Latest News

Amit Shah : হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা

মোদী সরকারের দু’নম্বর ব্যক্তি অমিত শাহ (Amit Shah) প্রায়ই হিন্দির গুণগান করেন। গত বছর নভেম্বরেই তিনি বলেছিলেন, মাতৃভাষা গুজরাতির থেকে হিন্দি ভাষা তাঁর বেশি ভাল লাগে। কোনটা কার ভাল লাগবে না লাগবে, তা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। অনেকে বাঙালিও আছেন যাঁরা মাতৃভাষার চেয়ে ইংরেজিকে বেশি পছন্দ করেন। তাতে আপত্তির কিছু নেই। সমস্যা হয় তখনই যখন কেউ নিজের ভাল লাগাটা অন্যের ওপরে চাপিয়ে দিতে চায়। অমিত শাহ হিন্দি নিয়ে সেই চেষ্টাই করছেন।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের (Amit Shah) আওতায় আছে ডিপার্টমেন্ট অব অফিসিয়াল ল্যাংগুয়েজ। এপ্রিলের শুরুতে ওই দফতরের সংসদীয় কমিটির বৈঠক হয়েছিল। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষ পরস্পরের মধ্যে ইংরেজিতে কথা বলেন কেন? তাঁদের হিন্দিতে কথা বলা উচিত।

প্রাথমিকভাবে মনে হয়, কথাটা ঠিক। সত্যিই তো, ইংরেজি বিদেশি ভাষা। আমরা ভারতীয়রা নিজেদের মধ্যে কথা বলার জন্য বিদেশি ভাষার সাহায্য নেব কেন?
অমিত শাহ (Amit Shah) বলেছেন, ক্লাস নাইন পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের হিন্দি পড়াতে হবে। তাহলে তাদের হিন্দি নিয়ে অন্তত প্রাথমিক জ্ঞানটুকু থাকবে।

একইসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী (Amit Shah) জানান, বর্তমানে সংসদের ৭০ শতাংশ কাজকর্ম হচ্ছে হিন্দিতে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে হিন্দি শেখানোর জন্য ২২ হাজার শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। ওই অঞ্চলের আটটি রাজ্য দশম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি বাধ্যতামূলক করবে। সেখানকার ন’টি জনজাতি দেবনাগরী হরফ গ্রহণ করতে চলেছে। অর্থাৎ তারা নিজেদের ভাষা লিখবে দেবনাগরী হরফে।

কেন্দ্রে বিজেপি সরকার আসার পর থেকেই ঘটা করে হিন্দি দিবস পালন করা শুরু হয়েছে। ১৯৪৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর গণ পরিষদ সিদ্ধান্ত নেয়, ভারতের সরকারি ভাষা হবে হিন্দি। তাই ওই দিনটি হিন্দি দিবস হিসাবে পালিত হয়। ২০১৯ সালের হিন্দি দিবসে অমিত শাহ বলেছিলেন, ‘ভারতে নানা ভাষা চালু আছে। প্রতিটি ভাষারই রয়েছে নিজস্ব গুরুত্ব। কিন্তু এমন একটি ভাষা চাই, যা বিদেশে ভারতের পরিচয় বহন করবে। যে ভাষা সারা দেশকে একই সূত্রে বাঁধবে। হিন্দি ভাষায় দেশে সবচেয়ে বেশি লোক কথা বলেন। হিন্দিই আমাদের যোগাযোগের ভাষা হতে পারে।’

অমিত শাহ যে কথা বলেননি, তা হল, হিন্দিকে সংবিধানে রাষ্ট্রভাষা বলা হয়নি। তাকে বলা হয়েছে সরকারি ভাষা। সংবিধানে মোট ২২টি তফসিলভুক্ত ভাষা আছে। এছাড়াও এই বিশাল দেশের নানা প্রান্তে রয়েছে অসংখ্য উপভাষা। কোটি কোটি মানুষ সেই সব ভাষা ও উপভাষায় কথা বলেন। তাঁদের সবাইকে হিন্দি শিখতে বাধ্য করা যাবে কি?

ইতিমধ্যে দেশের নানা প্রান্ত থেকে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে অসন্তোষ দেখা গিয়েছে। অসমে অসম সাহিত্য সভা নামে এক প্রভাবশালী সংগঠন বলেছে, তারা দশম শ্রেণি পর্যন্ত হিন্দি বাধ্যতামূলক করতে দেবে না। রাজ্যের বিজেপি মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, কেন্দ্র থেকে এমন কোনও নির্দেশ তাঁর কাছে আসেনি। অর্থাৎ উত্তর-পূর্বে অমিত শাহের নিজের দলের লোকজনই খোলাখুলি হিন্দি চালু করার কথা বলতে পারছেন না।

অমিত শাহ প্রায়ই হিন্দি নিয়ে নানা মন্তব্য করেন। মনে হয় তিনি দেখতে চান, তাতে কে কী প্রতিক্রিয়া জানায়। তিনি টানা চেষ্টা করে যাচ্ছেন যাতে সারা দেশে হিন্দিকে চাপিয়ে দেওয়া যায়।

কেন তিনি এই চেষ্টা করছেন?
এটা আসলে সঙ্ঘ পরিবারের অ্যাজেন্ডা। তাদের নীতিই হল ‘হিন্দি হিন্দু হিন্দুস্তান’। দেশে হিন্দুদের প্রাধান্য থাকবে। ভারত হবে হিন্দুরাষ্ট্র এবং সেখানে হিন্দিই হবে প্রধান ভাষা।

রাজনৈতিকভাবে বিজেপি তাদের প্রধান ঘাঁটি উত্তর-পশ্চিম ভারত ছাড়িয়ে অন্যত্র বিস্তৃত হয়েছে। দক্ষিণের কর্নাটকে এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কয়েকটি রাজ্যে তাদের সরকার আছে। রাজনীতির পাশাপাশি তারা নিজেদের সংস্কৃতিও দেশ জুড়ে ছড়িয়ে দিতে চায়। সেই সংস্কৃতির মাধ্যম হল হিন্দি ভাষা।

সঙ্ঘ পরিবারের একনিষ্ঠ সৈনিক হিসাবে অমিত শাহ তাই ক্রমাগত হিন্দির হয়ে ওকালতি করে চলেছেন। ভারতের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ একটি দেশে জোর করে কিছু চাপিয়ে দেওয়ার ফল হতে পারে ভয়াবহ। অমিত শাহরা অবশ্য সেকথা মানেন না।

You might also like