
বিজয়ীপক্ষ উদ্ধত হয়ে উঠলে বিপদ
এই জয়ের পরে তৃণমূলকর্মীরা যদি সত্যিই আরও বিনয়ের সঙ্গে কাজ করেন, তাহলে তো ভালই। কিন্তু অভিজ্ঞতা বলছে অন্য কথা। গত বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের বিজয়ের পরে দলের কর্মীদের মধ্যে বিনয়ের চিহ্নমাত্র দেখা যায়নি। বরং তাঁরা আরও উদ্ধত হয়ে উঠেছিলেন। বিরোধীদের ওপরে হামলা, খুনখারাপি, ঘর জ্বালানো, এসবই হয়েছিল। এবার তেমন কিছু না হলেই মঙ্গল।
আসলে আমাদের দেশে প্রতিটি দলই ভোটে জেতার পরে ভেবে নেয়, যা খুশি তাই করার লাইসেন্স পেয়ে গিয়েছে। বিরোধীদের ওপরে গায়ের ঝাল মেটায়। অতীতে বামেরাও এমন করত।
সংবাদ মাধ্যমে ইতিমধ্যে তৃণমূলের জয়কে বলা হচ্ছে, ‘কলকাতায় সবুজ ঝড়’। কিন্তু একটা কথা মনে রাখতে হবে, এই ‘ঝড়ের’ মধ্যেও কিছু মানুষ বিজেপি, সিপিএম অথবা কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন। তাঁদেরও মতামতের দাম আছে। গণতন্ত্রে প্রত্যেকেই মতপ্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু বিজয়ী দলের কর্মীরা অনেক সময় বিরোধীদের মতপ্রকাশের অধিকার দূরে থাক, বেঁচে থাকার অধিকারও মানতে চান না। তাই ভোটে জিতেই তাঁরা ‘শত্রুদের’ ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
ভোট পরবর্তী হিংসার ফলে বিরোধী দল তথা সাধারণ মানুষ বিপদে পড়ে তো বটেই, শাসক দলের পক্ষেও তাঁর পরিণাম শুভ হয় না। ২০১৮ সালে পঞ্চায়েতে একতরফা ভোট হয়েছিল। তৃণমূলের দাপুটে নেতাদের ভয়ে বিরোধীরা ট্যাঁ ফো করতে পারেনি। তারপর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে কী হয়েছিল সবাই জানে। ভোটের ফল দেখে তৃণমূলের অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা পর্যন্ত ভাবতে শুরু করেছিলেন, ২০২১-এ বিজেপিই আসছে।
এরকম উদারণ আরও আছে। আজ থেকে এক দশকেরও বেশি আগে রাজ্যে বিজয়ী দলের সেনাপতি বিরোধীদের কটাক্ষ করে বলেছিলেন, আমরা ২৩৫, ওরা ৩৫। তার পরের ভোটেই সেই ফল প্রায় উলটে গিয়েছিল। মমতা বন্দ্যোপাধায়ের দল এইসব উদাহরণ থেকে শিক্ষা নিলেই মঙ্গল।
রবিবার পুরভোটে যে সর্বত্র শান্তি বজায় ছিল একথা বলা যাবে না। মারপিট, ভাঙচুর, ছাপ্পা, প্রার্থীকে নিগ্রহ, সব অভিযোগই উঠেছে। ভোটের পরে যেন ওই হিংসার পুনরাবৃত্তি না হয়।