শেষ আপডেট: 1st March 2023 12:47
#
দোলের যে ক’টি উজ্জ্বল স্মৃতি আছে তার মধ্যে খুব ওপরের দিকে থাকবে শান্তিনিকেতনে দোল খেলার স্মৃতি। আমাদের বর্ধমানের বাসা থেকে শান্তিনিকেতন প্রায় ঢিল ছোড়া দূরত্বে। গাড়িতে সময় লাগে সাকুল্যে এক ঘণ্টা। তবুও এই অর্ধেক জীবন অতিক্রান্ত হলেও শান্তিনিকেতনে দোল খেলতে গিয়েছি মাত্র একবার। সে যাওয়াও আমাদের কবিবন্ধু আর সপ্তর্ষি প্রকাশনের দুই কর্ণধার সৌরভ আর স্বাতীর উৎসাহে। সেবার আমরা ছিলাম শান্তিনিকেতন থেকে একটু দূরে গল্পকার ও ঔপন্যাসিক অসীম চট্টরাজের ব্যবস্থাপনায়। দিব্যি কেটেছিল দু’দিন আমাদের, মানে আমি, সোমা, তিন্নি, সৌরভ, স্বাতী আর ওদের পরীর মতো ফুটফুটে কন্যা মামাইয়ের। তবে সেই দোলের শ্রেষ্ঠ আকর্ষণ ছিল সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় আর স্বাতী গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে দোল খেলার অভিজ্ঞতা। শান্তিনিকেতনে একটা গাছের নীচে বসে ছিলেন সুনীলদা আর যার ইচ্ছে এসে ওঁর মাথায় ঢেলে দিচ্ছিল আবির, রাঙিয়ে দিচ্ছিল গাল। সেই প্রথম এবং শেষবার আমাদের সুনীলদার সঙ্গে দোল খেলা। তো, এইবার সোমা হঠাৎ বলল, “স্বাতীদিকে বলো না, আর একবার আমরা সবাই মিলে শান্তিনিকেতনে যাই”। স্বাতীদিও বেশ কিছুদিন ধরে আমাকে বলছিলেন যে, “একবার শান্তিনিকেতনে তোমরা এসো”। ক’দিন আগে তাই স্বাতীদিকে বললাম যে, “চলুন এবার দোলের সময়ে শান্তিনিকেতনে যাই”। স্বাতীদি রাজি হলেন না। আমি একটু অবাকই হলাম। যে স্বাতীদি ক’দিন আগেই বলছিলেন তোমরা শান্তিনিকেতনে এসো, তিনিই এখন রাজি হচ্ছেন না! স্বাতীদি বোধহয় বুঝতে পেরেছিলেন আমার বিস্ময়। তাই থেমেথেমে বললেন, “আসলে সুনীল তো থাকে না, তাই এখন আর দোলের সময় শান্তিনিকেতন যেতে ভালো লাগে না। দোলের পরে একদিন যাই চলো”। মাটি থেকে অনেক উঁচুতে, দশতলায়, পারিজাতে একটি দেবীমূর্তির আননে বিষাদের ছায়া দেখে সেদিন আমার মনে হয়েছিল যে, দোলের সময় স্বাতীদির মনে আজ আর কোনও রঙ থাকে না— মনে হয়েছিল যে, ওই বর্ণহীনতাই একটা রঙ। ওঁর রঙের সঙ্গে রঙ মেশাতে হলে নিজের অন্তরকেও একটু বেরঙিন করে নিতে হবে।#
#
#