কুলের মিড-ডে মিলে রুটির সঙ্গে সামান্য চিনিও নয়, নুন দেওয়া হয়েছিল বাচ্চা পড়ুয়াদের। সেই দৃশ্য ভিডিও-খবর করেছিলেন তিনি। যোগী আদিত্যনাথের সরকার তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে খবর করার অভিযোগে দেশদ্রোহিতার মামলা ঠুকে দেয়।
করোনা মহামারী, লকডাউনে কয়েক হাজার সাংবাদিকের চাকরি গিয়েছে। বিগত কয়েক বছরে কাছাকাছি সংখ্যায় সাংবাদিক কাজ হারিয়েছেন ম্যানেজমেন্টের কথায় সরকারের তাঁবেদারি না করায়। অর্থহীন, প্রশ্নহীন সাংবাদিকতা মানাতে না পেরে পেশা বদল এখন মিডিয়ায় চালু প্রবণতা।
গৌরী লঙ্কেশের মতো নামজাদা সাংবাদিক, এমএম কালবুর্গির মতো লেখক, নাগরিক সমাজের পরিচিত মানুষের খুন নিয়ে দেশে হইচই হয় বটে। সেগুলি এখন আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিগত কয়েক বছর যাবৎ সাংবাদিক এবং সমাজকর্মী খুনও বেড়ে গিয়েছে। খুনিদের তালিকায় মাফিয়া, প্রমোটার, ঠিকাদার, অসাধু রাজনীতিকের পাশাপাশি ধর্মীয় মৌলবাদীরাও আছে।
সংখ্যাটা আরও অগুনতি হতে পারত। হয়নি, কারণ, সাংবাদিকতারই আমূল বদল ঘটে গিয়েছে। জনস্বার্থবাহী ইস্যু তুলে ধরে সরকারকে জবাবদিহি করতে বাধ্য করার সাংবাদিকতা অতীত। মিডিয়া মেতে থাকে, আমজনতাকে মাতিয়ে রাখে শাসকের স্বার্থে, শাসকের তৈরি ইস্যু নিয়ে। প্রশ্ন করার প্রয়োজন তাই ফুরিয়ে গিয়েছে। আর প্রশ্ন করাটাই সাংবাদিকের সবচেয়ে বড় কর্তব্য, সেই কারণে প্রধান অধিকার। দুর্নীতির পর্দা ফাঁস, কেলেঙ্কারির তদন্ত মিডিয়ার সিলেবাসে তেমন নেই। মিডিয়া কারও চুরি ধরে না। বরং, চোর-ডাকাতদের পাশাপাশি বসিয়ে আনন্দদায়ক ঝগড়া বাঁধায়। চুরি, ডাকাতি, খুন, ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে মিডিয়ার বিতর্ক এখন সান্ধ্যকালীন বিনোদন। ফলে সাংবাদিকতা করার জন্য এখন আর অধিকার, স্বাধীনতা, এসবের খুব একটা প্রয়োজন নেই।
মতামত ব্যক্তিগত