শেষ আপডেট: 25th April 2023 17:03
বিশ্ব জুড়ে যুদ্ধের (Defense) সম্ভাবনা বাড়ছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থেকেই বিশ্বযুদ্ধ বেধে যেতে পারে। বর্তমানে সব দেশই (Country) যথাসম্ভব বেশি অস্ত্র (Weapons) কিনে নিজেদের প্রস্তুত রাখছে। এর অবশ্যম্ভাবী ফল, জনকল্যাণ খাতে ব্যয়বরাদ্দ কমে যাওয়া। তৃতীয় বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলির ক্ষেত্রে এর পরিণাম হচ্ছে খুব খারাপ। সামগ্রিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান নামছে। এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে ভারতও (India)।
সামরিক খাতে ব্যয়বরাদ্দের নিরিখে আমাদের দেশ বিশ্বে রয়েছে চার নম্বরে। প্রথমে আছে আমেরিকা। ওই দেশটি একপ্রকার আন্তর্জাতিক পুলিশের ভূমিকা পালন করে। তারা যদি মনে করে, কোনও দেশে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়েছে, সেখানে সেনাবাহিনী পাঠায়। অথবা সেদেশের কোনও বিদ্রোহী গোষ্ঠীকে মদত দিয়ে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টা করে। যুদ্ধের জন্য তারা অনেক সময় মিথ্যা অজুহাত খাড়া করে। ইরাকে সাদ্দাম হুসেনের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, তিনি গণবিধ্বংসী অস্ত্র মজুত করছেন। পরে জানা যায়, কথাটা সত্য নয়। যে দেশ নিয়মিত বিশ্বের নানা প্রান্তে সামরিক অভিযান চালায়, তাদের অস্ত্রের জন্য বিপুল খরচ করতেই হবে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট সোমবার জানিয়েছে, ২০২২ সালে অস্ত্রশস্ত্রের পিছনে আমেরিকা ব্যয় করেছে ৮৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার। ভারতীয় মুদ্রায় তার পরিমাণ প্রায় ৭২ লক্ষ কোটি টাকা।
আমেরিকার পরেই আছে চিন। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বেজিং বরাবরই আগ্রাসী ভূমিকা পালন করেছে। নেহরু তাদের বিশ্বাস করে ঠকেছিলেন। ১৯৬২ সালে তারা বিনা প্ররোচনায় ভারতের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এখনও চিনারা লাদাখের অনেকটা অংশ নিজেদের বলে দাবি করে।
তাছাড়া গোটা অরুণাচল প্রদেশকেই তারা মনে করে দক্ষিণ তিব্বতের অংশ। সেখানে ভারতীয় প্রশাসনের কোনও কর্তাব্যক্তি গেলে তাদের রাগ হয়। চিনা সৈনিকরা ভারত সীমান্তে নিয়মিত অশান্তি করে। প্রায়ই শোনা যায়, সীমান্ত বরাবর তারা রাস্তা বানাচ্ছে এবং প্রচুর সমরাস্ত্র এনে জড়ো করছে।
তাইওয়ানকেও চিন নিজের অংশ বলে মনে করে। চিনা যুদ্ধবিমান প্রায়ই তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করে। এইভাবে চিনারা তাইওয়ানকে উস্কানি দেয়। তাইওয়ানের সেনা যদি কখনও চিনা বিমানগুলিকে পালটা আক্রমণ করে, তাহলেই পিপলস লিবারেশন আর্মি তাদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়বে।
বস্তুত পাকিস্তান বা উত্তর কোরিয়ার মতো দু'-একটা দেশ বাদে সকলের সঙ্গেই চিনারা ঝগড়া বাঁধিয়ে রেখেছে। দক্ষিণ চিন সাগরের কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে ব্রুনেই, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ভিয়েতনামের মতো দেশের সঙ্গে তাদের বিরোধ আছে। জাপানের কয়েকটি দ্বীপকেও নিজেদের বলে চিনারা দাবি করে।
২০২২ সালে অস্ত্রের পিছনে চিন ব্যয় করেছে প্রায় ২৪ লক্ষ কোটি টাকা। রাশিয়া এক বছরের বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে যুদ্ধ চালাচ্ছে। স্বাভাবিক কারণেই তাদের অস্ত্রশস্ত্রের খরচ বেড়েছে বিপুল হারে। সামরিক খাতে ব্যয়ের নিরিখে তারা আছে তিন নম্বরে। ২০২২ সালে তারা ব্যয় করেছে প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা।
ভারত ২০২২ সালে প্রতিরক্ষার জন্য খরচ করেছে ৬ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি। আসলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হলে ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক, তাতে জড়িয়ে পড়তে হয়। ভারতের সীমান্তের ওপারেই রয়েছে চিন ও পাকিস্তানের মতো শত্রুভাবাপন্ন দু'টি দেশ। পাকিস্তান জানে ভারতের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ হলে পারবে না। তাই জেনারেল জিয়াউল হকের আমল থেকে তারা ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। কাশ্মীর সহ ভারতের নানা প্রান্তের জঙ্গি সংগঠনগুলিকে তারা নিয়মিত অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে সাহায্য করে। তার মোকাবিলার জন্যও ভারতকে প্রতি বছর বিপুল অর্থ ব্যয় করতে হয়।
বিশ্বের কোনও দেশই এখনও কোভিড অতিমহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ভারতও পারেনি। লকডাউনের সময় বহু দরিদ্র পরিবার দরিদ্রতর হয়ে গিয়েছে। ২০২২ সালে আন্তর্জাতিক ক্ষুধা সূচকে ১২৩টি দেশের মধ্যে ভারতের স্থান ছিল ১০৭ নম্বরে। দেশে ২৯ কোটি মানুষের দু'বেলা ঠিকমতো খাদ্য জোটে না। মোট জনসংখ্যার ১৬ শতাংশ অপুষ্টির শিকার। অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বন্ধ হলে ক্ষুধার্তদের সুবিধা হত। তাদের জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করা যেত।
অতীতে বিশ্ব জুড়ে অস্ত্র প্রতিযোগিতা নানা বিপদ ডেকে নিয়ে এসেছে। ইতিহাসের শিক্ষা হল, সব দেশই যদি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত থাকে, তাহলে যুদ্ধ বাধতে দেরি হয় না। রাষ্ট্রনায়কেরা যদি সেই শিক্ষা মনে রাখেন, একটু সংযত হন, তা হলেই মঙ্গল।