
প্রজাতন্ত্রে একনায়কতন্ত্র
অতি সম্প্রতি দু’টি বিতর্কে মোদী তথা কেন্দ্রীয় সরকারের মনোভাব স্পষ্ট হয়েছে। প্রথম বিতর্কের কেন্দ্রে আছে আইএএস ক্যাডার আইন সংশোধন। দ্বিতীয় বিতর্ক দিল্লিতে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর মূর্তি বসানো নিয়ে।
কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে ১৯৫৪ সালের আইএএস ক্যাডার আইন সংশোধন করে তিনটি বিষয় নিশ্চিত করতে চায়। প্রথমত, রাজ্য থেকে ডেপুটেশনে নির্দিষ্ট সংখ্যক অফিসার কেন্দ্রে পাঠাতেই হবে। দ্বিতীয়ত, রাজ্য যদি তা না পাঠায়, তাহলে কেন্দ্রীয় সরকার তাকে অফিসার পাঠাতে অনুরোধ করবে। তাও যদি রাজ্য কথা না শোনে, তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্ট অফিসারদের কেন্দ্রে ডেকে নেওয়া হবে। একে বলে স্ট্যান্ড রিলিভ করা। তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় সরকার যদি কোনও অফিসারকে নির্দিষ্ট পদে বসাতে চায়, তাহলে রাজ্যকে তা মেনে নিতে হবে।
অর্থাৎ মোদী সরকার রাজ্যগুলিকে বার্তা দিতে চায়, আইএএস নিয়োগের ব্যাপারে তারাই শেষ কথা।
গণতন্ত্রের মূল কথাই হল বহুত্ববাদ। গণতান্ত্রিক সরকারকে সবার কথা শুনতে হয়। ছোট-বড় সবার মতামত নিতে হয়। আইএএস আইনের সংশোধনী প্রস্তাবে খুব স্পষ্ট করেই বলা হয়েছে, অফিসার নিয়োগের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যগুলির কথা শুনবে না।
মনে হয়, মোদী কোনও ব্যাপারেই অন্যের কথা শুনতে রাজি নন। গত ২৩ জানুয়ারিতে তিনি দিল্লিতে নেতাজি মূর্তি উদ্বোধন করেছেন। তার আগে কারও সঙ্গে আলোচনা করেননি। অথচ গত বছরেই কেন্দ্রীয় সরকার নেতাজির ১২৫ তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কমিটি তৈরি করেছে। তার সদস্য সংখ্যা ৮৫। তাঁদের মধ্যে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা আছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আছেন, পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় আছেন, কয়েকজন ইতিহাসবিদ এবং বিশিষ্ট নাগরিকও আছেন। মোদী ঘোষণা করার আগে তাঁরা ঘুণাক্ষরেও নেতাজি মূর্তি বসানোর কথা জানতেন না। কাউকে যদি নাই জানাবেন, তাহলে কমিটি গড়ার কী দরকার ছিল?
মোদী নিজের জনপ্রিয়তা নিয়ে সচেতন। একথা ঠিক যে, এখনও দেশের বহু মানুষ মোদীকে পরিত্রাতা মনে করেন। তাঁদের সামনে যাতে নিজের ইমেজ অটুট থাকে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী কাউকে কৃতিত্বের ভাগ দিতে নারাজ। ওই জন্যই নেতাজি মূর্তি বসানোর কথা আগে কাউকে জানাননি।
প্রধানমন্ত্রী নেতাজি মূর্তি বসানোর সময়েও নাম না করে নেহরু-গান্ধী পরিবারকে কটাক্ষ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, অন্যেরা নেতাজির অবদানকে ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল। তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে যুগনায়কের স্মৃতিকে রক্ষা করছেন। এই মন্তব্যকে ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। নেতাজির জন্মদিনকে ঘিরে এই বিতর্ক অনভিপ্রেত ছিল।
নিজের মতামত অন্যের ওপরে চাপিয়ে দেওয়া, অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা, এসব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের কর্ণধারের মানায় না। মোদীর আরও সংযত হওয়া উচিত। না হলে তাঁর প্রশাসন দুর্বল হয়ে পড়বে।