শেষ আপডেট: 19th April 2024 16:27
দ্য ওয়াল ব্যুরো: রাস্তায় বেরিয়ে যদি দেখেন ঠিক হলিউড সিনেমার মতো অর্ধমৃত কিছু মানুষ অদ্ভুত আচরণ করতে করতে দাঁতমুখ খিঁচিয়ে তেড়ে আসছে তাহলে কেমন হবে? এমন ঘটনাই কিন্তু ঘটে গেছে আমেরিকার নানা প্রান্তে, এমনকী ব্রিটেনেও। কোনও সিনেমার শ্যুটিং নয়, বাস্তবেই কিছু মানুষকে এমন অদ্ভুত আচরণ করতে দেখা গেছে রাস্তাঘাটে। তাঁদের অনেকেরই ত্বকে মারাত্মক ক্ষত, পচে যেতে শুরু করেছে চামড়া।
‘জম্বি ড্রাগ’ ঘুম উড়িয়েছে চিকিৎসকদের। এই ওষুধের এক ডোজেই নাকি পশুর মতো আচরণ করছে মানুষজন। নেশা এমন মারাত্মক যে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণই থাকছে না। বিকৃত হয়ে যাচ্ছে চোখ-মুখ, পচতে শুরু করেছে গায়ের চামড়া। অনেককেই দেখা গেছে রাস্তাঘাটে ধুঁকতে ধুঁকতে পড়ে গিয়ে অদ্ভুত আচরণ করছেন। অনেক কমবয়সির মৃত্যুর খবরও পাওয়া গেছে। তাদের পরীক্ষা করে রক্তে ওই ওষুধের উপাদান পাওয়া গেছে।
Brooo, what’s happening in the USA????????♂️????? pic.twitter.com/hUJCjZ5Xlx
— Oyindamola???? (@dammiedammie35) December 6, 2022
এই ওষুধের নাম জাইলাজিন ( xylazine)। এই ওষুধ পশুদের চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। গরু ও ঘোড়ার জন্য ট্রাঙ্কুইলাইজার হিসেবে প্রয়োগ করা হয় জাইলাজিন। এবার সেই ওষুধই কিছু অসাধু মাদক ব্যবসায়ী মিশিয়ে দিচ্ছেন বেআইনি মাদকে। মাদকের সঙ্গে এমন ডোজে মেশানো হচ্ছে জাইলাজিন যে সেটা মারাত্মক ড্রাগে পরিণত হচ্ছে। সম্প্রতি হেরোইনের মতো মাদকেও মেশানো হয়েছে এটি। তাই দিয়ে নেশা করতে গিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়তে হচ্ছে অনেককে। বিশেষ করে কমবয়সিদের মধ্যে এই ড্রাগের নেশা ছড়িয়ে পড়েছে। আর নেশা এমনই সাঙ্ঘাতিক যে তা চিরঘুমের দেশে নিয়ে যাচ্ছে মাদক সেবনকারীকে। শুধু তাই নয় ভয়ঙ্কর সব রোগের উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, আচরণ ঠিক পশুর মতো হয়ে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ড্রাগের সঙ্গে ফেন্টানাইল মিশিয়ে আরও মারাত্মক ড্রাগও তৈরি হচ্ছে। এই ড্রাগের ডোজ সামান্য বেশি হলেই নির্ঘাত মৃত্যু। এমনকী অল্প ডোজেও শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে যাচ্ছে, প্রচণ্ড ঝিমুনি ও ক্লান্তি গ্রাস করছে। গোটা শরীরের চামড়া পচতে শুরু করছে ডোজ নেওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই। সম্প্রতি এই জম্বি ড্রাগের নেশা করতে গিয়ে কয়েকজন ব্রিটিশ যুবক-যুবতীর মৃত্যু হয়েছে। তাদের পরীক্ষা করে দেখা গেছে, ড্রাগ নেওয়ার কিছু সময় পরেই তারা স্নায়ুর উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। ত্বকে বড় বড় ক্ষত তৈরি হয় নিজে থেকেই। শুকিয়ে যেতে শুরু করে চামড়া। সেখানে পচন ধরতে শুরু করে।
২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে প্রথম এক জম্বি ড্রাগের কথা জানা যায়। নাম ‘ফ্লাক্কা’। ফ্লোরিডায় বহু মাদকাসক্তের জম্বির মতো অস্বাভাবিক আচরণের বেশ কিছু ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। এই ড্রাগের প্রভাবে হঠাৎ উত্তেজনা, ঝিমুনি, ক্রোধ, আক্রমণের চেষ্টা, অনিয়ন্ত্রিত অঙ্গ সঞ্চালনের মতো উপসর্গ দেখা গিয়েছিল।
'জম্বি ড্রাগ'-এর সবচেয়ে বড় সমস্যা হল, এটি ওভারডোজ করলে নেশার কবল থেকে বেরিয়ে আসা খুবই কঠিন। মৃত্যু অনিবার্য। নালক্সোন, বা নারকান ওভারডোজ রিভার্সাল ট্রিটমেন্টে কোনও কাজই হয় না। জম্বি ড্রাগ ধরপাকড় করেও বন্ধ করা যাচ্ছে না। এই ড্রাগের বড় চক্র গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রশাসন। জাইলাজিন বা ওই জাতীয় ওষুধ খেতে নিষেধ করা হচ্ছে সকলকে।