শেষ আপডেট: 10th December 2024 20:06
দ্য ওয়াল ব্যুরো: অনেকেই বলেন, 'এককালে যখন আমি একা ছিলাম, অনেক মজা করতাম, আনন্দে থাকতাম। কিন্তু এখন বিয়ে হয়ে গেছে আর সন্তান এসেছে, পরিস্থিতি বদলে গেছে।'
আসলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয় বা পরিবার বাড়ে, তখন নিজের যত্ন নেওয়া, নিজেকে গুরুত্ব দেওয়া ধীরে ধীরে কমতে থাকে। অন্যের চাহিদা এবং খুশি সবার আগে জায়গা করে নেয়। যিনি বিয়ের আগে বছরে ৫ বার ঘুরতে যেতেন, তিনি হয়তো সংসারের জাঁতাকলে পড়ে বছরে একবারও ঘুরতে যেতে পারেন না।
হাজার ইচ্ছে থাকলেও বাচ্চাদের পড়াশোনা, তাঁদের স্কুল, পরীক্ষা, অন্যান্য বিভিন্ন কারিকুলাম, এসবের জন্য নিজের মতো সময় কাটানো, ঘুরতে যাওয়া হয়ে ওঠে না। একজন পুরুষের থেকেও এই সমস্যা মহিলাদের বেশি হয়। নিজের বাড়ির সঙ্গেই শ্বশুর বাড়ির দায়িত্ব, তাঁদের দেখভাল করা, মি টাইম বলে যে কিছু হয়, তা হারিয়েই যায় জীবন থেকে।
এছাড়াও সমাজও তো নানা কথা বলতে থাকে, কেউ যদি বিয়ের পর একা ঘুরতে যায়। কিন্তু একটু সময় নিয়ে ভাবুন তো আপনি কি শুধুমাত্র সমাজের বা পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধের কারণে নিজেকে আটকে রেখেছেন? যদি তাই হয়ে থাকে, তাহলে সময় এসেছে পরিবর্তনের।
নিজের ভালোবাসা বা শখ, বিশেষ করে ঘুরতে যাওয়া বন্ধ করা কোনওভাবেই উচিত নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন কিছু ত্যাগ করা জীবন থেকে উচিত নয় যা মানসিক সুস্থতার উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। তাই সোলো ট্রাভেলে জোর দিচ্ছেন তাঁরা।
কেন সোলো ট্রাভেল গুরুত্বপূর্ণ?
আমাদের সমাজে যখন কোনও মেয়ে তাঁর পরিবারের কাছে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার অনুমতি চান, তখন সেই নিয়ে বিস্তর ঝামেলা হয়। অনেক পরিবারই বলে থাকে, বিয়ে করে ঘুরতে যাবে। আজকাল অনেকেই এই নিয়ম ভেঙে, ছক ভেঙে একা ঘুরতে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু কটুক্তি কম শুনতে হয় না।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের ত্যাগ যেকোনও সংসারে বা সম্পর্কে অনেকটা বেশি থাকে। সন্তান, শ্বশুর বাড়ি, নিজের বাবা-মা ও স্বামীর কথা ভেবে অনেকেই অনেক কিছু ছেড়ে দেন। অনেক সময় তাদের শখ বা আকাঙ্ক্ষা ছাড়তে বাধ্য হন। বিয়ের পরে ঘুরতে যাওয়ার কথা বাবা-মা বললেও তা আর হয়ে ওঠে না। নিজেকে সময় দেওয়া হয়ে ওঠে না। তাই যে পরিস্থিতিই আসুক একা ঘুরতে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তাঁরা।
মুম্বইয়ের মনোবিজ্ঞানী আবসী সাম এনিয়ে বলেন, সোলো ট্রাভেল মানুষকে তাদের পছন্দ, অপছন্দ, লক্ষ্য এবং জীবনের দৃষ্টিভঙ্গি জানার সুযোগ দেয়। ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
এবিষয়ে আরেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, সোলো ট্রাভেলের ফলে সম্পর্কে স্বতন্ত্রতা বজায় থাকে। সুস্থ সম্পর্ক গড়তে সাহায্য করে।
সোলো ট্রাভেলে মানসিক স্বাস্থ্য ভাল থাকে
সোলো ট্রাভেল মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে। প্রতিদিনের একঘেয়েমি কাটায়, মানসিক চাপ কমায় ও নতুন আইডিয়া, জীবনকে নতুনভাবে দেখতে সাহায্য করে।
আবসী সাম এনিয়ে বলেন, এদেশে মহিলারা অনেক বেশি উন্নত হবে, যদি সোলো ট্রাভেল শুরু করেন। নিজেরা নিজেদের ওপর নির্ভর করতে শুরু করেন।
সোলো ট্রাভেল আত্মবিশ্বাস বাড়ায় ও স্বাধীনচেতা মন গড়ে তোলে
সোলো ট্রাভেল যেকোনও সম্পর্কে বিশ্বাস বাড়ায়। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস বাড়াতেও সাহায্য করে। যেকোনও সম্পর্কে যে কেউ সোলো ট্রাভেল করলে, সম্পর্কের ভিত মজবুত হয়।
কোনও সম্পর্কে কোনও একজন যদি এমন সোলো ট্রাভেলে অভ্যস্ত না হন, রাজি না হন, তাহলে তাঁকে বসে পুরো বিষয়টি বোঝানোর পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। ট্রিপ কেন ও কোন উদ্দেশে করা হচ্ছে, তা বললে বিষয়টি অনেকটা উল্টোদিকের মানুষের কাছে পরিষ্কার হবে।
সন্তানদের জন্য সোলো ট্রাভেল
বাচ্চারা মায়ের ওপর নির্ভরশীল হয়। কিন্তু সেটা একটা বয়স পর্যন্ত ঠিক আছে। একটু বড় হলে সন্তানকে তার নিদের মতো বাড়তে দিতে হয়। কেউ যদি সোলো ট্রাভেল করতে শুরু করেন তাহলে তাঁদের সন্তানরা অনেকবেশি আত্মনির্ভর হয়। বিশেষজ্ঞদের কথায়, যেকোনও মায়ের সন্তানদের এই শিক্ষাটা দেওয়া জরুরি।
কী কী মাথায় রাখতে হবে সোলো ট্রাভেল করলে?
১. আগে থেকেই পরিকল্পনা করতে হবে। একা ঘুরতে গেলে সমান তালে পরিবারকেও সময় দিতে হবে।
২. পকেটের দিকে দেখতে হবে। বাজেট হল গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘুরতে গেলে সেদিকে নজর দেওয়া আগে দরকার। প্রয়োজনে টাকা জমিয়ে আগে থেকে সব তৈরি করে রাখতে হবে।
৩. একা ঘুরতে গেলে পরিবারকে সব জানিয়ে রাখুন। কোথায় যাচ্ছেন, কোথায় থাকছেন, সেই সব তথ্য দিয়ে রাখুন। কোনও সমস্যা পড়লে যেন পরিবার যোগাযোগ করতে পারে।
৪. পরিবারের লোকজন যদি না বোঝে, খোলাখুলি কথা বলুন। আগে থেকে কথা বলে পরিস্থিতি বুঝে ঘুরতে বেরিয়ে পড়ুন।
মি টাইম জরুরি। নিজের জন্য নিজে সময় খুঁজে নিন। ভাল থাকুন।