শেষ আপডেট: 12th February 2023 07:03
এই বয়সেও এত খিদে? এত উত্তেজনা? এত স্পর্ধা দেখানোর উদ্যম?
সম্ভব। সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য (Gautam Bhattacharya) তাঁর বই ‘অফ স্ট্যাম্পের বাইরে’তে যা যা লিখেছেন তা কার্যত সময়ের দলিল হয়ে থাকবে (Book Review)। গৌতম ভট্টাচার্য বাংলা তথা ভারতের ক্রীড়াক্ষেত্রে ‘জিবি’ নামেই পরিচিত। শুধু ক্রীড়া ক্ষেত্র নয়। এন্টারটেইনমেন্টেও তাই। সেই তিনি তাঁর নতুন বইয়ের পাতায় পাতায় কন্ট্রাস্ট ঘটিয়েছেন। দেখিয়েছেন গত চার দশকে নানান ক্ষেত্রের বিবর্তন। বিশেষ করে সাংবাদিকতার ধরন কী ভাবে বদলে গিয়েছে, নতুন নতুন মাধ্যম যে সব চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে তাকে কীভাবে সামলাতে হয়েছে। সেইসঙ্গে এও দেখিয়েছেন সাংবাদিকের দেখার চোখ কীভাবে তৈরি করতে হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে বদলে ফেলতে হয় রিপোর্টিংয়ের আঙ্গিক।
এই যে কাতার বিশ্বকাপ হয়ে গেল। সেখানে পৌঁছেছিলেন জিবি। কিন্তু ফেসবুকে লেখার অপরাধে পর্তুগাল-সুইৎজারল্যান্ড ম্যাচে তাঁকে ঢুকতে দেয়নি ফিফা। স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ‘আপনি ব্ল্যাক লিস্টেড।’ প্রাথমিকভাবে মুষড়ে পড়লেও উঠে দাঁড়িয়েছিলেন গৌতম। স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন। তর্ক, মেল, যুক্তি—বাঙালি সাংবাদিকের সামনে মাথা ঝুঁকিয়েছিল জুরিখ।
৫১টি অধ্যায় রয়েছে ‘অফ স্ট্যাম্পের বাইরে’তে। তার প্রতিটা পাতাই যেন রোমাঞ্চে ভরা। অনেকে বলেন, সাংবাদিকদের একটা বয়সের পর অ্যাড্রিনালিন ক্ষরণ হয় না। কিন্তু জিবি যেন প্রতিদিন লেখা শুরু করেন এই ভেবে যে, এই তো কাল কেরিয়ার শুরু হল! সেই ক্ষিপ্রতা নিয়েই।
বহু প্রাজ্ঞ সাংবাদিক বলেন, এই পেশা ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্টের মতো। আপৎকালীন পরিস্থিতি অনুযায়ী কাজ করতে হয়। গভীর ঘুমের মধ্যে উঠে ছুটে যেতে হয় স্পট রিপোর্টিংয়ে। আর কাজ হাসিল করার জন্য নিতে হয় কৌশল। ঠিক যেমন এই বইয়ে গৌতম লিখেছেন, ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁকে ডেকেছিলেন শর্মিলা ঠাকুরের ইন্টারভিউ করার জন্য। কলকাতায় তখন ঋতুর ছবির শ্যুটিং করছেন রিঙ্কু। কিন্তু সেই সাক্ষাৎকারে শর্মিলা যেসব জবাব দিচ্ছিলেন, তা কাঠ কাঠ। পাঠক পড়বেই না। তাই শর্মিলার মুড স্যুইং করাতে একটা গুগলি দিয়েছিলেন গৌতম। কী? হঠাৎ প্রশ্ন করে বসেন, শারজার হোটেলে আপনার যে কানের দুল হারিয়ে গিয়েছিল, যা খুঁজতে হন্যে হয়েছিলেন টাইগার পতৌদি, সেই দুলটা আদৌ আপনি পেয়েছিলেন?
সে অনেক বছর আগের কথা। শর্মিলাও অবাক হয়ে যান—এই লোকটা তাঁর দুল হারানোর গল্প জানলেন কীভাবে? তারপর খোলসা করেন গৌতম। পরের দিন ফের যখন গৌতম শর্মিলার বাকি সাক্ষাৎকার নিতে পৌঁছেছিলেন স্টুডিওয়, আগের দিনের মতো আর কাঠ কাঠ জবাব আসেনি। অনর্গল কথা বলে গিয়েছিলেন। যা থেকে ‘এক পৃথিবী’ লিখে ফেলা যায়!
শেষ ৪০ বছরে কী কী হয়েছে? সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, খেলাধূলা, দেশ, রাজ্য, জীবনযাপন, পোশাক, ভাষা, মাধ্যম—সব বদলে গিয়েছে আমূল। মৌলিক পরিবর্তন ঘটে গিয়েছে দুনিয়াজুড়ে। আর এই চার দশক ধরে সময় যেভাবে বদলেছে বদলেছে সংবাদমাধ্যম, সাংবাদিকতাও। প্রিন্ট, টেলিভিশন, ডিজিটাল—গৌতম সেই বিবর্তনের রোদ-ছায়া, আলো-অন্ধকার তুলে ধরেছেন তাঁর বইয়ে।
সুমন লিখেছিলেন ‘কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়/ কতটা পথ পেরোলে পাখি জিরোবে তার ডানা।’ সাংবাদিক গৌতম ভট্টাচার্য তাঁর নতুন বই ‘অফ স্ট্যাম্পের বাইরে’তে পাতায় পাতায় জানান দিলেন, যতদিন হাতে কলম কিংবা কীবোর্ড, যতদিন চিন্তার ডানা ঝাপ্টাবে ততদিন জিরোনোর কোনও অবকাশ নেই।
বইয়ের নাম: অফ স্টাম্পের বাইরে
লেখক: গৌতম ভট্টাচার্য
দীপ প্রকাশন (দীপ্তাংশু মণ্ডল)
বইয়ের দাম: ৪০০ টাকা